শিরোনাম
◈ কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ ◈ মেয়র হিসেবে শপথ নিতে হাইকোর্টে ইশরাক হোসেনের রিট ◈ ঐকমত্য না হওয়া বিষয়গুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে: আলী রীয়াজ ◈ রপ্তানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, মার্কিন বাজারে প্রবেশে বাংলাদেশের জন্য কঠিন সময়: জাতিসংঘের সতর্কবার্তা ◈ চট্টগ্রাম বন্দর কাউকে দিচ্ছি না: প্রেস সচিব (ভিডিও) ◈ এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে কর্মবিরতি: কার্যত অচল আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবন ◈ সালাহউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে যে পোস্ট দিলেন প্রেসসচিব ◈ পর্দার আড়ালে যা ঘটেছে! ◈ চরম গরমে স্বস্তি আনতে হজ রুটে ঠান্ডা ও রাবারযুক্ত রাস্তা চালু করলো সৌদি আরব ◈ মেসি জাদুতে হার এড়ালো ইন্টার মায়ামি

প্রকাশিত : ০৩ জুলাই, ২০২৩, ০১:২৪ রাত
আপডেট : ০৩ জুলাই, ২০২৩, ০১:২৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিসিএস এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারের ব্যবস্থাপনা

এম আমির হোসেন

এম আমির হোসেন: বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় পাস করে ডাক্তাররা সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত হয়। তারপর একেকজন একেকদিকে চলে যায়। কেউ কাক্সিক্ষত বিষয়ে পোস্টগ্রাজুয়েশন করতে পারে, কেউ পারে না। সঙ্গত কারণেই এ ক্যাডারটি বেশ বড়। তাই এ ক্যাডারের ম্যানেজমেন্টও বেশ কঠিন। বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারটিকে ভেঙে ক্লিনিক্যাল, মেডিকেল এডুকেশন এবং মেডিকেল এডমিনিস্ট্রেশন এই তিন ভাগে ভাগ করে ফেলা দরকার। শুরুতে ভাগ করে নিলে ভালো, অন্যথায় ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতির পর আর ট্র্যাক চেইঞ্জ করা যাবে না এমন বিধানও করা যেতে পারে। 

বিসিএস (ক্লিনিক্যাল)-এ যারা যাবে তারা প্রচলিত ক্লিনিক্যাল সাবজেক্ট যেমন মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ইত্যাদি বিষয় কিংবা এদের শাখাসমূহে পোস্টগ্রাজুয়েশন করবে এবং পর্যায়ক্রমে মেডিকেল অফিসার থেকে কনসালট্যান্ট/সহকারী অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালট্যান্ট/সহযোগী অধ্যাপক, চিফ কনসালট্যান্ট/অধ্যাপক হিসাবে প্রমোশন পাবে। ডিগ্রি না হলে মেডিকেল অফিসার থেকে সিনিয়র মেডিকেল অফিসার/আরএমও, ডিস্ট্রিক্ট মেডিকেল অফিসার, চিফ মেডিকেল অফিসার ইত্যাদি পদে প্রমোশন দিয়ে বেতনের প্রতিটি গ্রেডে পৌঁছানোর সুযোগ রাখতে হবে। যাদের দীর্ঘমেয়াদি ডিগ্রি (এফসিপিএস/এমডি/এমএস বা সমমান) থাকবে, অভিজ্ঞতা থাকবে এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রকাশনা থাকবে তারাই কেবল স্কোরিং সিস্টেমের মাধ্যমে একাডেমিক সেক্টর(সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক)-এ পদায়িত হবে। অন্য ডিগ্রিধারীরা কনসালট্যান্ট হবে। ক্লিনিক্যাল ক্যাডারের কর্মকর্তারা ইন্সটিটিউশনাল প্রাকটিস করবে। এটি সম্মানজনক ভাবে করার সুযোগ করা না গেলে প্রাইভেট প্রাকটিসের সুযোগও রাখতে হবে। সরকারি হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসার কনসেপ্ট বদলাতে হবে। রোগী সবধরনের সেবার জন্য চিকিৎসককে সরকার-নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করবে, অতি-দরিদ্র হলে রাষ্ট্র ভর্তুকি দেবে। এজন্য অতি-দরিদ্র শ্রেণিকে ভালনারেবল গ্রুপ হেলথ (ভিজিএইচ) কার্ড দেওয়া যেতে পারে।

বিসিএস (মেডিকেল এডুকেশন) ক্যাডারের ডাক্তাররা মূলত নন-ক্লিনিক্যাল (প্রি এন্ড প্যারা-ক্লিনিক্যাল) সাবজেক্টে পোস্টগ্রাজুয়েশন করবে এবং প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি পাবে। অই সাবজেক্টগুলোর ডাক্তাররা পোস্টগ্রাজুয়েশন করার সুযোগ না পেলেও বিভিন্ন ধাপের পদবি নির্ধারণ করে আর্থিক সকল ন্যায্য সুবিধা দিতে হবে। তাদেরকে নন-প্রাকটিসিং ভাতা দিতে হবে। ইউজার-ফি'র ব্যবস্থা চালু থাকবে। 

বিসিএস (মেডিকেল এডমিনিস্ট্রেশন) ক্যাডারের ডাক্তাররা হেলথ ম্যানেজমেন্ট,  হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি প্রশাসনিক বিষয়ের উপর পড়ালেখা করবে এবং সহকারী ইউএইচএফপিও, ইউএইচএফপিও, ডেপুটি সিএস, সিএস, ডিরেক্টর, ডিভিশনাল ডিরেক্টর, ডিজিসহ স্বাস্থ্য প্রশাসনের সকল পদে তারা থাকবে। তাদেরও নন-প্রাকটিসিং ভাতা দিতে হবে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় যেমন ক্লিনিক মনিটরিং, ডায়াগনস্টিক মনিটরিং, ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে। বর্তমানে দেশে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার মতো ডাক্তার অনেক থাকলেও স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাপনার অভাব থাকায় নানান জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। হাইলি টেকনিক্যাল এই পেশার ব্যবস্থাপক মেডিকেল ব্যাকগ্রাউন্ডের না হলে এ অবস্থার উন্নতি হবে না কখনও। বিসিএস (মেডিকেল এডমিনিস্ট্রেশন) তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  

বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের একটি বড়ো সমস্যা হলো যথাসময়ে পদোন্নতি না হওয়া। মূল পদ ঠিক রেখে নির্ধারিত ক্রাইটেরিয়া ও সময় অতিক্রম করার পর ব্যাচভিত্তিক ডিপিসি/এসএসবি দ্বারা নিয়মিত পদোন্নতি দিতে হবে। সকল পদোন্নতি হবে মূল পদে। কিন্তু এক্সিকিউটিভ পদ যোগ্যতা অনুসারে ভিন্ন-ভিন্ন হবে। যুগোপযোগী পদ-সোপানও তৈরি করতে হবে। তা নিম্নরূপ (তিন ট্র্যাক) হতে পারে:
১. সহকারী সার্জন (গ্রেড-৯)Ñএমও বা সমমান, আইএমও, ইএমও, রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, প্রভাষক, এসিস্ট্যান্ট ইউএইচএফপিও। ২. সিনিয়র সহকারী সার্জন (গ্রেড-৬)Ñকনসালট্যান্ট, সহকারী অধ্যাপক, আরএমও, ইউএইচএফপিও, ডিসিএস, এডি। ৩. ডেপুটি সার্জন (গ্রেড-৪)Ñসহযোগী অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, সিএস, ডেপুটি ডিরেক্টর। ৪. যুগ্ম সার্জন (গ্রেড-৩)Ñঅধ্যাপক, চিফ কনসালট্যান্ট, ডিরেক্টর। ৫. এডিশনাল সার্জন (গ্রেড-২)Ñসিনিয়র প্রফেসর, অধ্যক্ষ, এডিশনাল ডিজি। ৫. সার্জন জেনারেল (গ্রেড-১)Ñ ডিজি। ডিজি পদের সংখ্যা ন্যূনতম দশ/পনেরোটি হবে। ৬. সিনিয়র সার্জন জেনারেল (সুপারগ্রেড)Ñ সিনিয়র ডিজি।

স্বাস্থ্য সেক্টরের সকল ক্ষমতা স্বাস্থ্য ক্যাডারের অধীনস্থ ‘স্বাস্থ্য ভবন’-এর অধীনে থাকবে। বড়ো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (যেমন, অর্থ, জনপ্রশাসন ইত্যাদি)-সমূহের জেনারেল প্রতিনিধি থাকতে পারে। স্বাস্থ্য ভবন সরাসরি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আন্ডারে থাকবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী 'স্বাস্থ্য ভবন'-এ অফিস করবেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা স্বাস্থ্য ভবন এবং এর অধীনস্থ অফিসসমূহের অধীনে থাকবে। স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রশাসনিক ট্র্যাকের কর্মকর্তারা তা এক্সিকিউট করবে। চেইন অব কমান্ড রক্ষার জন্য নার্সিং অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসনসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্যান্য বিভাগকেও স্বাস্থ্য ভবনের অধীনে আনতে হবে।

বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ঝুঁকিভাতা, পরিবহন ভাতা, নন-প্র্যাকটিসিং ভাতা (প্রশাসনিক ট্র্যাক ও বেসিক সাবজেক্টসের কর্মকর্তাদের জন্য) নিশ্চিতকরণসহ ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ, নিজস্ব হাসপাতাল, ডে-কেয়ার, হাউজিং, ব্যাংকিং, সন্তানদের জন্য ভালো স্কুল, ভর্তিতে অগ্রাধিকার, রেস্ট হাউজে অগ্রাধিকার, জীবনবীমা নিশ্চিত করতে হবে। চাকরিকে সাধারণ চিকিৎসকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।

এ বিষয়গুলো বিবেচনা করা গেলে সরকারি ডাক্তারদের পেশার মানোন্নয়ন হবে এবং জনগণও কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা পাবে। সেবা-দাতা ও সেবা-গ্রহীতা দুই পক্ষই যদি উইন-উইন সিচুয়েশনে না থাকে তবে পুরো ব্যবস্থাপনাই ভণ্ডুল হয়ে যায়। সরকারি ডাক্তারদের পোস্টিং, প্রমোশন, পদোন্নতি, বেতনস্কেলের সর্বোচ্চ গ্রেড প্রাপ্তিসহ অন্যান্য যৌক্তিক দাবিগুলোর সমাধান অব্যবস্থাপনায় রেখে তাদের কাছ থেকে রোগীদের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার আশা করা হাস্যকর নয় কি? মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি মানে স্বাস্থ্যকর জাতিগঠন যা টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। 

লেখক: চিকিৎসক

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়