খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল: মাছের ঘের ও মুরগীর ফার্মে শেয়ার রাখার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশলে গ্রামের সহজ সরল ১৬টি দিনমজুর পরিবার প্রধানকে দিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করিয়ে পুরো টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপন করেছে এক প্রতারক।
বর্তমানে এনজিও’র কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য ওইসব দিনমজুর পরিবারগুলোকে চাঁপ অব্যাহত রাখা হয়েছে। দিনমজুর পরিবারগুলোর যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থায় সেখানে এনজিও’র কিস্তির টাকা যোগার করতে না পেরে এখন দিশেহারা হয়ে অসহায় পরিবারের প্রধানরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ঘটনাটি জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা গ্রামের।
ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খলিলুর রহমানের শ্যালক পাংশা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মোতাহার হোসেন মৃধার পুত্র ইসমাইল হোসেন বাবলু (৪০) দীর্ঘদিন থেকে মাছের ঘের ও মুরগীর ফার্মের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলো। প্রায় একবছর পূর্বে বাবলু তার ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য গ্রামের নিরিহ দিনমজুর পরিবার প্রধানদের তার ব্যবসা বৃদ্ধি করে শেয়ার রাখার কথা বলে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ উত্তোলন করে দেয়ার প্রলোভন দেখায়।
পাংশা গ্রামের হাবিবুর রহমান তালুকদারের পুত্র দিনমজুর রুবেল তালুকদার জানান, বাবলু তার মা রাজিয়া বেগম, বোন শিউলী ও লাকি বেগমের মধ্যস্থতায় তাকে এনজিও আশা ও জাগরন অফিসে নিয়ে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করিয়ে পুরো টাকা ব্যবসায়ীক কাজে ব্যয় করার কথা বলে হাতিয়ে নেয়।
একইভাবে কৌশলে মাত্র একমাসের মধ্যে গ্রামের নুর ইসলাম তালুকদারের নামে কারসা এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা, বাকপ্রতিবন্ধী আরিফুল ইসলামের স্ত্রী সালমা বেগমকে দিয়ে দুটি এনজিও থেকে ৪৫ হাজার টাকা, ইব্রাহীম খলিলের নামে দুটি এনজিও থেকে ৬৫ হাজার, একাধিক এনজিও থেকে পলাশ তালুকদারের নামে ১ লাখ ২৫ হাজার, কাওসার মৃধার নামে ১ লাখ ৬৫ হাজার, আলমগীর মৃধার নামে ৬০ হাজার, ইসমাইল মৃধার নামে ৬০ হাজার, আলতাফ তালুকদারের নামে ৪০ হাজার, ইসমাইল তালুকদারের নামে ৬০ হাজার, ফজলুল হকের নামে ৫০ হাজার, কাঞ্চন সরদারের নামে ৬০ হাজার টাকাসহ ১৬ জন দিনমজুর পরিবার প্রধানকে দিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করিয়ে পুরো টাকা হাতিয়ে নেয়।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ১৬টি দিনমজুর পরিবার প্রধানের নামে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টাকা উত্তোলনের পর পুরো টাকা হাতিয়ে নিয়ে অতিগোপনে একমাসের মধ্যে পূর্বের ব্যবসা গুটিয়ে স্ত্রী ও সন্তানসহ গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপন করে ইসমাইল হোসেন বাবলু।
এ ঘটনার পর তারা (ভূক্তভোগীরা) বাবলুর খোঁজে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে গেলে তারা বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি বাবলুর বোনজামাতা স্থানীয় ইউপি সদস্য খলিলুর রহমানকে জানাতে গেলে তিনি এনিয়ে বাড়াবাড়ি করা হলে ভূক্তভোগী দিনমজুরদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
একদিকে প্রতারক বাবলুর প্রভাবশালী স্বজনদের হুমকি অন্যদিকে এনজিও’র কিস্তির টাকার জন্য দিনমজুর পরিবারগুলোকে চাঁপ অব্যাহত রাখা হয়েছে। দিনমজুর পরিবারগুলোর যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থায় সেখানে এনজিও’র কিস্তির টাকা যোগার করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে অসহায় পরিবারের প্রধানরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ব্যাপারে ভূক্তভোগীরা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আত্মগোপন করা ইসমাইল হোসেন বাবলুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতারক বাবলুর বোনজামাতা ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, আমাকে জানিয়ে কেউ টাকা দেয়নি, বিধায় এ ব্যাপারে এখন আমাকে জানিয়ে কোন লাভ হবেনা বলে আমি জানিয়ে দিয়েছি।
আপনার মতামত লিখুন :