মোজাফ্ফর হোসেন: আমার বেঁচে থাকা সব নষ্ট করে দেব, একে একে মৃত্যুগুলোও। ভোলা মাস্টার অংকের ক্লাসে হঠাৎই চিৎকার করে বলে উঠলো। এরপর চক ডাস্টার টেবিলে সযত্নে রেখে খুব ধীর পায়ে বের হয়ে গেল ক্লাস থেকে। স্কুলের বামের রাস্তাটা বেখেয়ালে ঢুকে পড়েছে গ্রামের ভেতরে, ডানে উদোম মাঠ, অন্তিম হাহাকার। এই প্রথম তাকে ডানের রাস্তা ধরে পড়ন্ত বিকালের সূর্যের মতো নিশ্চল নির্লিপ্তভাবে হাঁটতে দেখা গেলো। একটা দলছুট মেঘ এসে আলোটা ঢেকে দিলে নিজের ছায়ার মতো অদৃশ্য হয়ে গেলো সে। প্রায় চল্লিশ বছর আগে ঘটনা। এভাবেই বলে আসছে সেদিনের ক্লাসের ছাত্ররা। তবে একটা অংশ। আরেকটা অংশের ভাষ্যে, ভোলা মাস্টার সেদিন চক ডাস্টার টেবিলে সযত্নে রেখে খুব ধীর পায়ে বের হন বটে, তবে ডানে বা বামে নয়, সোজা হাঁটা দেন, এবং পুকুরের পাড়ে ঝুরিবিহীন দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছটার আড়াল পড়ে গেলে তাকে আর দেখা যায়নি।
এ দুটোর বাইরে সর্বশেষ আরও একটা ভাষ্য তৈরি হয়েছিল ভোলা মাস্টারের অন্তর্ধান নিয়ে, একক ভাষ্য। ক্লাসের বাইরে ঘণ্টায় বাড়ি দেওয়ার জন্য বের হয়েছিল আলীসাত্তার। তার ভাষ্যে, ভোলা মাস্টার সেদিন ক্লাস থেকে বেরই হননি। কিন্তু এই একাধিক ভাষ্য নিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে কোনো বাহাস হয়নি। কোনো ঘটনারই একক বয়ানে তারা স্থির হয় না, মানুষ এখানে এমনই। তাই কালে কালে একটি ঘটনার আরো অনেক সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে ঘটনাটিকে তারা প্রায়শই জীবন্ত করে তোলে। যেমন ভোলা মাস্টারের অন্তর্ধানের পঞ্চাশ বছর পর নতুন করে শোনা গেল, সেদিন তিনি আসলে ক্লাসেই আসেননি। সেদিন ক্লাসে আসা ছাত্রদের মধ্যে একমাত্র যিনি আলেম হয়েছেন, সেই মৌলানা রশিদুল ইসলাম মসজিদের মেম্বারে দাঁড়িয়ে জুম্মার খুতবায় তিনি একথা বলেছেন। অবশ্য তার বক্তব্যের বিষয় ভোলা মাস্টারের অন্তর্ধান নয়। তিনি ইসলামে শিক্ষকের গুরুত্ব বোঝাতে ভোলা মাস্টারের প্রসঙ্গ তুলে বলেন...। লেখক: কথাসাহিত্যিক