ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম সম্প্রতি ৩০ হাজার টাকা পাঠাতে চেয়েছিলেন শেরপুরে। এজন্য তিনি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘রকেট’-এর এক এজেন্টের কাছে যান। ওই এজেন্ট তাকে জানান যে, এক দিনে দুই ভাগে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা লেনদেন করা সম্ভব। তার পরামর্শ অনুযায়ী ওই ব্যবসায়ী ২৫ হাজার টাকা শেরপুর পাঠিয়েছিলেন। এজন্য ১৫ হাজার টাকা ‘ক্যাশইন’ এবং বাকি ১০ হাজার টাকা ‘সেন্ড মানি’ করা হয়েছিল।
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় দেখা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কোনো গ্রাহকের দিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা ক্যাশইনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ‘সেন্ড মানি’ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। আর এর সুযোগ নিয়ে ব্যবসা করছে ‘রকেট’।
শেয়ার বিজ’র খবরে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবাদানকারী (এমএফএস) কোম্পানির এজেন্টরা জানিয়েছেন, অন্যান্য কোম্পানিও আলাদা আলাদা সেবা দিচ্ছে গ্রাহকদের। একেকটি সেবাকে বলা হয় একেকটি প্রডাক্ট। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় সব প্রডাক্টের সীমা নির্দিষ্ট করা নেই।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমএফএস সেবার (রকেট) লেনদেনের সীমাসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্যাশইন এজেন্ট, ক্যাশইন ব্রাঞ্চ, ক্যাশ-আউট এজেন্ট, ক্যাশ-আউট ব্রাঞ্চের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা পরিমাণ রয়েছে। একইভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা-বিকাশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ক্যাশইন, ক্যাশ-আউট, সেন্ড মানি, পেমেন্ট, বাই এয়ারটাইম (রিচার্জিং), রেমিট্যান্স, ইন্টারেস্ট অব সেভিংস নামে আলাদা প্রডাক্ট রয়েছে।
ইন্টারেস্ট অব সেভিংসের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গত নভেম্বরে একটি নির্দেশনা রয়েছে। তাতে বলা হয়, ‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা জমা করে মুনাফা অর্জনের জন্য একজন গ্রাহক সর্বাধিক তিন লাখ টাকা জমা রাখতে পারবেন।’ কিন্তু এটিএম-ক্যাশ আউটের মতো বিশেষ সেবার জন্য আলাদা সীমা নির্ধারিত নেই।
রকেটের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, এটিএম বুথ থেকে রকেটের অ্যাকাউন্টধারী গ্রাহকরা একদিনে তিনবারে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারবেন। একাধিক গ্রাহক এটিএম বুথ ব্যবহার করে ৩০ হাজার টাকা করে উত্তোলন করেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত নির্দেশনা অনুসারে ব্যক্তি হিসাব থেকে সর্বোচ্চ দুইবারে ১০ হাজার টাকা উত্তোলনের সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাসেম শিরিনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। রকেটের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা (সিটিও) আবুল কাসেম খানকেও যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। দুই সপ্তাহ আগে প্রতিষ্ঠানটির কাছে লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হলেও এর কোনো জবাব মেলেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা এইচএম সগির আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম মূলনীতি। এটিএম থেকে রকেটের অর্থ উত্তেলনের বিষয়টি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবাকে আরও সহজ করবে বলেই তেমনটি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে নিশ্চয়ই অবগত।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘এমএফএস বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেকগুলো নির্দেশনা রয়েছে। সাধারণ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কেউ তার নিজের এমএফএস অ্যাকাউন্টে (ওয়ালেটে) টাকা ট্রান্সফার করলে সেজন্য সীমা নির্ধারণের প্রয়োজন পড়ে না। আমরা সীমা বেঁধে দিয়েছি কেবল এজেন্টের কাছে গিয়ে ক্যাশ-ইন ও ক্যাশ-আউট করার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ ফিজিক্যাল মানি (টাকা) থেকে ও ডিজিটাল মানিতে (এমএফএস ব্যালান্স) রূপান্তরের ক্ষেত্রে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।’
এটিএম সেবা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি মূলত সাধারণ অ্যাকাউন্টের সঙ্গে এমএফএস অ্যাকাউন্টের একধরনের সংযোগ। কাজেই এটাতে আলাদা নির্দেশনার প্রয়োজন পড়ে না।’
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার মতে, এটিএম সেবাটি সে অর্থে মোবাইল ব্যাংকিং নয়। এটি টাকা উত্তোলনের জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা। এজন্য মূল ব্যাংকে গ্রাহকের হিসাব থাকা জরুরি নয়। মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলে গ্রাহক যেমন এজেন্টের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারে, তেমনি এটিএম বুথ থেকেও টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। ব্র্যাক ব্যাংকের যেসব এটিএম বুথে বিকাশের লোগো দেওয়া থাকবে সেগুলো থেকে বিকাশ গ্রাহকরা টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। একইভাবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে রকেট গ্রাহকরা টাকা পাবেন। এজন্য এটিএম মেশিনে আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। এজন্য কোনো কার্ডের প্রয়োজন হবে না। মোবাইল থেকেই কমান্ড দিয়ে এটিএম মেশিনে পাসওয়ার্ড টাইপ করে টাকা নেওয়া যাবে।