সাইদুর রহমান: বাবা আদম আ. মানব সৃষ্টির প্রথম। তিনি আদি পিতা অর্থ্যাৎ পৃথিবীতে আগত সকল সন্তানের পিতা। তিনি প্রথম মানব। তার গঠন ও আকৃতি কেমন ছিল এ বিষয়ে সহীহ বুখারী শরীফে এসেছে। যেমন, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম আ.-কে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। এরপর তিনি (আল্লাহ) তাঁকে (আদমকে) বললেন, যাও। ঐ ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম কর। এবং তাঁরা তোমার সালামের জবাব কিরূপে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কেননা, এটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। তারপর আদম আ. (ফেরেশতাদের) বললেন, “আসসলামু আলাইকুম”। ফেরেশতাগণ তার উত্তরে “আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বললেন। ফেরেশতারা সালামের জবাবে “ওয়া রাহমাতুল্লাহ” শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদম আ.-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপ পর্যন্ত পৌঁছেছে। বুখারি , হাদীস নং ৩০৯১
আদম সন্তানেরা যখন জান্নাতে যাবে তখন তাদের শারীরিক গঠন ও আকৃতি কেমন হবে এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারপর যে দল তাদের অনুগামী হবে তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার মত। তারা না করবে পেশাব আর না করবে পায়খানা। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক হতে শ্লেষ্মাও বের হবে না। তাদের চিরুণি হবে স্বর্ণের তৈরী। তাদের ঘাম হবে মিসকের ন্যায় সুগন্ধ পূর্ণ। তাদের ধুনচি হবে চন্দন কাঠের। বড় চক্ষু বিশিষ্ট হুরগণ হবেন তাদের স্ত্রী। তাদের সকলের দেহের গঠন হবে একই। সবাই তাদের আদি পিতা আদম আ.-এর আকৃতিতে হবেন। উচ্চতায় তাদের দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত বিশিষ্ট। বুখারি হাদিস নং ৩০৯২
আদম আ. এর স্ত্রী হাওয়া আ. কে সৃষ্টির ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা নারীদেরকে উত্তম উপদেশ দিবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থেকে যাবে। কাজেই নারীদের সাথে উপদেশপূর্ণ কথাবার্তা বলবে। (হাদীস নং ৩০৯৬)
আদম সন্তানদের যেভাবে আল্লাহ সৃষ্টি করেন এ বিষয়ে হাদীসে বিস্তারিত আছে। যেমন : আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সত্যবাদী-সত্যনিষ্ঠ হিসাবে স্বীকৃত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান স্বীয় মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত জমা রাখা হয়। এরপর অনরূপভাবে (চল্লিশ দিনে) তা আলাকারূপে পরিণত হয়। তারপর অনুরূপভাবে (চল্লিশ দিনে) তা গোশতের টুকরার রূপ লাভ করে। এরপর আল্লাহর তার কাছে চারটি বিষয়ের নির্দেশ নিয়ে একজন ফেরেশতা পাঠান। সে তার আমল, মৃত্যু, রিযিক এবং সে কি পাপী হবে না পুণ্যবান হবে, এসন লিখে দেন। তারপর তার মধ্যে রূহ ফুকে দেয়া হয়। এক ব্যক্তি একজন জাহান্নামীর আমলের ন্যায় আমল করতে থাকে এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে এক হাতের ব্যবধান থেকে যায়, এমন সময় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে। তখন সে জান্নাতবাসীদের আমলের ন্যায় আমল করে থাকে। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যক্তি (প্রথম হতেই) জান্নাতবাসীদের আমলের অনুরূপ আমল করতে থাকে। এমন কি শেষ পর্যন্ত তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাতের ব্যবধান থেকে যায়। এমন সময় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে। তখন সে জান্নামবাসীদের আমলের অনুরূপ আমল করে থাকে এবং পরিণতিতে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। হাদীস নং ৩০৯৭
এ বিষয়ে আরো এসেছে, আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ মাতৃগর্ভে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। (সন্তান জন্মের সূচনায়) সে ফেরেশতা বলেন, হে রব! এ তো বীর্য। হে রব! এ তো আলাক। হে রব! এ তো গোশতের টুকরা। এরপর আল্লাহ যদি তাকে সৃষ্টি করতে চান। তাহলে ফেরেশতা বলেন, হে রব! সন্তানটি ছেলে হবে, না মেয়ে হবে? হে রব! সে কি পাপিষ্ঠ হবে, না পুণ্যবান হবে? তার রিযিক কি পরিমাণ হবে, তার আয়ু কত হবে? এভাবে তার মাতৃগর্ভে সবকিছুই লিখে দেয়া হয়। হাদীস নং ৩০৯৮