ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল: কৃমি নিয়ে আমাদের মধ্যে নানা ধরনের উপকথা বা মিথ প্রচলিত আছে। অনেকে বলেন, কৃমির ওষুধ দিনে খাওয়া ঠিক নয়, রাতে খেতে হয়, ঠাণ্ডার সময় কৃমির ওষুধ খেতে হয়, গড়মে খেলে সমস্যা, মিষ্টি জাতীয় খাবারের সঙ্গে খেতে হয়, খালি পেটে খাওয়া যায় না ইত্যাদি। মূলত কৃমির ওষুধের সঙ্গে এসকল প্রশ্নের কোনো যোগসূত্র নেই। কৃমির ওষুধ দিনে না রাতে খাবেন, ঠাণ্ডা না গরম পরিবেশে খাবেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কৃমির ওষুধ খেলে যে শরীর গরম হয়ে যাবে বা গরম পরিবেশে খেলে শরীরে কোনো পাশর্^প্রতিক্রিয়া হবে বা শরীরের কোনো ক্ষতি হবে তা নয়। আধুনিক কালে কৃমির ওষুধের পাশর্^প্রতিক্রিয়া খুবই কম। অনেকেই বলেন, কৃমির ওষুধের সঙ্গে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে ভালো; আসলে এ কথাটিরও কোনো ভিত্তি নেই। তবে আহারের পরে কৃমির ওষুধ খাওয়াটা একদিক থেকে ভালো। কারণ তখন আমাদের খাবারের ফ্যাটগুলো কৃমির ওষুধকে শোষণ করতে সাহায্য করে। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এছাড়া খাওয়ার সঙ্গে কৃমির ওষুধের তেমন আর কোনো সম্পর্ক নেই।
অনেকেই প্রশ্ন করেন, কৃমির ওষুধ কতোদিন পর পর খাবো? বৈজ্ঞানিকভাবে ছয় মাস পরপর কৃমির ওষুধ খাওয়ার কথা বলে। তবে আমরা পরিস্থিতি বিচারে চার-মাস পরপর কৃমির ওষুধ খেতে পারি। তবে কৃমির ওষুধ খাওয়ার সময় পরিবারের সবাই একসঙ্গে খেলে ভালো। তার কারণ হলো, আপনি নিজেকে কৃমিমুক্ত করার সময় ভাবতে হবে পরিবারের অন্যদের পেটেও কৃমি থাকতে পারে এবং সেখান থেকে আবার আপনি কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই পরিবারের সকলে একসঙ্গে কৃমির ওষুধ খেলে কৃমির পক্ষে আপনার বাড়িতে অবস্থান করা কঠিন হয়ে যাবে।
সাধারণত কৃমির ওষুধ দুই ডোজ খেতে হয়। অর্থাৎ আজকে এক ডোজ খেলে আবার সাত বা চৌদ্দ দিন পর আরেক ডোজ। কারণ আজকে যে কৃমিগুলো ডিম আকারে আছে, সাত থেকে চৌদ্দদিন পর সেগুলো বড় কৃমিতে পরিণত হতে পারে। তাই দুই ডোজে যদি আমরা কৃমির ওষুধ খাই তাহলে সবচেয়ে ভালো ফল পাই।
বিভিন্ন ধরনের কৃমির ওষুধ আমাদের দেশে পাওয়া যায়Ñ কোনটি কার জন্য প্রযোজ্য সেটি চিকিৎসক আপনাকে ঠিক করে দেবেন। কৃমি থেকে খুব সাবধান থাকতে হবে। কারণ কৃমি থেকে অনেক রোগ হতে পারে। যেমন আয়রন ডেফেসিয়েন্সি অ্যানেমিয়া। কৃমি আমাদের খাবারের নালী বা অন্ত্রে একধরনের ক্ষত সৃষ্টি করে। সেই ক্ষত থেকে খুবই নীরবে বা অদেখা রক্তক্ষরণ হয়, যেটি আমরা বুঝতে পারি না। কিন্তু দীর্ঘদিন রক্তক্ষরণ হতে হতে অনেকের আয়রন ডেফেশিয়েন্সি অ্যানেমিয়া হয়ে যায়। আমাদের দেশের রক্তস্বল্পতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো কৃমি। তাই, কৃমিকে খুব হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।
পরিচিতি : রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। শ্রুতিলিখন : জান্নাতুল ফেরদৌস