আর রাজী: বাংলাদেশ ফুটবল খেলায় ভালো না। কিন্তু কে না জানে, ফুটবল নিয়ে অদ্ভুত আবেগ আছে এ দেশের মানুষের। কোথায় ব্রাজিল, কোথায় আর্জেন্টিনা হয়তো জানা নাই, পর্তুগাল, জার্মান, ইরান, সৌদি আরব ইত্যাদি আর সব দেশকেই বা কতোটুকু জানে এদেশের মানুষ। কিন্তু এই না জানায় কিচ্ছু যায় আসে না। নানান সূত্র ধরে, নানান উসিলায় একেক দেশের ফুটবল দলকে প্রাণভরে সমর্থন দিচ্ছে আমাদের অগণিত ভাই-বোন-বন্ধুজন। চারিদিকে কি এক উৎসব উৎসব আমেজ। আর্জেনটিনা ব্রাজিল তো আছেই, আরও অনেক অনেক দলের জার্সি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। দেদারছে বিক্রি হচ্ছে সেসব। উড়ছে নানান দেশের ছোট-বড় জাতীয় পতাকা। আকাশী-হলুদ-সবুজ ইত্যাদি রঙ চড়েছে নানান স্থাপনায়। বর্ণাঢ্য পতাকা শোভিত মিছিলও হচ্ছে। পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব মিলে চলছে খেলা দেখা, খাওয়া-দাওয়াসহ কতো কি।
ওয়াশিংটন পোস্টও রিপোর্ট করেছে বাংলাদেশিদের ‘ফুটবল-উন্মাদনা’ নিয়ে। কি বিস্ময়কর আনন্দ আমেজ চারিদিকে। আমার ভীষণ ভাল লাগে এই উৎসব। সামান্য কিছুকে আশ্রয় করে অসামান্য উৎসবে মেতে উঠতে পারে এদেশের মানুষ। দেশ-মহাদেশ-জাতি-বর্ণের সীমাকে অতিক্রম করে যুক্তি-তর্কের অতীত কোনো কারণে মধুর আবেগে ভেসে যেতে পারে, বিপুল বেদনায় বুক ভাসিয়ে কাঁদতে পারে- এমন সোনার মানুষ আর কোথায় পাওয়া যায় আমি জানি না। বিকারভারাক্রান্ত জাতিবাদকে ছুঁড়ে ফেলে, রাষ্ট্রের সীমানাকে পাত্তা না দিয়ে দূর দূর দেশের ফুটবল দলের, ফুটবল তারকাদের জন্য এমন ভালবাসাকে হৃদয়ে স্থান দিতে পারা তো কেবল বিশ্ব-মানবের পক্ষেই সম্ভব। আমাদের দেশের অনেক অনেক মানুষ এটি পারে। অন্তত একটা উপলক্ষকে আশ্রয় করে তারা পারে বিশ্ব-মানব হয়ে উঠতে। বসন্ত বাতাসের মতো স্নিগ্ধ এক অনুভূতিতে আমার হৃদয় ভরে ওঠে ফুটবল বিশ্বকাপের দিনগুলোয়। যারা এই মিষ্টি অনুভবের স্রষ্ঠা সেই সব দারুণ মানুষের প্রতি জানাই আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। কি সুন্দর এই নি:স্বার্থ আনন্দ আয়োজন। জয় হোক আমার দেশের মানুষের এই বিপুল আবেগময় ভালবাসার।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :