মাইকেল : মোবাইল ফোন চার্জে দিয়ে কথা বলার সময় ঘটছে বিস্ফোরণের ঘটনা। এর ফলে দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মোবাইল ফোন নয়, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা বলছেন, মোবাইল কানের ওপর বিস্ফোরণ ঘটার কারণে কান, চোখ ও মাথা দগ্ধ হয়ে থাকে। এমনকি ঘটনার শিকার ব্যক্তির শ্বাসনালি পর্যন্ত দগ্ধ হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগী গুরুতর আহত হয়ে পড়েন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস চার্জে দিয়ে ব্যবহার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে মোবাইল ফোন চার্জে দিয়ে কথা বলার সময় বিস্ফোরণে দগ্ধ বেশ কয়েকজনকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে বিষয়টি দেখা গেছে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে এ ধরনের রোগীর মাথাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান পুড়ে যায়। মোবাইল ফোন চার্জে দিয়ে কথা না বলার পরামর্শ দেন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
মোবাইল ফোনে চার্জ দিয়ে কথা বলার সময় দগ্ধ হয়ে গত এক বছরে বেশ কয়েকজন ঢামেক বার্ন ইউনিট থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত বিশেষায়িত এই ইউনিটে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল ফোন চার্জ দিয়ে কথা বলার সময় ইন্টারনেট ডেটা চালু থাকলে সেটি আরও বেশি বিপজ্জনক। মোবাইলে চার্জ দেওয়া এবং ইন্টারনেট চালু রাখা অবস্থায় কথা বলা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ডেটা চালু করলে তার মাইক্রোপ্রসেসে কনজিউমিং রেট বেড়ে যায়। তখন অটোমেটিক হিট (তাপমাত্রা) জেনারেট করে। তখন মাইক্রোকন্ট্রোলার গরম হবে। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই বিস্ফোরণ ঘটে। কম্পিউটারের পিসি বা এসিতে ফ্যান থাকে, যেটা ওই যন্ত্রটিকে ঠা-া রাখে। কিন্তু মোবাইল ফোনে সেটি থাকে না।
তিনি বলেন, মোবাইল ফোনে নিম্নমানের ব্যাটারি ব্যবহারের কারণেও বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। কারণ মোবাইল ফোনে চার্জ হওয়ার সময় ব্যাটারি গরম হয়। কথা বলার কারণে তার তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায়। তখনই আসলে মোবাইল ফোন বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই কোনো অবস্থায় একই সঙ্গে মোবাইল চার্জে রেখে এবং ইন্টারনেট ডেটা চালু করে কথা না বলার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ। একই সঙ্গে অন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।
গত বছরের ২২ অক্টোবর আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় মোবাইল ফোন চার্জে দিয়ে কথা বলার সময় বিস্ফোরণে এক দম্পতি দগ্ধ হন। ঘটনার শিকার জাফর মিয়ার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থানায়। ওই এলাকায় ভাড়া থাকতেন তিনি।
জানা যায়, জাফর মিয়া মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় সেটি চার্জে দেওয়া ছিল। কথা বলার একপর্যায়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় পাশে থাকা তার স্ত্রীও দগ্ধ হন। প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাদের ঢামেক বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎকরা তখন জানিয়েছিলেন, জাফর মিয়ার শরীরের ৫২ শতাংশ এবং তার স্ত্রীর ২০ শতাংশ দগ্ধ হয়।
২০১৭ সালের শুরুর দিকে ইডেন মহিলা কলেজের এক ছাত্রী মোবাইল ফোন চার্জে দেওয়ার সময় দগ্ধ হন। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢামেক বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ওই ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ নিয়ে কথা বলতে চাননি।
তবে মোবাইল ফোন বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের আলাদা কোনো রেকর্ড নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।