ডেস্ক রিপোর্ট : ১৮৬১ থেকে ১৮৬৪ সাল মার্কিন গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারায় লাখো তরুণ-যুবক। সন্তানহারা মায়েরা কেঁদে ফিরে টেক্সাসের পথে পথে। মায়ের বুক খালি করা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে মায়েরাই রাজপথে নামেন। ১৮৭০ সালে জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নামের এক মা ঘোষণা করেন মা দিবসের ঘোষণাপত্র।
সে ঘটনার ৩৮ বছর পর মার্কিন নারী আনা জার্ভিস মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে পালন করলেন মা দিবস হিসেবে। এক সময় বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পায় দিবসটি।
তবে যতই দিন গড়িয়েছে মা দিবস যেন ততটাই বাণিজ্যিক হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে একসময় ক্ষুব্ধ হয়ে মা দিবসকে ‘হলমার্ক ডে’ বলতেও দ্বিধা করেননি আনা জার্ভিস। মাকে কার্ড পাঠিয়ে ভালবাসা প্রকাশ পায় না সত্যি, উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন মাতৃরূপী এই নারী। তাই উপহারের পরিবর্তে মাকে প্রতিটি ক্ষণ মনে রাখার কথা বলেছিলেন তিনি।
সংস্কৃতির বিশ্বায়নের কারণে পৃথিবীর বহু দেশেই এখন মা দিবস উদযাপিত হয়ে থাকে। দিবসটির আন্তর্জাতিক রূপ থাকলেও একইদিনে সবগুলো দেশে সেটি উদযাপিত হয় না। উদযাপনের কারণও কিন্তু এক নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের নিজ নিজ দেশ ও সংস্কৃতির ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানাতে কিংবা দেশের নারী সমাজের বিশেষ কোনো অর্জন যেমন যুদ্ধে অংশগ্রহণ ইত্যাদি অথবা কোনো নারী বা নারী সমাজের বিশেষ অর্জনকে সামনে রেখে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা প্রদানের মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপিত হয়।
ক্যাথলিক দেশগুলোতে ‘ভার্জিন মেরি ডে’তে কিংবা নবী হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মেয়ে ফাতিমার জন্মবার্ষিকীর দিন ইরানে মা দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে। অনেক দেশ আবার কোনো ধরনের অনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই কেবল বর্হিবিশ্বের সাথে তাল মেলাতে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়ে থাকে। যেমন, আমরা বাংলাদেশিরাও।
প্রাথমিকভাবে দুইটি বিশেষ দিনে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ মা দিবস উদযাপন করে থাকে। এর একটি হচ্ছে ‘মাদারিং সানডে’ এর ব্রিটিশ প্রথা অনুযায়ী ‘লেন্ট’ (খ্রিস্টানদের চল্লিশ দিনব্যাপী একটি বিশেষ পর্ব) এর চতুর্থ রবিবার। এবং অন্য দিনটি হচ্ছে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার।
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারে মা দিবস উদযাপন করে থাকে।
তবে সারা বছরই কোনো না কোনোদিন পৃথিবীর কোনো না কোনো দেশ মা দিবস উদযাপন করে থাকে।
ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় রবিবার: নরওয়ে। ৩ মার্চ: জর্জিয়া। ৮ মার্চ: আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, কসোভো, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বসনিয়া, হার্জেগোভিনা, ম্যাসেডোনিয়া প্রজাতন্ত্র, মলদোভা, রোমানিয়া, মন্টিনিগ্রো, মরোক্কো রাশিয়া, হ্মোভেনিয়া, সার্বিয়া, তাজিকিস্তান, ভিয়েতনাম, বুলগেরিয়া, কাজাখস্তান ও লাওস।
লেন্টের চতুর্থ রবিবার: প্রজাতন্ত্রী আয়ারল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও যুক্তরাজ্য।
২১ মার্চ: বাহরাইন, মিশর, জর্দান, কুয়েত, লিবিয়া, লেবানন, ওমান, ফিলিস্তিনী অঞ্চলসমূহ, কাতার, সৌদি আরব, সুদান, সিরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন ও ইরাক।
৭ এপ্রিল: আর্মেনিয়া। মে মাসের প্রথম রবিবার: হাঙ্গেরি, লিথুয়ানিয়া, মোজাম্বিক, পর্তুগাল ও স্পেন। ৮ মে: দক্ষিণ কোরিয়া (মাতাপিতা দিবস)। ১০ মে: এল সালভাদোর, গুয়াতেমালা, মেক্সিকো ও বেলিজ।
মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার: বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ইতালি, এ্যাঙ্গুইলা, আরুবা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, বার্বাডোস, বেলজিয়াম, বারমুডা, বোনাইর, বতসোয়ানা, ব্রাজিল, ব্রুনাই, কানাডা, কম্বোডিয়া, চিলি, চীন, কলম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, কিউবা, কুরাকাও দ্বীপ, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক ডোমিনিকা, ইকুয়েডর, ইস্তোিনয়া, ইথিওপিয়া, ফিজি, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, গোল্ড কোস্ট (ইংরেজ উপনিবেশ), গ্রিস, গ্রানাডা, গায়ানা, হন্ডুরাস, হংকং, আইসল্যান্ড, জ্যামাইকা, জাপান, লাটভিয়া, লিশ্?টেনশ্?টাইন, মেকাও, মালয়েশিয়া, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, পেরু, ফিলিপাইন, পুয়ের্তোরিকো, সেন্ট কিট্স ও নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন দ্বীপপুঞ্জ, সামোয়া, সিঙ্গাপুর, সিন্ট মার্টিন, হ্মোভাকিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুরিনাম, সুইজারল্যান্ড, প্রজাতন্ত্রী চীন, তাঙ্গানিকা, টোঙ্গা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তুরস্ক, উগান্ডা, ইউক্রেন, উরুগুয়ে, ভিয়েতনাম, ভেনেজুয়েলা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।
১৫ মে: প্যারাগুয়ে, ২৬ মে: পোল্যান্ড, ২৭ মে: বলিভিয়া। মে মাসের শেষ রবিবার: আলজেরিয়া, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ফ্রান্স [জুন মাসের প্রথম রবিবার যদি পেন্টেকস্ট (খ্রিস্টানদের একটি বিশেষ উৎসব ইস্টার সানডে’র ৫০ দিন পর যেটি সেলিব্রেট করা হয়) এই দিনটি অনুষ্ঠিত হয়], হাইতি, মরিশাস, সুইডেন ও তিউনিসিয়া।
৩০ মে: নিকারাগুয়া, ১ জুন: মঙ্গোলিয়া (মাতৃ ও শিশু দিবস)। জুন মাসের দ্বিতীয় রবিবার: লুক্সেমবুর্গ। জুন মাসের শেষ রবিবার: কেনিয়া।
১২ আগস্ট: থাইল্যান্ড (রাণী সিরিকিত এর জন্মদিন)। ১৫ আগস্ট (মেরির দায়িত্বগ্রহণ): কোস্টারিকা, অ্যান্ট্ওয়ার্প (বেলজিয়াম)।
অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সোমবার: মালাউই। ১৪ অক্টোবর: বেলারুশ, অক্টোবর মাসের তৃতীয় রবিবার: আর্জেন্টিনা।
নভেম্বর মাসের শেষ রবিবার: রাশিয়া, ৩ নভেম্বর: পূর্ব তিমুর, ৮ ডিসেম্বর: পানামা, ২২ ডিসেম্বর: ইন্দোনেশিয়া।
ইংরেজি তারিখগুলো ছাড়াও ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২০ জমাদিউস সানিতে ইরানে উদযাপিত হয় মা দিবস। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গত ৩০ মার্চ ইরানে মা দিবস উদযাপিত হয়ে গেল।
হিব্রু বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি এবং ১ মার্চের মাঝে ‘সেভাত ৩০’ এ ইসরায়েলে মা দিবস উদযাপিত হয়। হিন্দু বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৯ এপ্রিল ও ১৯ মে এর মাঝে বৈশাখ অমাবস্যা তথা ‘মাতা তীর্থ অনুসি’ বা ‘এক পক্ষব্যাপী মাতৃ তীর্থযাত্রা’র সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বী দেশগুলোতে বিশেষ করে নেপালে মা দিবস উদযাপিত হয়। এ সময় নেপালিরা মৃত মায়েদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানায় এবং জীবিত মায়েদের উপহার ও সম্মান জানায়।
বস্তুত: মাকে ভালোবাসার, মাকে সম্মান জানানোর বা মা’র প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কোনো দিনক্ষণ থাকে না, তবুও একটি বিশেষ দিনে কেবল মায়ের জন্য বিশেষভাবে সময় কাটানোর রীতি পুরো বিশ্বেই এখন বেশ জনপ্রিয়।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন