রাজধানীর উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত আজ শনিবার সকাল ১০.৩০ টায় ইনডেপেন্ডেন্ট স্কুলের ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠিত। দেশের প্রথম ন্যাশনাল কারিকুলাম এ চালিত ইংলিশ ভার্সন স্কুলটির ওপেন হাউস ডে ২০১৭ ও ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইনডেপেন্ডেন্ট স্কুলটির ওপেন হাউস ডে ২০১৭ ও ও মতবিনিময় সভায় উপস্থিত আলোচক গণ বলেন উচ্চবিত্তের শিশুদের উন্নত শিক্ষা দেওয়ার ব্যবসা হিসেবে এদেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের যাত্রা শুরু হলেও, বর্তমানে এসব স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী মধ্যবিত্ত পরিবারের। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। সন্তানের উন্নত ভবিষ্যতের কথা ভেবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মা-বাবা নিজেরা অভুক্ত থেকেও সন্তানদের এসব স্কুলে ভর্তি করান। কিন্তু সত্যিকার অর্থে শিশুরা কি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছে কিনা?
বাংলাদেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মানেই লক্ষাধিক টাকা দিয়ে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করা, তের-চৌদ্দ হাজার টাকা মাসিক বেতন দেওয়া, বিশ কী পঁচিশ কেজি ওজনের বই-খাতার স্কুলব্যাগ পিঠে নিয়ে কুঁজো হয়ে ক্লাসে ঢোকা, ইত্যাদি ইত্যাদি। শিশুদের বইয়ের বোঝা বইবার বিষয়টি অমানবিক হলেও কারও তাতে মাথাব্যথা নেই। ফলে লেখাপড়া শিশুদের কাছে বিষাদময় রূপ ধারণ করছে। তাছাড়া পড়াশোনার চাপ বাড়তে বাড়তেও সেটা দুঃসহ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। শিশুরা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বইয়ের ভার বহন করে তারা মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার মতো মারাত্নক ঝুঁকির মধ্যে যাচ্ছে।সেই ক্ষেত্রে বাংলা মিডিয়াম স্কুল গুলোর চিত্র এতো ভয়াবহ নয়।
আলোচকরা আরও বলেন বাংলাদেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মানেই লক্ষাধিক টাকা দিয়ে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করা এবং চৌদ্দ-পনের হাজার টাকা মাসিক বেতন দেওয়া। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ভর্তি, সেশন ফি ও মাসিক বেতন শুধু বেমানান বললে ভুল হবে, এটা রীতিমতো নির্যাতন। এটা সম্ভব হচ্ছে এসব স্কুলের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে। সেই ক্ষেত্রে বাংলা মিডিয়াম স্কুল গুলোতে এসব অভিযোগ অনেক কম।
দেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো সরকারের নিয়ম-নীতির ধার ধারে না। বলা যেতে পারে যে, সরকারও পুরোপুরি নির্বিকার। সরকারি নীতিমালা না থাকায় স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে বলারও কিছু নেই। এগুলো চলছে মর্জিমাফিক। ইচ্ছেমতো টিউশন ফি আদায় করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধন বাধ্যতামূলক মনে করছে না। ভাড়াবাড়িতে স্কুল বসিয়ে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াতে গিয়ে অভিভাবকরা যত বাধার সন্মুখীন হন না কেন, এর প্রতিকার নেই। কারণ শিক্ষা প্রশাসন এর কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না।
স্কুলটির অধ্যক্ষ নাজমা আরিফ বলেন ইনডেপেন্ডেন্ট স্কুল এসব স্কুলের মত শিক্ষাদান বা আচরন করেনা। আমরা বাংলা মিডিয়াম হলেও দেশের অন্যান্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের চেয়ে পিছিয়ে নেই। ইনডেপেন্ডেন্ট স্কুল গতানুগতিক বাংলা মিডিয়াম স্কুলের পাঠদান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা আঙ্গিকের স্কুল। আমাদের স্কুলের ছাত্রদের স্কুল পিরিয়ডের পর টিচিং করলেও আমরা মাসিক বেতনের বাহিরে আলাদা কোন কোচিং ফি নিয়ে থাকিনা।
উক্ত অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এর পরিচালক সৈয়দ জাফর আলি (ডেপুটি ডিরেক্টর, শিক্ষা মন্ত্রনালয়), আজাদ হোসাইন চৌধুরী (ডেপুটি ডিরেক্টর, শিক্ষা মন্ত্রনালয়), সাবেক সচিব ডাঃ চৌধুরী মোহাম্মদ বুলবুল হোসাইন, ব্যারিস্টার লিয়াকত আলি খান, সাংবাদিক একেএম শরিফুল ইসলাম খান, স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারমান আরিফ মোতাহার এবং স্কুলটির অধ্যক্ষ নাজমা আরিফ। এছাড়া ইনডেপেন্ডেন্ট স্কুলের শিক্ষক ছাত্রছাত্রী অভিবাবক গন। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভর্তিচ্ছু বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবক গন।