মনিরুল ইসলাম: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, এই সরকার কি আসলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে চলছে? তিনি দাবি করেন, এনসিপি নেতারা সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন, যা দেখে এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক।
শুক্রবার বিকেলে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশটি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও শহীদদের স্মরণে আয়োজন করা হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, “সরকারের অবস্থা এমন হয়েছে যে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পচে গেছে। আমি ধারনা করছি, এই সরকার হয়তো এনসিপির সরকার। কারণ, তারা যেখানে যান, সেখানে সরকারি প্রটোকল, পুলিশ, বিডিআর, আর্মির গার্ড, এমনকি সার্কিট হাউসও ব্যবহার করেন। অথচ আমরা, যারা একসময় মন্ত্রী ছিলাম, মেয়র ছিলাম, সেই সুযোগ পাই না।”
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সরকারের বয়স ১০-১১ মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তারা স্বৈরাচারী দোসরদের কাউকে বিচার করতে পারেনি। অনেক অপরাধী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, অথচ সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। ১০ মাসে একজন গর্ভবতী মা সন্তান জন্ম দেয়, আর আপনারা পারেননি একটি নতুন ব্যবস্থার জন্ম দিতে!”
তিনি আরও বলেন, “এই সময়ের মধ্যে কেউ কেউ টাকার কুমিরে পরিণত হয়েছে। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে যারা ভোগ করছে, তারা যেন ভুলে না যায়, সেই রক্ত তারা পান করছে।”
মির্জা আব্বাস প্রশ্ন তোলেন, “কেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা এখনো সরকারের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাচ্ছে না?”
বিএনপির বিরুদ্ধে মন্তব্য করা কিছু নেতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “ঐক্যমঞ্চের আলোচনার পর কিছু নেতা আমাদের নিয়ে কটাক্ষ করেন। তারা এমনভাবে কথা বলেন যেন তারা সব জানেন, অথচ ৫ আগস্টের আগে কেউ তাদের চিনতই না। আমরা ১৭ বছর ধরে মাঠে আছি, কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আমি বলব—১৭ বছর জেলে ছিলাম, আন্দোলনে ছিলাম। শেখ হাসিনার পতন একদিনে হয়নি।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, “নির্বাচন এই আন্দোলনের ফসল। শুরু থেকেই আমরা নির্বাচনের কথা বলে আসছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন ছাড়া দেশ কীভাবে চলবে? নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি কেন? ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’। আমি সন্দেহ করি, নির্বাচনী ঘোষণার আড়ালে কোনো ষড়যন্ত্র আছে।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। যদি প্রয়োজন হয়, আরও ১৭ বছর আন্দোলন করতেও প্রস্তুত আছি।”
নির্বাচনপ্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান মির্জা আব্বাস।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন। বক্তব্য রাখেন—চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, মীর আলী নেওয়াজ, ইশরাক হোসেন, দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবীসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।