মাছুম বিল্লাহ: বাংলাদেশের রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সহযোগিতার মাধ্যমে পারমাণবিক কম্যুনিটির উপর ভারতের ভূকৌশলগত প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাড়িয়ে দেবে উল্লেখ করে ইউরোশিয়া রিভিউয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া এই পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণ করবে আর ভারত তাদের কোম্পানিগুলোর কর্মীবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে লাভবান হবে।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে নির্মাণ শুরু হওয়া রূপপুর কেন্দ্র বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। রাশিয়ার রোজাটম এই কেন্দ্র নির্মাণ করছে। ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী তৃতীয় কোন দেশে এটাই প্রথম পারমাণবিক চুল্লি, যেখানে ভারতের কোম্পানিগুলো কর্মীবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে। চুল্লি নির্মাণ করবে রাশিয়া।
রূপপুরে দুটি ইউনিট রয়েছে, প্রতিটি ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। পুরো প্রকল্পের দায়িত্ব রোজাটমের এবং এই স্থাপনার যে কোন জটিলতার জন্য তারাই দায়ি থাকবে। এই কেন্দ্র নির্মাণে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। যার ৯০ শতাংশ দেবে রুশ সরকার, এর জন্য বাংলাদেশকে ১.৭৫% সুদ দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকার বাকি ১০% ব্যয় করবে। স্থাপনাটি সক্রিয় হওয়ার পর ২৮ বছরে রাশিয়ার ঋণ পরিশোধ করা হবে। প্রয়োজন হলে গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে আরো ১০ বছর পাওয়া যাবে।
অনেক কারণেই ভারতের জন্য এই প্রকল্প তাৎপর্যপূণ, এর মধ্যদিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দক্ষতা প্রকাশ পাবে। নির্মাণের প্রতিটি পর্যায়ে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকায় তারা রাশিয়ার প্রকৌশলী ও বাংলাদেশী অপারেটরদের মধ্যে ইন্টারফেস হিসেবে কাজ করতে পারবে। তথ্য বোঝা, রূপান্তর ও স্থানান্তরের জন্য এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এর অভাবে ফিনল্যান্ডের অলকিওলুওতো-৩ চুল্লিকে বিপুল অতিরিক্ত খরচের সম্মুখিন হতে হয়েছিলো।
ইউরেশিয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারমাণবিক স্থাপনা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত নিরাপত্তা, চুরি বা পাচার প্রতিরোধ, ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার প্রতিষ্ঠা, সাইবার নিরাপত্তা, ইত্যাদি বিষয়ে এক সেট নতুন স্ট্যান্ডার্ড, গাইলাইন ও লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক উন্নয়নও সম্ভব হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত যে জ্ঞান লাভ করবে তাতে ভবিষ্যতে দেশটির এ ধরনের প্রকল্পে নলেজ পার্টনার হিসেবে কাজ করার সুযোগ অনেক বেড়ে যাবে।
এখানে জ্ঞান ও মানবীয় দিকটি বিশেষেভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ রাশিয়ার বেশ কয়েক প্রজন্মের চুল্লি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা ভারতের রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের ভারত প্রশিক্ষণ দেবে। এতে বাংলাদেশের উদীয়মান পারমাণবিক বিশেষজ্ঞরা অনিবার্যভাবে ভারতের নিউক্লিয়ার ইকোসিস্টেমের উপর নির্ভরশীল এবং ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়বে। এটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে এটাই রাশিয়ার প্রথম তৃতীয় প্রজন্মের চুল্লি, যা নিয়ে ভারত কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।
পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে রাশিয়া ও ভারত একটি কৌশলগত ভিশন চুক্তি সই করে, যার আওতায় তৃতীয় কোন দেশে রাশিয়ার ডিজাইন করা পারমাণবিক চুক্তি নির্মাণের জন্য ভারতীয় শিল্পের কাছ থেকে উপাদান, যন্ত্রাপাতি ও সেবা সংগ্রহের ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে রোজাটম ২০১৬ সালে মুম্বাইয়ে একটি আঞ্চলিক কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করে।
ভারতের উচিত হবে তৃতীয় দেশে চুল্লি নির্মাণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নলেজ পার্টনারে পরিণত হওয়ার পথে একটি পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশে প্রকল্পটিকে বিবেচনা করা। অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সংযোগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রকল্প স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপুলভাবে ফলপ্রসূ।