ডেস্ক রিপোর্ট: জাবির ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলায় পাঁচজনের ফাঁসি ও দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তিনি বলেন, এ রকম একটি হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি না হতো তাহলে এটা হতো খুবই দুঃখজনক। আমরা বলতে পারি এ সরকারের আমলে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে এবং দ্রুত নিষ্পত্তি হয়েছে।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল তাতে প্রাণ হারিয়েছিল জুবায়ের নামের এক মেধাবী ছাত্র। এই মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করে বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছিল। এতে নিম্ন আদালতে রায়ে পাঁচজনকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছিল। তিনি বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের শুনানির পর রায় হয়েছে। এই রায়ে যে পাঁচজনের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছিল নিম্ন আদালত থেকে সে আদেশ বহাল রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ফাঁসির বিষয়ে নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছেলেন সেটার কোনো পরিবর্তন হয়নি। যে ছয়জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছিল সেখানে দুইজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল আছে এবং বাকি চারজনকে খালাস দেয়া হয়েছে।
দেশের একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে সংঘর্ষে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী মৃত্যু হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে ছাত্র রাজনীতির এ বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখছেন? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখানে অভিযোগ যেটা এসেছে সেটা হলো, পুলিশের তদন্তে বা প্রসিকিউশনের কেসটা যেভাবে করা হলো সেটা হলো তাকে টার্গেটই করা হয়েছিল যে, তাকে মেরে ফেলা হবে। এবং এই গণ্ডগোলের পরিপ্রেক্ষিতেই টার্গেট করাটা সহজ হয় এবং তাকে মেরে ফেলা হয়। এই শিক্ষার্থী শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল।
তিনি বলেন, এ রকম একটি ছেলে যে নাকি মাস্টার্সে শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল। সে তার পরিবারের জন্য বিরাট একটি আশা-ভরসার স্থল ছিল। তার পরিবার নিশ্চয়ই তাকে যে মানুষ করেছিল এত দিন লেখাপড়া শিখিয়ে তার পরিবর্তে মানসিক একটা তৃপ্তি, আর্থিক নানারকম সাহায্য-সহযোগিতা সে জীবিত থাকলে সবই হতো। কিন্তু সবই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো এ ধরনের ঘটনাগুলো কেন ঘটবে? আগে মানুষ খুন হতো ডাকাতির ব্যাপারে। আর এখন যদি এ রকম টার্গেট করে মারা হয় তাহলে তো খুবই দুঃখজনক বিষয়। আর এটা তো হঠাৎ কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মারা যাওয়া না। এটা একেবারে ছক এঁকে, প্ল্যান করে তাকে মেরে ফেলা হয়। নিম্ন আদালত যে মুত্যুদণ্ড দিয়েছেন এবং হাইকোর্ট বিভাগ যেটা বহাল রেখেছেন, তাতে অন্তত এই ম্যাসেজটা অন্তত যাবে যে, কাউকে হত্যা করলে তাকেও ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ছাত্র রাজনীতি হোক বা যে ধরনের রাজনীতি হোক, যেখানে ঠাণ্ডা মাথায় প্ল্যান করে মারা হয়, সেটা তো নিশ্চয়ই হত্যাকাণ্ড। বাইরের বিষয়গুলো যাই থাকুক না কেন সেগুলো গৌণ হয়ে যায়।
পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া কি জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, “যেহেতু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করলে এজ অ্যা মেটার অব লাইফ আপিলটার শুনানি হবে। পলাতক যারা আছেন তারা আত্মসমর্পণ না করলে তারা আপিল করতে পারবে না।
পলাতকদের গ্রেফতারের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তাদের গ্রেফতার করার জন্য আমাদের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি ইংরেজি দৈনিকে খবর ছাপা হয়েছে, ফাঁসির আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। দেশের বাইরে থাকলে সেটা তো অন্য কথা। সেখানে আমাদের এখতিয়ার নেই তাদের গ্রেফতার করার। মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের আওতায় যদি অনুরোধ করা হয় তাহলে হয়তো তাকে ফেরত আনা যেতে পারে। আর দেশে ঘুরে বেড়ালে নিশ্চয় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ধরবে। কিন্তু জনগণের সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন। যারা আসামি তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানেন কিনা? জবাবে তিনি বলেন, আমি তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানি না।