শিরোনাম
◈ বিশ্বকাপ বাছাই‌য়ে আগামী জু‌নে চিলি ও কলম্বিয়ার মু‌খোমু‌খি আ‌র্জেন্টিনা ◈ পা‌কিস্তান সফ‌রের আ‌গে আরব আমিরাতের স‌ঙ্গে দু‌টি টি-‌টো‌য়ে‌ন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ◈ উ‌য়েফা কনফারেন্স লিগে সুই‌ডিশ ক্লাব‌কে উ‌ড়ি‌য়ে দি‌লো চেলসি ◈ আজাদ কাশ্মীরের বাসিন্দাদের দুই মাসের খাবার মজুদের নির্দেশ ◈ দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন জোবাইদা রহমান, নিরাপত্তা চেয়ে আইজিপিকে চিঠি ◈ যদি কিন্তু ছাড়াই আ.লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ ◈ অনিশ্চয়তায় ভারত ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর ◈ বিচার চলাকালীন আইন করে আ. লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে: নাইদ ইসলাম (ভিডিও) ◈ ফজলুর রহমানের বক্তব্য সরকার সমর্থন করে না: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ◈ আদানির বকেয়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমিয়েছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ০২ মে, ২০২৫, ০৯:৫৯ সকাল
আপডেট : ০২ মে, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দাবিতে সরকারকে চাপে রাখতে শ‌নিবার ঢাকায় সমা‌বেশ হেফাজতের

এল আর বাদল: নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে আগামী শনিবার ঢাকায় মহাসমাবেশ করতে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটি এই সমাবেশের মাধ্যমে শোউন করতে চাইছে, দেখাতে চাইছে বড় জমায়েত। -- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

সারাদেশ থেকে লোক জমায়েত করতে সংগঠনটির বেশ তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে। এরমধ্যেই শীর্ষ নেতারা দেশের বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক সফর করেছেন। উদ্দেশ্য শনিবারের মহাসমাবেশে ঢাকায় লোক সমাগম ঘটানো।

হেফাজত এমন এক সময়ে 'বড় কর্মসূচি' নিয়েছে, যখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা মেরুকরণ ঘটছে। হেফাজতের নেতৃত্বের বেশিরভাগই বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতা।

ফলে হেফাজতের কর্মসূচির পেছনে রাজনীতি আছে কি-না সেই প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনি দাবি আদায়ে মহাসমাবেশের মতো কর্মসূচি দেওয়ার প্রয়োজন হলো কেন- সেই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।

যদিও হেফাজত বলছে, 'কর্মসূচির পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই'। এখান থেকে ইসলামী দলগুলোর কোন রাজনৈতিক অভিপ্রায় দেখছি না আমি। বলেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।

--- কর্মসূচির দিয়ে হেফাজত কী আদায় করতে চায়?--

হেফাজতে ইসলামের নেতারা মহাসমাবেশের মতো কর্মসূচির কথা প্রথম ভাবতে থাকেন গত রমজানে। তখন রমজান মাসের শেষ দিকে ঢাকায় বৈঠকে বসেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

যেখানে মূল ইস্যু ছিলো, সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের নামে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং 'শাপলা চত্বরে গণহত্যার' বিচার। এছাড়া সংবিধানে বহুত্ববাদের পরিবর্তে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহালের কথাও বলা হয়। উঠে আসে ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম নির্যাতন প্রসঙ্গ।

সেই বৈঠকেই মূলত: মামলা প্রত্যাহার এবং 'শাপলা চত্বরে গণহত্যার' ঘটনায় বিচার দাবি করে সরকারের উপর একধরণের চাপ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।

কারণ হেফাজত নেতারা মনে করেন, তাদের মামলা প্রত্যাহার কার্যক্রমে 'যথেষ্ট গতি নেই'। তখন থেকেই হেফাজতের এই সমাবেশ আলোচনা তৈরি করে। কারণ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ আছে।

মামলাসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ আইন উপদেষ্টার সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠকের কথাও প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমগুলোতে। কিন্তু এর মধ্যেই মামলা প্রত্যাহারের জন্য সমাবেশ করে সরকারকে চাপ দেয়ার প্রয়োজন কেন পড়লো?

জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বিবিসি বাংলাকে বলেন, মামলা প্রত্যাহার পিছিয়ে গেলে নির্বাচনের পর নতুন যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা এসব মামলাগুলোকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

তিনি বলেন, "আমরা সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ সরকার তো ইতোমধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তো নির্বাচনের আবহ তৈরি হলে আমাদের মামলাগুলো প্রত্যাহার হবে না। আমরা একটা রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে পড়ে যাবো। সরকার তো অনেকের হাজারো দাবি মানছে, তাহলে আমাদের দাবি মানতে সমস্যা কোথায়?

নির্বাচিত সরকার চলে আসার পর তখন তো বিশ্বাস করা যাবে না যে, তারা কখন কোন দেশের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে শুরু করে দেয়। আমাদের আশঙ্কা, তেমনটা হলে তখন এই মামলাগুলো আর প্রত্যাহার করা হবে না। তখন এই মামলাগুলো রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার সম্ভাবনা আছে।" এ কথা বিবিসি বাংলাকে বলেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী

--- হেফাজত কেন কমিশনকেই বাতিল করতে বলছে?--

হেফাজত শুরুতে মামলা প্রত্যাহোরের মতো বিষয়গুলো সামনে আনলেও মহাসমাবেশের পরিকল্পনা গতি পায় চলতি এপ্রিলের শেষ দিকে। এই সময়ে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন তুলে দেয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তার প্রতিবেদন দেয়ার পরপরই এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেয় ইসলামপন্থী দলগুলো। তৎপর হয় হেফাজতে ইসলামও।

সংগঠনটির মহাসমাবেশ কর্মসূচির প্রথম দফা দাবি হিসেবেই তুলে ধরা হয় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও এর প্রতিবদন বাতিলের বিষয়। দ্বিতীয় দফায় দাবিতে বলা হয়, সংবিধানে বহুত্ববাদের পরিবর্তে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করতে হবে।

তৃতীয় দফায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সকল মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডসহ সকল গণহত্যার বিচার চাওয়া হয়।

সবশেষ চতুর্থ দফা দাবিতে তুলে ধরা হয় ফিলিস্তিন ও ভারতে 'মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের' কথা। এই চার দফা দাবি নিয়ে সংগঠনটির নেতারা ইতোমধ্যেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলার মাদ্রাসাগুলোতে সফর করেছেন।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মহাসমাবেশ সফল করার দিক নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি লোক জমায়েতেরও তাগিদ দিয়েছেন তৃণমূলে।

এই প্রক্রিয়ায় বড় বিষয় হয়ে উঠেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন। যেখানে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার, বহুবিবাহ বন্ধের প্রস্তাব, যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি, বিভিন্ন বিষয়ে নারী-পুরুষ সমান অধিকার দেওয়ার মতো প্রস্তাবগুলোকে 'ইসলামবিরোধী' হিসেবে দেখছেন হেফাজত নেতারা।

হেফাজতে ইসলামের আরেক শীর্ষ নেতা, সংগঠনটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, তার ভাষায়, ইসলাম বিরোধী হওয়ার কারণে তারা কমিশনকেই বাতিল চান।

উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে ছেলেকে মেয়ের তুলনায় দ্বিগুণ সম্পত্তি এবং মেয়েকে ছেলের তুলনায় অর্ধেক সম্পত্তির যে বিধান আছে, এই বিধানকে তারা পরিবর্তন করার দাবি জানাচ্ছে। এটা তো সরাসরি কোরআন বিরোধী অবস্থান। ইসলামে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ কিন্তু তারা একে শ্রমিকের স্বীকৃতি দিতে বলছেন। তাদের পুনর্বাসন না করে স্বীকৃতি দিলে এটা তো আরও উৎসাহিত হবে।

"এরকম বিভিন্ন প্রস্তাব আছে সেখানে, যেগুলো কোরআন এবং ইসলাম বিরোধী। ফলে এ ধরনের প্রস্তাব থাকার কারণে এই প্রতিবেদন বাতিল, এটাকে প্রত্যাখান করা এবং এ ধরণের প্রস্তাবনার দায়ে কমিশনকেও বাতিল করতে হবে। এটাই আমাদের দাবি" বলেন মামুনুল হক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়