উত্তরার আব্দুল্লাহপুর পুলিশ চেকপোস্টে বৃহস্পতিবার রাতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। আট নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে রাত ১১টার দিকে আটকের পর ভোরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, তার মা উত্তরার সাঈদ গ্রাউন্ড সেন্টারে বুয়ার কাজ করেন। তার বাবা ঝুড়িতে করে কলা বিক্রি করেন। আর ইলিয়াস পরিচ্ছতার কাজ করেন। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। অপরদিকে তারা দক্ষিণখান থানাধীন আদম আলী মার্কেটের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
ইলিয়াসের বাবা এলেম কাজী ও তার মা আমাদের সময় ডটকমকে জানান, 'ছেলেডা ঘরের মধ্যে ঘুমাইয়া ছিল। হুট করে রাত ১১টার দিকে একজন ডাইকা লইয়া গেল। এর খানেক পরেই শুনি পুলিশে ধরছে। তার পর তারে পুলিশ বক্সে নিয়ে রাখা হয়।'
খবর পেয়ে আসার পর, পুলিশের স্যার বলেন, "আমার ছেলে নাকি ইয়াবা ব্যবসায়ী! তার কাছ থাইকা অনেক ইয়াবা পাওয়া গেছে। এখন বক্স থেকে ছাড়াইয়া লইয়া যাইতে টাকা লাগব। আর নাহলে থানায় নিলে এহন থেকে পাঁচগুণ টাকা দিলেও কাম অইব না।"
তার মা বলেন, 'আমরা ঠিকমত ভাত খাওয়ার ভাতই পাই না। আর আমার ছেলে ইয়াবা ব্যবসা করব কি করে?'
এমন অভিযোগে আটক করার স্থান উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের পলওয়েল মার্কেটের পাশে খোজ নিলে ড্রাইভার শাকিল, অটো চালক করিম জানান, হঠাৎ করেই কয়েকজন পুলিশ এসে আরেকজনের দেখিয়ে দেওয়া মতে এক ছেলেকে ধরে পুলিশ। পরে তাকে পায়াইছি বলেই বক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু কি পাইছে তা আর কেউ জানেন না।
অপরদিকে পরিচয় গোপন করে প্রতিবেদক জানতে চাইলে আব্দুল্লাহপুর পুলিশ চেক পোষ্টে কর্তব্যরত উত্তরা পূর্ব থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. সোহেল রানা -২ জানান, ইলিয়াস একজন ইয়াবার ডিলার। তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা পাওয়া গেছে। কিন্তু পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আপনাকে জানানো যাবে না। অপরদিকে প্রতিবেদকের সামনেই তিনি ছাড়াতে আসা ইলিয়াসের স্বজনদের জানান, "এখান থেকে যদি নিতে চান, তাহলে টাকার ব্যবস্থা করেন। নইলে থানায় নিয়ে গেলে তার থেকে বেশি টাকা দিয়েও তখন কোন লাভ হবে না।"
ঘটনার পরদিন শুক্রবার বিকেলে উত্তরা পূর্ব থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হযরত আলী জানান, গত রাত থেকে এখন পর্যন্ত কোন মাদকের মামলা দায়ের হয় নি। এছাড়াও ইলিয়াস নামের কেউ আটকও নেই।
অপরদিকে উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী আমাদের সময় ডটকমকে জানান, আব্দুল্লাহপুর থেকে কোন মাদক ব্যবসায়ী আটকের খবর জানা নেই। পরে তিনি ওই এএসআই সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে কোন মাদক ব্যবসায়ী আটক করেন নি বলে জানান এএসআই সোহেল রানা।
এদিকে ইলিয়াসকে ছাড়াতে আসা নুর ইসলাম আমাদের সময় ডটকমকে জানান, ওই রাতে পুলিশ ১০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। পরে সাড়ে তিন হাজার টাকার দেওয়ার শর্তে তাকে ছাড়ানো হয়। কিন্তু সাড়ে তিন হাজার টাকা যোগাড় করা সম্ভব হয় নি। পরে আড়াই হাজার টাকা ও একটি মোবাইল রেখে দেন এএসআই সোহেল।
এসব অভিযোগের প্রসঙ্গে এএসআই সোহেল রানা আমাদের সময় ডটকমকে জানান, ওই ছেলে গরীব মানুষ। তার কাছ থেকে এক পিছ ইয়াবা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তার বাবা মার দিকে তাকিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার সময় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ আটকের বিষয়ে জানানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
আপনার মতামত লিখুন :