আহসান হাবিব: ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ কথাটি খুব হাস্যকর। কেননা সাম্প্রদায়িক কথাটার মানেই হচ্ছে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি হুমকি। নিজ সম্প্রদায়ের একজন হওয়া আর সাম্প্রদায়িক হওয়া ভিন্ন বিষয়। একজন মানুষ মুসলমান কিংবা একজন হিন্দু কিংবা খ্রিস্টান কিংবা ইহুদি কিংবা অন্য যেকোনো ধর্মের হতে পারে এবং নিজ নিজ ধর্মের প্রথা সে পালন করবে, তা কোনো সমস্যার বিষয় নয়। সমস্যা হয় তখনই যখন সে নিজ সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাববে এবং এটা প্রতিষ্ঠার জন্য একে অপরকে নির্মূল করার চেষ্টা করবে। এই চেষ্টা আর কিছুই নয়Ñ সংঘর্ষ, দাঙ্গা এবং পরিণামে রক্তপাত। আব্রাহামিক তিনটি ধর্মের উদ্ভবের পর থেকে পরস্পর যে হানাহানি চলছে, তা কি একদিনের জন্য থেমেছে? থামেনি, তাহলে তাদের মধ্যে সম্প্রীতি আসে কী করে?
প্রতিটি ধর্ম একে অপরের শত্রু। যেকোনো ছুতায় তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাদের নিজ নিজ ধর্মের মধ্যেই এই নির্দেশনা আছে। আবার তাদের নিজ ধর্মের মধ্যেও আছে নানা বিভক্তি এবং একে অপরকে দু’চোক্ষে দেখতে না পারার ইতিহাস। তাহলে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা হয় কী করে? অতীতে হয়নি, এখন কিংবা ভবিষ্যতেও হবে না। কারণ ধর্ম মানুষকে সাম্প্রদায়িক বানায়। ধর্মের কাজই সাম্প্রদায়িক চেতনায় শানিয়ে তোলা। যে মানুষটি শুধু ধর্ম কর্ম করে, এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করে না, সেও সাম্প্রদায়িক। কারণ সেও মনে মনে নিজ ধর্মকে সেরা ভাবে এবং অন্য ধর্মের লোকদের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব লালন করে। তাহলে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ কথাটা আসে কী করে? দরকার রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া। ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। ধর্মকে ব্যক্তিগত বিষয়ে পরিণত করা। তাহলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সহাবস্থান সম্ভব হতে পারে। তার আগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নামে আন্দোলন পরিহাসের মতো শোনাবে। লেখক: ঔপন্যাসিক