ইমতিয়াজ মেহেদী হাসান : নায়করাজ রাজ্জাক। পরিচিতির জন্য কেবল নামটুকুই যথেষ্ট। আজ মঙ্গলবার প্রয়াত এই কিংবদন্তি অভিনেতার ৭৭তম জন্মদিন। নিজ জীবদ্দশার ৫৩ বছর চলচ্চিত্রকে শাসন করেছেন রাজ্জাক। তিনি কেবল একজন পূর্ণাঙ্গ শিল্পীই ছিলেন না। একাধারে ছিলেন অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক এবং শিল্পীদের নেতা। বাংলা চলচ্চিত্রে তার মতো আর কোনো অভিনেতা অভিনয় দক্ষতায় এত বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি।
পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু সিনেমা আর ভারতের হিন্দি ও বাংলা সিনেমাকে হটিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা চলচ্চিত্রকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন রাজ্জাক। তিনি তখনকার প্রায় সব নায়িকার সঙ্গেই জুটি বেঁধেছেন। তবে ববিতা, কবরী এবং শাবানার সঙ্গে তার অভিনয় দর্শককে বেশি আলোড়িত করেছে।
সব ধরনের চরিত্রেই নিজেকে মানিয়ে নিতেন তিনি। আর এ কারণেই দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে পান নায়করাজ পরিচিতি। সাংবাদিক আহমেদ জামান চৌধুরী খোকা তাকে ‘নায়করাজ’ উপাধি দেন।
স্বাধীনতা পুরস্কারের পাশাপাশি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, বাবিসাস পুরস্কার, ইন্দো-বাংলা কলা মিউজিক পুরস্কার, ইফাদ ফিল্ম ক্লাব পুরস্কার ও মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার, কী নেই তার অর্জনের ঝুলিতে। তবে ১৯৬৪ সালে শরণার্থী হয়ে ঢাকায় আসা রাজ্জাকের শুরুটা সুখকর ছিল না।
কিশোর বয়সে মঞ্চ নাটক করতেন রাজ্জাক। এরপর ১৯৫৭ সালে এফডিসি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৪ সাল থেকেই তিনি অভিনয় জীবন শুরু করেন। তবে প্রথমদিকে নায়করাজ তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে সুযোগ পান আব্দুল জব্বার খানের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার। এরপর তেরো নম্বর ফেকু ওস্তাগড় লেন, কার বউ, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশনসহ বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ করলেও জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে তিনি ‘নায়ক’ হিসেবে আবির্ভূত হন।
শুধু অভিনয়েই নয়, তিনি পরিচালনা-প্রযোজনাতেও ছিলেন ঋদ্ধ। হিসাব মতে, তিনি ১৮টি চলচ্চিত্র পরিচালনা এবং ২০টি ছবি প্রযোজনা করেছেন।
‘উজালা’ সিনেমার মধ্য দিয়ে ঢাকায় চলচ্চিত্র জীবন শুরু করা নায়করাজের পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক। ডাক নাম রাজু, রাজ্জাক, রাজা। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি তিনি কলকাতার টালিগঞ্জের নাগতলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আকবর হোসেন এবং মাতার নাম নিসারুন নেসা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। ১৯৬২ সালে তিনি খায়রুন নেসা (লক্ষ্মী) কে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের বাপ্পারাজ, বাপ্পি, সম্রাট, শম্পা, ময়না নামে ৫ সন্তান রয়েছে।
চলচ্চিত্রের বাইরে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবেও কাজ করেছেন এই চিরসবুজ নায়ক। সুচন্দা, ববিতা, কবরী, সুজাতা, শাবানা, শবনমের মতো চলচ্চিত্রের ডাকসাইটের নায়িকাদের স্বপ্নের পুরুষ ছিলেন তিনি।