আরশাদ মাহমুদ: আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন, আমি অনেকদিন কোনো সংবাদপত্র সাবস্ক্রাইব করি না। শুধু অনলাইন ভার্সন পড়ার চেষ্টা করি এবং প্রতিদিন সকালে ‘প্রথম আলো’টা দেখি এবং পরে ইত্তেফাক অনলাইন ভার্সন দেখি। মে প্রসঙ্গে আজকের এই পোস্টটা লিখছি সেটি প্রথম আলোর বাণিজ্য পাতায় ছাপা হয়েছে। এর শিরোনাম এরকম, ‘সিপিডি-ওইসিডি ওয়েবিনার; বিশ্বের স্বল্প সুদের ঋণের পরিমাণ কমছে’। সংবাদটি আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। কারণ ঙঊঈউ (ঙৎমধহরুধঃরড়হ ভড়ৎ ঊপড়হড়সরপ ঈড়ড়ঢ়বৎধঃরড়হ ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ) ত্রিশটি ধনী দেশের একটি প্রতিষ্ঠান যার সদর দপ্তর প্যারিসে অবস্থিত। বিশ^ অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ কারণে আমি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে রিপোর্টটি পড়েছি। আপনারা সবাই জানেন, সিপিডি বা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে কাজ করে। যেটি সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক রেহমান সোবহান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অনেক আগে। যা হোক মূল কথায় ফিরে আসি। পুরো রিপোর্টটি পড়ে আমি সত্যিই বিস্মিত এবং হতাশ হয়েছি। কারণ ‘প্রথম আলোর’ মতো পত্রিকায় এরকম একটি দুর্বল এবং অসংলগ্ন রিপোর্ট ছাপা হতে পারে এটা আমি ভাবতে পারিনি। পুরো রিপোর্টটি শুধু সিপিডির দুইজন শীর্ষ কর্মকর্তা দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং মুস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্যের উপর জোর দিয়েছে। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত পড়ার পরও আমার চোখে পড়ল না ঙঊঈউ-র কে কী বলেছেন বা সেখান থেকে কারা এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
পুরো রিপোর্টটা পড়ে আমার মনে হলো, যে রিপোর্টার এটি লিখেছেন তিনি এ সম্পর্কে কিছুই জানে না এবং রিপোর্টটি যে সম্পাদকের হাত দিয়ে গেছে তারও কোনো জ্ঞান বা ধারণা নেই এ সম্পর্কে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ সাংবাদিক, রিপোর্টার এবং সম্পাদক তারা সাংবাদিকতা কি জিনিস সেটা এখনো পর্যন্ত বুঝতে পারেননি। তারা শুধু ‘তিনি বলেন; উনি বলেন; প্রধান অতিথি বলেন’ এর বাইরে আর কিছু শিখেছে বলে মনে হয় না। আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করে পারছি না। অনেকদিন থেকে আমি লক্ষ্য করছি ‘প্রথম আলোর’ রিপোর্টার এবং সম্পাদকেরা সিপিডির একটা মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। অনেকটা ওই প্রতিষ্ঠানের অ্যাডভারটাইজিং এর দায়িত্বে আছে বলে মনে হচ্ছে। প্রথম আলো অনেকদিন থেকেই বিশেষ গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে।
আরেকটি উদাহরণ দিই। বিতর্কিত সামিট গ্রুপের কর্ণধার আজিজ খানকে প্রমোট করা তাদের একটা বড় এজেন্ডা বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, কিছুদিন পরপর পত্রিকাটি আজিজ খানের সম্পদ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে; বিশেষ করে তিনি সিঙ্গাপুরের কতো নম্বর ধনী সেটা আমাদের জানায়। কিন্তু প্রথম আলো কখনোই আমাদের বলে না যে এই আজিজ খান কুইক রেন্টাল পাওয়ার ব্যবসার মাধ্যমে প্রচুর টাকা আয় করেছেন। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরপরই ওই ভাড়া বিদ্যুৎ ব্যবসার সিংহভাগ সামিট গ্রুপ পায়। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো যে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব প্রকাশ্যে বলেন যে, একটি বিশেষ কোম্পানি কীভাবে একটার পর একটা টেন্ডার পাচ্ছে, এটা আমাদের অনুসন্ধান করে দেখা উচিত।
মুহিত সাহেবের ওই বক্তব্যের চার বছর পর আমি প্রথম আলো তে থাকা অবস্থায় এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য আমার কয়েকজন রিপোর্টারকে বলি। তারা আমাকে স্পষ্ট জানায় যে, সামিট গ্রুপকে নিয়ে কোনো নেতিবাচক রিপোর্ট প্রথম আলো প্রকাশ করতে পারবে না। কারণ জানতে চাইলে তারা আমাকে জানায় যে, আজিজ খান মতি ভাইয়ের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমি এর উত্তরে বলি সে কারণেই এই রিপোর্টটা আমাদের করা উচিত। কারণ প্রথম আলো একটি নিরপেক্ষ সংবাদপত্র হিসেবে দেশে পরিচিত। আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় থাকি এবং দুজন রিপোর্টারকে আমি বলি যে এই সম্পর্কে প্রতিবেদন আমার কাছে সাবমিট করার জন্য। দু’সপ্তাহ হয়ে গেলেও রিপোর্টাররা আমার কাছে কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। তখন আমি মতি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করি। কিন্তু আমি সফল হইনি। এরপর আমি প্রথম আলো ছাড়তে বাধ্য হই। সিপিডি সম্পর্কেও আমার একই অভিমত যে প্রথম আলো সম্ভবত তাদের এডভারটাইজিং এজেন্সি হিসেবে কাজ করছে। আবারও প্রথম আলোর রিপোর্টার এবং সম্পাদকদের বলবোÑ আপনারা অনুগ্রহ করে সাংবাদিকতা করেন। বিশেষ করে বিতর্কিত কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে প্রমোট করা কোনো ভালো সংবাদপত্র বা সাংবাদিক করতে পারে না। ফেসবুক থেকে