আহসান হাবিব: [১] নিজের সৌন্দর্য কি নিজে উপভোগ করা যায়? মনে হয়- না। আমার সৌন্দর্য যখন অন্যকে মুগ্ধ করে, ঠিক তখনি নিজের সৌন্দর্য উপভোগ্য হয়ে উঠে। আবার শুধু আমাকে দেখে কেউ মুগ্ধ হলে সৌন্দর্যের সবটুকু উপভোগ করা যায় না। সৌন্দর্য সম্পূর্ণ উপভোগ করতে হলে প্রেমে পড়তে হয়। [২] প্রেমে কি হয়? নিজের যা কিছু সব প্রেমাস্পদের নিকট উপহার হিসেবে দিয়ে দিতে হয়। প্রেমের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার সামগ্রী হলো দেহ। কেননা প্রেম হচ্ছে দেহের খেলা। হরমোন হচ্ছে দেহস্থ নাটের গুরু আর দেহ হচ্ছে তার ক্রীড়নক। কিন্তু মন বলে অদৃশ্য যে বস্তুটি নানা মিথস্ক্রিয়ায় গঠিত হয়ে থাকে, তা হরমোনের উপর ছড়ি ঘোরায় এবং দেহকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। চলে দেহ এবং মনের ট্যাগ অব ওয়ার। [৩] প্রেমে কে জেতে- মন না দেহ? দেহ দেহ দেহ। ইংরেজিতে একটা কথা আছে ঋষবংয রং বিধশ! প্রেমে দেহের হেরে যাওয়াই প্রকৃত জয়। কিন্তু দেহটি আপনি কীভাবে উপহার হিসেবে তুলে দেবেন প্রেমাস্পদের দেহবন্ধনীতে? ধীরেধীরে। তখন মন দেহের কাছে এসে হাঁটু গেঁড়ে বসে বলবে, আমাকে গ্রহণ কর। দেহ প্রস্তুত, শুরু হয় গ্রহণের পালা।
[৪] কিন্তু দেহকে জয় করা কি সহজ? সহজ নয়। আমাদের এই অঞ্চলে দেহ একটি ট্যাবু, একটি ‘পবিত্র’ ভূমি। এর পবিত্রতা রক্ষায় সকলে খুব তৎপর, বিশেষত নারীরা। নারীদের এই দেহ সংরক্ষণবাদীতার কারণ বহু, প্রধানত ধর্ম, দ্বিতীয়ত সমাজিক নিরাপত্তা। এ যেন এক ব্যুহ। কিন্তু প্রেম এইসব প্রতিবন্ধকতাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। যদি না দেয় তবে তা প্রেম নয়। প্রেমেই দেহ হয়ে ওঠে আসল অঞ্জলি। [৫] দেহ কখন পণ্য হয়ে উঠে? বিয়েতে। বিয়ে হচ্ছে প্রথমত দেহ বিষয়ক দর কষাকষি, তারপর শস্যের উত্তরাধিকার নিয়ে কর্মকৌশল। দেহ যখন শ্রম হিসেবে বিক্রির জন্য বাজার উঠে, তখন সে যৌনতা ছাড়াই পণ্য হয়ে উঠে। বিয়ের সঙ্গে যৌনতা যুক্ত।
প্রকৃতপ্রস্তাবে দেহ ছাড়া কোনো শ্রম নেই আর শ্রম ছাড়া কোনো পণ্য নেই। আর পণ্য মানেই বাজার, যার দ্বিবিধ মূল্য আছে, ব্যবহার এবং বিনিময় মূল্য। পর্ণ থেকে যাবতীয় শিল্পের মডেল কিংবা এমনকিছু যার স্রষ্টা সে নিজেই- সবখানেই দেহ, দেহস্থ শ্রমশক্তির বিচ্ছুরণ। এখানে যৌনতা খেলে যায় প্রকৃতির নায্য জৈবিক বৈশিষ্ট্যময়তায়। [৬] যদি নিজ দেহকে পণ্য বানাতে না চান, প্রেমে পড়ুন। প্রেমই এখনো পণ্য হয়ে উঠেনি, ফলত দেহ একে অপরের কাছে কেনা কোনো বস্তু নয়, শ্রেষ্ঠ উপহার। দেহের আকুতিকে অবদমিত রেখে কি করবেন? প্রতিনিয়ত কষ্ট পাবেন। তাই বলছি দেহকে বিলিয়ে দিন প্রেমাস্পদের অধরে, করতলে, বক্ষপিঞ্জরে। কেননা, পরকাল বলে কিছু নেই। মৃত্যু পবিত্রকে কৃমিকীটের খাদ্য বানায়, সব দৃষ্টিভ্রম ভূগর্ভস্থে মারা যায়। তাই বলছি, চিয়ার আপ, দেহানন্দে মেতে উঠুন। লেখক: ঔপন্যাসিক