মুশফিক ওয়াদুদ: ওয়াশিংটন ডিসিতে এক বাংলাদেশি ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে পরিচয় হয়েছিল। ভদ্রলোক ডিভি পেয়ে আমেরিকাতে আসেন ৯০-এর দশকে। ডিভি পাওয়ার আগে বরিশালে থাকতেন। সেখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ডিসিতে তিনি যেখানে থাকেন তার পাশে বাংলাদেশের প্রভাবশালী কিছু পরিবারের সন্তানরা থাকেন। মসজিদে এবং সুপারশপে তাঁদের সাথে দেখা হয়। তিনি বলছিলেন, আমেরিকাতে এই সব প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানদের চেয়ে তাঁর নিজেকে ছোট মনে হয় না। সমান মনে হয়। ‘এখানে আমার লাইফ আর তাঁদের লাইফের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য দেখি না’, বলছিলেন এই ট্রাক্সি ড্রাইভার।
কিন্তু তিনি যখন বাংলাদেশে আসেন তখন তাঁর নিজেকে প্রজা মনে হয়। ‘এয়ারপোর্ট থেকেই একটা বিভাজন তৈরি হয়। দেশে রাজা শ্রেণী আছে আর প্রজা শ্রেণী আছে। আর এ দুই শ্রেণীর জীবন সমান না’ বলছিলেন আমেরিকা প্রবাসী এই বাংলাদেশি। এই আলোচনার পর আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মূল সমস্যাটি হয়তো বের হয়ে এসেছে এই ভদ্রলোকের সাথে কথোপকথনে। দেশের অনেক সমস্যা আছে, কিন্তু প্রধান সমস্যা হলো ভিআইপি আর ভিভিআইপি সমস্যা। এই ভিআইপি আর ভিভিআইপিরা এমন একটি জীবন চান/এমন কিছু সুবিধা চান, যা দেশের সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে এবং দেশে সবার মধ্যে আসলে এই ভিআইপি/ভিভিআইপি হওয়ার প্রতিজোগিতা। হয়তো আমার মধ্যেও আছে। একবার ভিআইপি হয়ে উঠতে পারলে আমি হয়তো আর এসব কিছু নিয়ে কথা বলবো না।
এবং ভিআইপি এবং ভিভিআইপিদের আইনের ঊর্ধ্বে থাকাই দেশের সবচেয়ে বড় রোমান্টিসিজম। একবার এক প্রভাবশালী দলের সাথে একটি ট্যুরে গিয়েছিলাম। বড় মাপের সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন সেই ট্যুরের সঙ্গী। পদ্মা পার হওয়ার সময় আমাদের গাড়িকে নিয়মবহির্ভূতভাবে সিরিয়াল ব্রেক করে ফেরিতে জায়গা পাওয়া পুরো ট্যুরের সবচেয়ে আলোচনার বিষয় ছিলো। যারা এই অনিয়ম করেছিলেন, তাঁরা সবার প্রশংসা পেয়েছিলেন। এমন ভিআইপি গিরি দেশের সব জায়গায় চলে। প্রজাদের ডিঙ্গিয়ে রাজা শ্রেণী বিভিন্ন সুবিধা নেন। কিন্তু এই ‘প্রজা’রা নিজেদের এই সব বঞ্চনা নিয়ে ভাবেন না। তাঁরা প্রজা হয়ে থাকতেই পছন্দ করেন। লেখক ও গবেষক