আমিনুল ইসলাম: আমি সাঁতার জানি না। সেলাই করতে পারি না। এমন আরও ছোটখাটো অনেককিছু আমি জানি না। আমার সহকর্মীরা যখন জিজ্ঞেস করেÑ এটা কী করে সম্ভব? তুমি স্কুলে এসব শেখোনি? তখন আমি চুপ করে থাকি। আমার সংকোচ হয় বলতে, আমাদের স্কুলে এসব শেখায় না। আমি তো ঢাকা শহরের নামকরা স্কুল-কলেজগুলোতে পড়েছি। কখনো এসব শেখায়নি। সম্প্রতি গিয়েছিলাম সহকর্মীদের সঙ্গে উইন্টার ক্যাম্পে। ওরা কতো সহজে তাঁবু টানিয়ে ফেলেছে মাইনাস ১৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। অথচ আমি জানিই না এটা কীভাবে টানাতে হয়। কেউ তো কোনোদিন শেখায়নি।
চারদিকে শ্বেতশুভ্র তুষার। সেই সঙ্গে বালটিক সমুদ্র থেকে ভেসে আসা বাতাস। এর মাঝে একটা তাঁবু হালকা ছিঁড়ে গিয়েছে। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেলাই করার। আমি বললাম, আমি তো সেলাই করতে জানি না। ওরা আবারও অবাক হলো। আমি গাড়ি চালাতে পারি। অথচ সাইকেল চালাতে পারি না। এটা শুনেও ওরা অবাক হয়। কারণ ওদের স্কুলে এসব শেখায়। বাচ্চাদের ওরা সাঁতার শেখাতে নিয়ে যায়। সাইকেল চালাতে শেখায়। কীভাবে কঠিন পরিস্থিতে বেঁচে থাকতে হয়, সব শেখায়। ওরা তাঁবু টানাতে জানে। সেলাই জানে। রান্না করতে জানে। এসব কিছু ওরা এমনি এমনি জানে না। জগতের কোনো দেশের পুরুষ মানুষই এসব করতে চায় না। কিন্তু ওদের এসব স্কুলে শিখিয়ে দেওয়া হয় একদম বাচ্চা বয়সে। যেই বয়সের শিক্ষা আর কখনো মানুষ ভুলে না। আমি মনে করি প্রাইমারি স্কুলে থাকতে সবাইকে এসব শিখিয়ে দেওয়া উচিত।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয়Ñ আমি তো লেখাপড়া ছাড়া আর কিছুই শিখিনি। উচ্চ শিক্ষা, জটিল সমীকরণ কিংবা বিজ্ঞানচর্চা তো সবার জন্য নয়। এটি তো খুব কম মানুষের জন্য। কিন্তু বেঁচে থাকার শিক্ষা। কঠিন পরিস্থিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষা সবার জন্য। এটি সবার জানা উচিত। জ্ঞান-বিজ্ঞান অল্প কিছু মানুষ চর্চা করবে। কিন্তু তার ফলাফল অনেক মানুষ ভোগ করবে। এটাই তো হবার কথা। অল্পকিছু মানুষ বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেছে। আমরা সবাই এর সুফল পাচ্ছি। তেমনি আরো নানান আবিষ্কার আছে। সেগুলো তো লাখ লাখ, কোটি কোটি মানুষ করেনি। দরকারও নেই সেটার। তাই বাস্তব শিক্ষার প্রয়োজন সবার। বিজ্ঞান কিংবা উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন সবার নয়। ফেসবুক থেকে