ডেস্ক রিপোর্ট : ইরান ফুটবলপাগল এক দেশ। বিশ্বকাপও খেলেছে তারা। খেলবে এবারও। এই ফুটবলপাগলদের মধ্যে নারীর সংখ্যা অনেক। যদিও স্টেডিয়ামে নারীদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। দেশটির কিছু ফুটবলপ্রেমী নারীকে এই বেড়াজালে আটকে রাখা যায়নি। অবিকল ছেলেদের সাজ-পোশাক নিয়ে তাঁরা ঠিকই স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখেছেন! এই খবর জন্ম দিয়েছে তুমুল আলোচনার।
তেহরানের আজাদি স্টেডিয়ামে গত শুক্রবার ঘরোয়া ফুটবলের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পেরেসপোলিসের মুখোমুখি হয়েছিল সেপিদ্রোদের। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর এই ম্যাচে পেরেসপোলিসের বেশ কিছু নারী সমর্থক নকল দাঁড়ি আর পরচুলা পরে স্টেডিয়ামে ঢোকেন। নকল এই সাজ-পোশাক এতটাই নিখুঁত ছিল যে স্টেডিয়ামের নিরাপত্তারক্ষীরা পর্যন্ত ধরতে পারেননি। স্টেডিয়ামে তাঁদের খেলা দেখার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভীষণ আলোড়ন তুলেছে।
তাঁদের একজন সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও শেয়ার করেন
তাঁদের একজন সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও শেয়ার করেন
১৯৭৯ সালের আগে ইরান ছিল উদার ইসলামি নীতির অনুসারী দেশ। কিন্তু ওই বছর ইসলামিক বিপ্লবের পর নারীদের মাঠে গিয়ে খেলা দেখার ওপর ধীরে ধীরে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। যদিও নারীরা মাঠে বসে খেলা দেখতে পারবেন না, এমন সরাসরি কোনো আইন দেশটিতে নেই। তবে ইরানের নারীরা ছেলেদের ফুটবল ও অন্যান্য খেলা দেখতে গিয়ে আইনি প্রায়ই হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ২০১৪ সালে ব্রিটিশ-ইরানি আইনজীবী ঘোনচে গাভামি ছেলেদের ভলিবল ম্যাচ দেখার জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
গত মার্চেই ছেলেদের খেলা দেখার জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ৩৫ জন নারী। তার এক মাস আগে তেহরানে ছেলেদের বাস্কেটবল ম্যাচ দেখার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল নারীদের। তবে সেখানে নারী-পুরুষের আসন আলাদা ছিল।
২০১৩ সালে দেশের বাইরে ইরানের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের একটি ম্যাচে নারীদের স্টেডিয়ামে ঢুকতে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়
২০০৬ সালে ইরানি পরিচালক জাফর পানাহি এক ফুটবলপাগল কিশোরীর মাঠে ঢোকার ব্যাকুলতা নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ইরানের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ দেখার জন্য মেয়েটি অনেক চেষ্টা করে। সেখানেও মেয়েটি ছেলে সেজে স্টেডিয়ামে ঢুকে দেখতে চায় ইরান বনাম বাহরাইন ম্যাচটি দেখার জন্য। এই সিনেমার গল্পই যেন অনুসরণ করলেন পেরেসপোলিসের এই নারী সমর্থকেরা। রীতিমতো ইউটিউব ঘেঁটে কীভাবে মেকআপ নিতে হয় তা শিখে মাঠে এসেছিলেন তাঁরা। ধরা পড়লে হয়তো বড় শাস্তির মুখে পড়তেন।
আর এই ঝুঁকি নেওয়া সার্থকও হয়েছে। সেপিদ্রোদেকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে পেরেসপোলিস। ছেলেদের সাজে ম্যাচটি দেখতে যাওয়া এক নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন, এটিই প্রথম নয়। তিনি এ পর্যন্ত তিনবার ছেলেদের সাজ নিয়ে খেলা দেখেছেন। এভাবে খেলা দেখতে যেতে ভয় লাগে কি না? এই প্রশ্নে আরেক নারীর জবাব, ‘ভয় পাব কেন? আমরা নারীরা স্টেডিয়ামে গিয়ে তো কোনো অপরাধ করিনি। আইন তো বলছে না মেয়েদের স্টেডিয়ামে যাওয়া অপরাধ। হ্যাঁ, তারা বেশ কিছু মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে এবং আর কখনো না যাওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ছেড়েও দিয়েছে।’
২০১৪ সালে ছেলেদের ভলিবল ম্যাচ দেখার জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ব্রিটিশ-ইরানি আইনজীবী ঘোনচে গাভামি
মাঠে ঢোকার পরপরই অবশ্য আশপাশে অনেকে টের পেয়ে যান ব্যাপারটি। এরপর সেই নারী দর্শকদের একজন নিজের সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও শেয়ার করেন। সেখানে কেউ লিখেছে, ‘দারুণ তো! এমনটা করার জন্য অনেক সাহস লাগে।’ আবার সবাই যে উৎসাহিত করছেন, এমনও নয়। কেউ কেউ লিখেছেন, ‘তোমরা নারীদের ফুটবল ম্যাচ দেখতে যাও না কেন? তোমাদের কেন ছেলেদের স্টেডিয়ামে আসতেই হবে?’ সূত্র : প্রথম আলো