খন্দকার রুহুল আমিন : বাংলাদেশ একটি পর্যটন সম্ভাবনার দেশ। কিন্তু এই সম্ভাবনা কি রকম সম্ভাবনা এবং কিভাবে এর উপর কাজ করা যায়, সে বিষয়টা দেখতে হবে। চমৎকার ও দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক নৈস্বর্গ আমাদের বাংলাদেশ, প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ। তিন হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যায়। নরসিংদীর ওয়ারী বটেশ্বরে যেটা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। আমাদের অত্র এলাকায় যে সভ্যতা ছিল তার নিদর্শন। ধর্মীয় অনুভূতিকে আকর্ষণ করে এমন অনেক কিছু আছে আমাদের। ঢাকা সিটিকে বলা হয় সিটি অব মস্ক বা মসজিদের নগরী। এখানে বৌদ্ধ ধর্মের অনেক কিছু আছে। গৌতম বৌদ্ধের চুলও বাংলাদেশে পাওয়া গিয়েছে। এই ধরনের নৈস্বর্গিক নিদর্শন যেমন বাংলাদেশে আছে, তদ্রুপ ধর্মীয় অনুভূতি, যেমন: হিন্দুদের অনেক স্বর্ণমূর্তি, অনেক পুরনো মন্দির আছে। পর্যটনের এটিও একটি দিক। শুধু যে জীবনকে উপভোগ করার জন্যই পর্যটন করে থাকে, কথাটি সঠিক নয়। অনেকেই বিদেশ ভ্রমণ করে থাকে ধর্মীয় অনুভূতির কারণে, শিক্ষার্জনের জন্যে। যারা জীবনকে উপভোগ করে থাকে তাদেরও ভ্রমণ আছে। বাংলাদেশকে আমরা সুন্দর আদর্শগত পর্যটন নগরী বলতে পারি। এখানকার অভিবাসী যারা আছে তারা বন্ধুবৎসল। বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যারা এখানে আসে, তারা একটি কথাই বলে থাকে যে, বাংলাদেশের মানুষ খুব অতিথি পরায়ণ। অনেক দুঃখেও তাদের মুখে হাসি থাকে। এই গুণটা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আছে। সারাবিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত আমাদের এখানে আছে। খুলনার সুন্দরবন বিশ্বের বিস্ময়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত একই জায়গা থেকে দেখা যায় আমাদের কুয়াকাটা থেকে। আমাদের বগুড়াতে অনেক নিদর্শন আছে। মহাস্থানগড়, কুমিল্লার ময়নামতি, ঢাকার লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, নবাবগঞ্জে হিন্দু মন্দির আছে। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু আমাদের বিক্রমপুরের। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আছে। সবচেয়ে সুস্বাদু সামুদ্রিক ইলিশ মাছ আছে আমাদের। এ ধরনের আরও অনেক কিছুতেই বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সহজেই ওভারকাম করা যায়। এ দেশটাকে পর্যটন কেন্দ্র করে আমরা যদি এগোতে পারি, তাহলে আমরা অনেক দূর যেতে পারব। যে বিষয়টা দরকার তা হলো মাইন্ড সেট আপ। সরকার যদি চেষ্টা করে, পর্যটন মন্ত্রণালয়ে যিনি দায়িত্বে আছেন, বিশেষ করে যিনি সচিব তারা যদি চিন্তা করেন এবং দেশের নির্বাহী বিভাগের প্রধান যিনি তিনি যদি চিন্তা করেন যে, এই দেশকে পর্যটনবান্ধব দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব, তাহলে হবে। তারা যদি ভাবেন, পর্যটনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যারা প্রাইভেট সেক্টরে আছেন, তাদেরকে আমরা সুযোগ সুবিধা করে দেব তাহলে কিন্তু দেখবেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে এগিয়ে যেতে পারবে। আমরা যেন কিছু বলার জন্য, দেখার জন্য কিছু করি। ২০১৬ সালকে বলা হয়েছিল পর্যটন বছর। ২০১৬ সালে আমরা কি পেয়েছি? আমাদের এখানে ওয়ার্ল্ড কাপ খেলা হয়ে গেল। টি টোয়েন্টি প্রমীলা ওয়ার্ল্ড কাপ হয় মেয়েদের জন্য। আমরা মার্কেটিং কি করতে পেরেছি? সে রকম কিছুই করতে পারিনি। এই খেলাধুলা দিয়ে বহির্বিশ্বে আমরা এগোতে পারি। আমাদের এখানে অল্প জায়গার মধ্যে ছোট্ট একটা দেশ, তার ষোল কোটি অধিবাসী। ভালোভাবে আতিথেয়তা করতে পারে এ দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের মধ্যে আছে। পর্যটন করর্পোরেশন করা হয়েছে ১৯৭৩ সালে। জাতির পিতা এটা করেছিলেন। কিন্তু এর পরে যেভাবে এগিয়ে যাওয়া দরকার সেভাবে হয়নি। পর্যটন করর্পোরেশন চেয়ারম্যান হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে যিনি আসেন, তিনি যখনই ভালো কিছু বুঝে উঠতে যান, তখনই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। চল্লিশ বছরে ত্রিশজন চেয়ারম্যান এসেছেন। এইভাবে এগোনো যাবে না। সচিব পর্যায়ে যারা আছেন, তারা পর্যটনকে বুঝেন, পর্যটনকে লালন করেন এবং ভালো কিছু করতে চান। সেই ধরনের কিছু ব্যক্তিদের মধ্য থেকে যদি চেয়ারম্যান করা হয় এবং এখানে প্রাইভেট সেক্টর থেকে দুই-একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিটি করে দেওয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে যে পর্যটনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। অনেক স্পট আছে যেটা পর্যটনের লুজিং কনসার্ন। প্রাইভেট সেক্টরে যদি লিজ দেওয়া হয়, যারা পর্যটনের সাথে জড়িত আছে তাদেরকে দেওয়া যায়, তাহলে সেটাও দেখা যাবে যে লস তো হবেই না, প্রতিবছর ভালো ভাড়া আসবে। এগুলো চিন্তা করে এগোনো দরকার। আর আমি মনে করি, পর্যটনকে ভালোভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কমিউনিকেশন, ট্রান্সপোর্টেশন ইজি করা দরকার। ঢাকা থেকে কক্সবাজার ১৪ ঘণ্টার ওপরে লাগে। এই ১৪ ঘণ্টা সময় নষ্ট করে কেউ যেতে চাইবে না। ট্রেন লাইন সময় নেবে কম। তাড়াতাড়ি ভালো করে সেখানে ট্রেন লাইন স্থাপন করা যায়।
লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ