ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ: তত্ত্ব এবং অনুশীলনে, আরোপিত বাজেটগুলো উপরের নির্দেশনায় নীচের দিক থেকে প্রস্তুত করা হয়, অর্থাৎ সম্পদ কমিটি বাজেট বাস্তবায়নকারীদেও কাছ থেকে বিস্তারিত প্রাক্কলন তথ্য সংগ্রহ না করেই উচ্চ-স্তরের বাজেট (প্রায়শই শুধু মৌলিক সংখ্যা) নির্ধারণ করে। এই মোট সাধারণ লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে তারপর খাতওয়ারী বাজেট বিভাজন করা হয় । অন্যদিকে প্র্রাক্কলিত বা অনুমিত বাজেটগুলো নীচে থেকে তৈরি করা হয়, অর্থাৎ অপারেটিং কর্মীরা বিভিন্ন বিভাগ, কার্যাবলী এবং অন্যান্য উৎস থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। বটম-আপ বাজেটের যুক্তি এবং সুবিধা বহুগুণ: [১] নীচের কর্মীরা বাজেট প্রণয়নে অংশ নিলে তারা আরও অনুপ্রাণিত হতে পারে। [২] নীচের কর্মীরা বাজেট করা বস্তুর সঙ্গে নিয়মিত এবং বিস্তারিত যোগাযোগে থাকে। [৩] সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের তুলনায় তাদের কাছে আরও ভালো তথ্য রয়েছে। এবং [৪] তারা বাস্তবায়নের জন্য আরও দায়বদ্ধ।
যাইহোক, বটম-আপ বাজেটিংয়ের অসুবিধাগুলোও উপেক্ষা করা উচিত নয়। বটম-আপ বাজেটিংয়ে, বাজেটের ওপর কম নিয়ন্ত্রণ থাকে প্রধানত কারণ অপারেটিং কর্মীদের প্রায়ই জটিল দৃষ্টিভঙ্গির অভাব থাকে এবং শুধু বিভাগীয় বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করে, তাই জাতীয় উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। অপারেটিং কর্মীদের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকলে দুর্বল বাজেটের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাজেট তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ এবং নীচের কর্মীরা খুব সহজ লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে। সুতরাং বিভাগ এবং বিভাগীয় বাজেটের মধ্যে সমন্বয়ের সমস্যাগুলো আন্তঃসম্পর্কিত হওয়া দরকার। যদিও সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট প্রায়শই চূড়ান্ত সমষ্টিগত পরিসংখ্যানগুলোকে যেভাবেই সামঞ্জস্য করে, ভবিষ্যতে এ ধরনের বাজেটের কোনো বৈচিত্র্যকে বাস্তবের সঙ্গে ব্যাখ্যা করা খুব কঠিন যদি এই সমন্বয়গুলো বড় পরিচালন বিশদে পরিকল্পিত না হয়।
বাংলাদেশে জাতীয় বাজেট এমনভাবে তৈরি করা হয় যেটা টপ-ডাউন এবং বটম-আপ পদ্ধতির মাঝখানে থাকে। সম্পূরক বাজেট এবং প্রস্তাবিত বাজেট উভয়ই অর্থবছরের শেষ মাস জুনের প্রথম সপ্তাহে সংসদে পেশ করা হয়। আইন প্রণয়ন ও পদ্ধতি অনুযায়ী, সম্পূরক বাজেট পেশ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন করা হয় এবং প্রস্তাবিত বাজেট মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য ৩০ জুনের মধ্যে সংসদে পাস হয়। বিশেষ করে, সম্পূরক বাজেট প্রণয়ন এবং তা পাসের বিষয়ে সংবিধানের ৯১ অনুচ্ছেদে একটি সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে এবং উদ্ধৃত সাংবিধানিক চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, বাংলাদেশ সংসদের কার্যবিধির ১২৩ এবং ১২৪ অনুচ্ছেদে অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। এই নির্দেশনায়, জাতি খুব কমই সংসদে উপস্থাপন করা সম্পূরক বাজেট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা বা বিতর্ক দেখে। এটি স্থাপনের পরের সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগই আইনসভা দ্বারা স্পষ্ট করা হয়।
ঐতিহ্যগতভাবে, আমাদের বিশ্বের এই অংশে, বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রস্তুত করা হয়, উল্লেখযোগ্য যাচাই-বাছাই ছাড়াই সংসদ দ্বারা অনুমোদন করা হয় এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাগুলো খুব বেশি দায়িত্বশীলতার সাথে সঙ্গে বাস্তবায়িত হয় না। আবার সংসদে বাজেট বাস্তবায়ন কারী দ্পতরের কাছ থেকে বাজেট বহিভৃর্ত আয় ব্যয় সম্পর্কে কোন প্রকার ব্যাখ্যা বা জবাবদিহিতা চাওয়া ব্যতিরেকেই মসৃণ উপায়ে সম্পূরক বাজেট গ্রহণ করা হয়। এরফলে বাজেট বাস্তবায়নে কর্ম বিভাগ বাজেট অনুসরণ বা নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী হয় না , দায়িত্বশীল হয় না। সংসদই ক্ষমতাপ্যাপ্ত সম্পুরক বাজেট অনুমোদন কালে বাজেট বাস্তবায়নে দায়িত্বশীরতার ব্যাখ্যা চাওয়ার । বাজেটকে নাগরিক এবং সরকারের মধ্যে একটি মৌলিক সমঝোতা স্মারক এবং উভয়ই একে অপরের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য আইনত আবদ্ধ (দায়বদ্ধ)। বাজেটিয় নিয়ন্তৃণ প্রতিষ্ঠা সাংবিধানিক দায়িত্ব। বাজেট শুধু কৌশলগত পরিকল্পনার রূপরেখা এবং উন্নয়ন এবং অ-উন্নয়ন আর্থিক ব্যবস্থার রোডম্যাপ নয় , জনগনের সম্পদ ও সেবা সৃষ্টিতে বাজেট বরাদ্দ ব্যবহারে শৃ্খংলা সুশাসন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও সঙসদেও দায়িত্ব । তাই যেহেতু সরকার এবং নাগরিক উভয়ই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে, তাই বাজেট প্রণয়ন, পাস এবং বাস্তবায়নে প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করা হয়।
লেখক: সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান।