অরণ্য কাশ্যপ: সম্প্রতি সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রায় চার দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে’কে গৃহবন্দী করা হলে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে জিম্বাবুয়ের বর্তমান পরিস্থিতি।
আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত দেশ জিম্বাবুয়ে, বর্ণবাদী ভূমিকার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে থাকা জিম্বাবুয়ে স্থানীয় জাতীয়তাবাদী ‘ব্ল্যাক ন্যাশনালিস্ট ফোর্স’ এর সঙ্গে ১৫ বছর গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। পরিশেষে ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে একটি শান্তি চুক্তি হলে, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশটি।
পাঠকদের উদ্দেশ্যে জিম্বাবুয়ের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা তুলে ধরা হলো-
শাসনতন্ত্র
১৯৮০ সালে সংখ্যালঘু শেতাঙ্গ শাসনের অবসান ঘটিয়ে জানু-পিএফ পার্টি নির্বাচনে জয়লাভ করলে রবার্ট মুগাবে জিম্বাবুয়ের প্রধানমন্ত্রী হন। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে সরকার ব্যাবস্থায় পরিবর্তন এনে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট হন তিনি। ৯৩ বছর বয়সী মুগাবের ও তার সমর্থকরা নির্বাচনী কৌশল হিসেবে সহিংসতা ও হত্যাকা-ের মাধ্যমে ক্ষমতায় ৩৭ বছর অধিষ্ঠিত থাকতে সক্ষম হয়।
মুদ্রাস্ফীতি
শেতাঙ্গ-মালিকানাধীন জমি নিয়ে ভূমিহীন কৃষ্ণাঙ্গদের পুনর্বন্টন শুরু হয় ২০০০ সালে। জমির এমন সংস্কারের কারণে জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব পরে। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে জিম্বাবুয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে মুদ্রাস্ফীতি দেখানো হয় ২৩১ মিলিয়ন শতাংশ।
দরিদ্র্যতা
দেশটিতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দারিদ্র্যের হার বেড়ে গিয়েছে। তবে আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় জিম্বাবুয়েতে দারিদ্র্য কম। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে সেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৪১ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে যারা দিনে ১.৯০ ডলারেরও কম আয় করতো।
বেকারত্বের হার
বিশ্বব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালে জিম্বাবুয়েতে বেকারত্বের হার ছিল ৫ শতাংশ। তবে বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন দাবি করে, বর্তমানে বেকারত্বের হার ৯০ শতাংশের বেশি।
বয়স্ক সাক্ষরতার হার
স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগের কারণে, দেশটিতে বয়স্ক সাক্ষরতার হার ৮৯%। বিশ্বব্যাংকের ২০১৪ এর হিসাব অনুযায়ী আফ্রিকার সর্বাধিক সাক্ষরতা জিম্বাবুয়েতে।
এইচআইভি সংক্রমণ হার
ইউএনএইডস এর ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, জিম্বাবুয়েতে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ লক্ষ, যা আফ্রিকায় ষষ্ঠ।
গড় আয়ু
নব্বই দশকে এইচআইভি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পরায় জিম্বাবুয়ের গড় আয়ু ব্যপক হারে কমে যায়। ১৯৮৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৬১.৬ বছর যা ২০০৩ সালে ৪৩.১ বছরে নেমে আসে। ২০১৫ সালের বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বর্তমান গড় আয়ু ৬০ বছর।
স্বাধীনতার পর দেশটির জন্ম হার বৃদ্ধি পায়। নব্বইয়ের দশকে জন্মনিয়ন্ত্রণ আইন করা এবং ওই সময় মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ায় জন্ম হার নিয়ন্ত্রণে আসে। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা ১৬.৭ মিলিয়ন।
সুত্র: বিবিসি নিউজ