হাসান মোর্শেদ: স্বাধীনতার পর প্রথম জনশুমারী অনুযায়ী ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো ২.৫%। সর্বশেষ জনশুমারী ২০২২ অনুযায়ী এই সংখ্যা ১.২%। ভারতে এই হার ১.৪%, পাকিস্তানে ১.৮%। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়েছে কারণ শুরু থেকেই প্রতিটি সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক ছিলো।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাকশালের প্রধান চারটি কর্মসূচির একটি ছিলো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। পরবর্তী সরকারগুলোও মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক কাজ করেছে এই লক্ষ্যে। কিন্তু ব্যাপারটি কি সহজ ছিলো? সহজ ছিলো না। ধর্মীয় গোষ্ঠী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ব্যাপক বাধার সৃষ্টি করেছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের শারীরিক, মানসিক ভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। সত্তর/আশির দশকে সরকারের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে যারা কাজ করেছেন, তাঁরা জানেন- এটি কতো শ্রমসাধ্য ব্যাপার ছিলো। কয়েক দশকের প্রত্যয় ও পরিশ্রমের ফলে এখন মাদ্রাসার হুজুর ওয়াজে যতোই গরম কথা বলেন, বাড়িতে ফিরে ঠিকই বাচ্চার মাথা গুনেন। ‘মুখ দিয়াছেন যিনি আহার দিবেন তিনি’Ñ নিজের বেলা এই আপ্তবাক্যে আর ভরসা করেন না। শিক্ষার ব্যাপারটিও তাই।
সেক্যুলার ও নন-সেক্যুলার (এখানে জাগতিক ও পারলৌকিক অর্থে) শিক্ষাব্যবস্থার সাংঘর্ষিক অবস্থান স্পষ্ট হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার ছিলো। এটি স্পষ্ট হচ্ছে এখন, সামনে আরো হবে। মূল ব্যাপার হচ্ছে নীতি-নির্ধারকদের প্রত্যয় ঠিক আছে কিনা? প্রত্যয় বাস্তবায়নে প্রস্তুতি আছে কিনা? সব বাধা উপেক্ষা করে আধুনিক শিক্ষা এগিয়ে নেবেন মাঠ পর্যায়ের শিক্ষকেরা। তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে কিনা? তাঁদের নিরাপত্তা ও প্রণোদনা ঠিক আছে কিনা? ফলিত পর্যায়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো চিন্তায় রেখে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাহস করতে পারলে এটি একটি যুগান্তকারী ব্যাপার হতে পারে। লেখক ও গবেষক