ডেস্ক রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে বৃহৎ মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে অ্যাপলের ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। খবর সিএনবিসি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন। এর জবাবে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত ৫ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। এবার নতুন করে আরো কিছু পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
মিরাবাউদ সিকিউরিটিজের গ্লোবাল থিমেটিক গ্রুপের কো-হেড নিল ক্যাম্পলিং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে বৃহৎ মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে অ্যাপল সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত হিসাব বছরে অ্যাপলের মোট রাজস্বের ২০ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। একই বছর প্রতিষ্ঠানটি চীন থেকে ৪ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় করেছে। ২০১৭ সালে চীনের বাজারে ৪ কোটি ১০ লাখ ইউনিট আইফোন সরবরাহ করেছে অ্যাপল। একই বছরে দেশটির স্মার্টফোন বাজারে ডিভাইস সরবরাহে পঞ্চম স্থানে ছিল প্রতিষ্ঠানটি।
চীনে অ্যাপলের প্রায় ৪০টি স্টোর রয়েছে। দেশটিতে অ্যাপ স্টোর ও অ্যাপল মিউজিক সেবাও চালু রয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে স্মার্টফোন বিক্রি কমায় অ্যাপল তার অন্যান্য সেবায় জোর দিচ্ছে। ফলে অ্যাপলের ডিভাইস বিক্রি কমলেও সামগ্রিক ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা যায়নি।
এশিয়ার চুক্তিভিত্তিক পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অ্যাপল ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানি ফক্সকন চীনের কারখানায় অ্যাপলের জনপ্রিয় ডিভাইস আইফোন সংযোজন করে।
মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে চীনে বেশি সফলতা পেয়েছে অ্যাপল। তবে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইফোন সংযোজনে শুল্কারোপ করবেন না বলে টিম কুককে আশ্বস্ত করেছেন।
২০১০ সাল থেকে চীনে গুগলের সার্চ ইঞ্জিন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আরো কিছু সেবা সীমিত আকারে কিংবা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে চীন থেকে সার্চ জায়ান্টটির সামান্যই রাজস্ব আসে। গুগলের সার্চ ইঞ্জিন ছাড়াও দেশটিতে ফেসবুক ও নেটফ্লিক্স সেবাও বন্ধ রয়েছে। সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালু রয়েছে অ্যামাজনের।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে মার্কিন কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি সংকটে পড়তে পারে চীনা কোম্পানিগুলোও। চীনের বেশির ভাগ প্রযুক্তি কোম্পানি হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের জন্য মার্কিন কোম্পানিগুলোর ওপর নির্ভরশীল। চীনা কোম্পানিগুলোর কাছে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার রফতানির মাধ্যমে বিপুল অংকের মুনাফা করছে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। কোয়ালকম ও ইন্টেলের চিপের ওপর নির্ভরশীল হুয়াওয়ে টেকনোলজিস। প্রতিষ্ঠানটির টেলিকম নেটওয়ার্কিং সরঞ্জাম ও ডিভাইস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সিনেটে প্রতিরক্ষা বিল পাস হয়েছে। ফলে জেডটিইসহ অন্য চীনা কোম্পানির পণ্য বিক্রি বন্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছে। চীনের আরেক প্রযুক্তি কোম্পানি শাওমি যুক্তরাষ্ট্রে বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে তা ভেস্তে যেতে পারে। এ কারণে শাওমি চীন ও ভারতের বাজারে দখল বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে অধিকাংশ চীনা কোম্পানি স্থানীয় প্রযুক্তির উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে। এক্ষেত্রে চীন সরকারও সহায়তা করছে। স্থানীয় সেমিকন্ডাক্টর খাতের উন্নয়নে চীন সরকার সহায়তা করছে। হুয়াওয়ে এরই মধ্যে নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ফাইভজি চিপ তৈরি শুরু করেছে। সূত্র: বণিক বার্তা