শিরোনাম
◈ শাপলা প্রতীক পাচ্ছে না এনসিপি ◈ তফসিলের আগেই একক প্রার্থী ঘোষণা প্রস্তুতি, ৮৭ আসনে বিশেষ নজর বিএনপির ◈ ৪০ হাজার বডিক্যাম কেনা হচ্ছে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় : অর্থ উপদেষ্টা ◈ প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধ কলকাতা, ৪ জনের প্রাণহানি ◈ ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে সংলাপ শুরু করতে চায় ইসি ◈ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে  জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে : প্রধান উপদেষ্টা ◈ আসন্ন নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেয়নি বিএনপি: রিজভী ◈ উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ারে ভারতে পৌঁছাল আফগান কিশোর ◈ নিউইয়র্কের পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুলের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ নিউইয়র্কে আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ: এনসিপির নিন্দা ও তিন দফা দাবি

প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০২:১৬ দুপুর
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০২:৩৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তফসিলের আগেই একক প্রার্থী ঘোষণা প্রস্তুতি, ৮৭ আসনে বিশেষ নজর বিএনপির

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি। তফশিলের আগেই ৩০০টির মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেওয়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে প্রার্থী নির্ধারণে নির্ভার দলটি এবার ৮৭টি আসনের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। 

বিগত সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে, এসব আসনে অধিকাংশ জায়গায় কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগসহ তিনটি দলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এখন দৃশ্যপটে নেই আওয়ামী লীগ। তাই ধানের শীষে ভোট টানতে দেখেশুনে এলাকার জনপ্রিয় নেতাদের প্রার্থী করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে আসনগুলোতে ইতোমধ্যে প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, যশোর, সাতক্ষীরা, জামালপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বাগেরহাটের মোট ৮৭টি আসনকে বিএনপি বেশি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এসব আসনে অন্য দলের দুর্গ ভাঙতে চায় দলটি। এরই অংশ হিসাবে নিজ নিজ নির্বাচনি আসনের ক্ষেত্রে নানা হিসাব-নিকাশ করে প্রার্থী বাছাই করা হবে। বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতামত। এছাড়া সাধারণ মানুষের চাওয়াকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাই সেখানে প্রার্থী হবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে বলেন, দলের নিজস্ব প্রাথমিক জরিপে দেখা যায় ৩শ আসনেই বিএনপির অবস্থা অনেক ভালো। তারপরও বিশেষ কিছু আসন আছে, সেখানে একক প্রার্থী ঠিক করা ও প্রচারণার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হবে। ওইসব এলাকায় ইতোমধ্যে ধানের শীষের পক্ষে বার্তা নিয়ে ভোটারদের ‘ডোর টু ডোর’ পৌঁছানো শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ময়মনসিংহ-১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স যুগান্তরকে বলেন, সাংগঠনিক নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের সব উপজেলা ও পৌরসভায় ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপির নির্বাচনি কর্মকাণ্ড পরিচালনা হচ্ছে। সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজ যেমন করছি, একই সঙ্গে ভোটারদের ‘ডোর টুর ডোর’ যাচ্ছি। ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছি। কারণ যারা দৃশ্যমান প্রতিপক্ষ তারা তো নির্বাচনি মাঠে নেমে গেছে, তাদের প্রতীকের কথা বলছে। তাই আমাদেরও তো ধানের শীষের কথা বলতে হবে। নির্বাচনি কাজ শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু আসনের কৌশল একটু ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক।

১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (ফলাফল) পরিসংখ্যান বলছে, রংপুরের ৬টি আসন (এর মধ্যে ৪টি পেয়েছিল জাতীয় পার্টি, ২টি আওয়ামী লীগ), কুড়িগ্রামের ৪টি আসন (এর মধ্যে ৪টিই পেয়েছিল জাতীয় পার্টি), গাইবান্ধার ৫টি আসন (এর মধ্যে ৫টিই পেয়েছিল জাতীয় পার্টি), নীলফামারীর ৪টি আসন (৩টি জাতীয় পার্টি, ১টি জামায়াত), যশোরের ৬টি আসন (৬টিই আওয়ামী লীগ), সাতক্ষীরার ৫টি আসন (৩টি আওয়ামী লীগ, ১টি জামায়াত ও ১টি জাতীয় পার্টি), জামালপুরের ৫টি আসন (৫টিই আওয়ামী লীগ), ময়মনসিংহ ১১টি আসন (এর মধ্যে ময়মনসিংহ ১, ৩ ও ৫ আসনে বিএনপি ছাড়া বাকি ৭টি আওয়ামী লীগ, ১টি জাতীয় পার্টি), কিশোরগঞ্জ ৭টি আসন (কিশোরগঞ্জ ২ ও ৬ আসন বিএনপি ছাড়া বাকি সব আসন পায় আওয়ামী লীগ), গাজীপুরের ৪টি আসন (৪টিই আওয়ামী লীগ), রাজবাড়ী ২টি আসন (২টিই আওয়ামী লীগ), গোপালগঞ্জ ৩টি (৩টিই আওয়ামী লীগ), মাদারীপুর ৩টি (৩টিই আওয়ামী লীগ), শরীয়তপুর ৩টি আসন (এর মধ্যে ৩টিই আওয়ামী লীগ), সুনামগঞ্জ ৫টি আসন (এর মধ্যে ৩টি আওয়ামী লীগ, ১টি জাতীয় পার্টি, ১টি বিএনপি), হবিগঞ্জ ৪টি (এর মধ্যে ৩টি আওয়ামী লীগ ও ১টি জাতীয় পার্টি), ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৬টি (এর মধ্যে ৪টি আওয়ামী লীগ ও ২টি বিএনপি), বাগেরহাটে ৪টি (এর মধ্যে ৪টিই আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে)।

২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের পাশাপাশি অংশ নেয় ইসলামী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট বাংলাদেশের একটি স্বল্পস্থায়ী রাজনৈতিক জোটও। ২০০১ সালে গঠিত এ জোটটি ওই বছরের সংসদ নির্বাচনে তিনটি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জোটের একটি ছিল। এর নেতৃত্বে ছিল জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশ (বর্তমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) ও কিছু ছোট দল এই জোটের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলাফলে দেখা গেছে, রংপুরের ৬টি আসন (এর মধ্যে ৬টিই পেয়েছিল জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট), কুড়িগ্রামের ৪টি আসন (এর মধ্যে ৪টিই পেয়েছিল জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট), গাইবান্ধার ৫টি আসন (বিএনপি ২টি এবং আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১টি করে আসন পায়), নীলফামারীর ৪টি আসন (২টি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত ১টি করে আসন পায়), যশোরের ৬টি আসন (বিএনপি ও চারদলীয় জোট ৪টি এবং আওয়ামী লীগ ও জামায়াত ১টি করে আসন পায়), সাতক্ষীরার ৫টি আসন (৩টি জামায়াত এবং বিএনপি ও চারদলীয় জোট পায় ১টি করে)। জামালপুরের ৫টি আসন (৩টি বিএনপি ও ২টি আওয়ামী লীগ পায়), ময়মনসিংহ ১১টি আসন (এর মধ্যে ৫টি আসনে আওয়ামী লীগ, ৫টি আসনে বিএনপি ও একটি স্বতন্ত্র পায়), কিশোরগঞ্জ ৭টি আসন (৫টি পায় আওয়ামী লীগ ও ২টি বিএনপি), গাজীপুরের ৪টি আসন (এর মধ্যে ৩টি আওয়ামী লীগ ও ১টি বিএনপি), রাজবাড়ী ২টি (২টিই বিএনপি), গোপালগঞ্জ ৩টি (৩টিই আওয়ামী লীগ), মাদারীপুর ৩টি (৩টিই আওয়ামী লীগ), শরীয়তপুর ৩টি আসন (২টি আওয়ামী লীগ, ১টি স্বতন্ত্র), সুনামগঞ্জ ৫টি আসন (৩টি বিএনপি, ২টি আওয়ামী লীগ), হবিগঞ্জ ৪টি (৪টিই আওয়ামী লীগ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৬টি (৩টি বিএনপি, ২টি চারদলীয় জোট ও একটি আওয়ামী লীগ), বাগেরহাট-৪টি (২টি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত ১টি করে আসন)।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (ফলাফল) পরিসংখ্যান বলছে, রংপুরের ৬টি আসন (এর মধ্যে ৩টি পেয়েছিল জাতীয় পার্টি, ৩টি আওয়ামী লীগ), কুড়িগ্রামের ৪টি আসন (৩টি জাতীয় পার্টি ও একটি আওয়ামী লীগ), গাইবান্ধার ৫টি আসন (৩টি আওয়ামী লীগ ও ২টি জাতীয় পার্টি), নীলফামারীর ৪টি আসন (২টি আওয়ামী লীগ, ২টি জাতীয় পার্টি), যশোরের ৬টি আসন (৬টিই আওয়ামী লীগ), সাতক্ষীরার ৪টি আসন (২টি আওয়ামী লীগ, ২টি জাতীয় পার্টি), জামালপুরের ৫টি আসন (৫টিই আওয়ামী লীগ), ময়মনসিংহ ১১টি আসন (১১টিই আওয়ামী লীগ), কিশোরগঞ্জ ৬টি আসন (৫টি আওয়ামী লীগ ও ১টি জাতীয় পার্টি), গাজীপুরের ৪টি আসন (৪টিই আওয়ামী লীগ), রাজবাড়ী ২টি (২টিই আওয়ামী লীগ), গোপালগঞ্জ ৩টি (৩টিই আওয়ামী লীগ), মাদারীপুর ৩টি (৩টিই আওয়ামী লীগ), শরীয়তপুর ৩টি আসন (৩টিই আওয়ামী লীগ), সুনামগঞ্জ ৫টি আসন (৪টি আওয়ামী লীগ, ১টি জাতীয় পার্টি), হবিগঞ্জ ৪টি (৪টি আওয়ামী লীগ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৬টি (এর মধ্যে ৪টি আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি ও জাসদ ১টি করে), বাগেরহাট ৪টি (৪টিই আওয়ামী লীগ)।

বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার মতে, দশম সংসদ নির্বাচন একতরফা হয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচন দিনের ভোট রাতে হয়েছে এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও একতরফা হয়েছে। তাই এর আগের সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিএনপি পর্যালোচনা করেছে। কোন কোন নির্বাচনি এলাকায় বেশি মনোযোগ দিতে হবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেভাবেই দলের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন।

এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের মতে, যেসব এলাকায় সাধারণত আওয়ামী লীগের ভোটার বেশি ছিল, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী তো বিএনপির ধানের শীষই ছিল। আগে যেসব এলাকায় অন্যদের কাছে হেরেছিল, সেগুলোকে বিএনপি বেশি গুরুত্ব দেবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। এই কৌশল অবশ্যই ঠিক আছে। এর ভালো ফলও পাবে। তবে এখন তো ভোটের অনেক চরিত্র পরিবর্তন হয়েছে। সে কারণে গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের কিন্তু একটা মনোভাব বা চরিত্র রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। উৎস: যুগান্তর।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়