শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:৪৭ রাত
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:৪৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যে কারণে শিক্ষায় ন্যূনতম জিডিপির ৫.৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া উচিত

ড. কামরুল হাসান মামুন

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের (নারী) ৮ জন নারী ফুটবলার একটি গ্রামের। কল্পনা করা যায়। হ্যাঁ, ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার পাহাড় ও সমতলের একটি গ্রামের নাম কলসিন্দুর। এই গ্রামের কি এমন বৈশিষ্ট যা বাংলাদেশের হাজার হাজার গ্রামের নেই? এখানেই স্কুল, স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক ও তাদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য একজন ম্যানেজারের গুরুত্ব।

অর্থাৎ কলসিন্দুরের এই মেয়েদের কোচ জুয়েল মিয়া এবং কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের ম্যানেজার মালা রানী সরকারের অসামান্য অবদানের জন্যই বাংলাদেশের জাতীয় নারী ফুটবল দলের এই বিশাল সাফল্য। এই সফলতা এমনি এমনি আসেনি। শুরুর সময় যারা এই মেয়েদের গড়ে তুলতে পেছন থেকে কাজ করেছেন তাদের অবদানের কথা ভুললে চলবে না। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে যদি এমন একজন জুয়েল মিয়া এবং একজন মালা রানী সরকার থাকে কি হবে ভাবতে পারেন? আমার ধারণা আমরা দক্ষিণ এশিয়া কেন? জাপান, কোরিয়ানদেরও একদিন হারাতে পারব। শুধু কোচ এবং ম্যানেজার থাকলেই চলবে না। স্কুল থাকতে হবে, গ্রামের মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে এবং সর্বোপরি সরকারকে খেলার মাঠ এবং অন্যান্য আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। আর শুধু নারী ফুটবল না। ছেলেদের ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। 

শুধু খেলাধুলা কেন? লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও স্কুল এবং শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। গ্রাম পর্যায়ের স্কুল কলেজকে উন্নতমানের না করতে পারলে বড় স্কেলে লেখাপড়ার মান উন্নত হবে না। আমাদের মানুষের অভাব নেই। এত মানুষ যে দেশের ১% মানুষকেও যদি উন্নত মানের শিক্ষা দিতে পারি আমাদের ১৮ লক্ষ উন্নত শিক্ষিত মানুষ হবে যা অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার কাছাকাছি। আমাদের ব্রেইনে বিলিয়ন বিলিয়ন নিউরন আছে সব নিউরন সমান গুরুত্বপূর্ণ না। অর্থাৎ সব নিউরন সমান সংখ্যক অন্য নিউরণের সাথে কানেক্টেড না। স্বল্প সংখ্যক নিউরন আছে যারা মিলিয়ন সংখ্যক অন্য নিউরনের সাথে কানেক্টেড যাদেরকে ‘হাব’ বলা যায়। এই হাব যত রিচ ব্রেইন ততো উন্নত মানের। তেমনি একটি দেশেও সব মানুষ সমান গুরুত্বপূর্ণ না। সবাই বড় বিজ্ঞানী, সবাই বড় রাজনীতিবিদ, সবাই বড় ব্যবসায়ী, সাহিত্যিক, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার হবে না। প্রত্যেক ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রমী বড় মানুষের মানুষ থাকলেই একটি দেশ উন্নত হয়। এই দেশের সমস্যা হলো কোনো ক্ষেত্রেই আমাদের সেই মানের মানুষ নাই যারা ব্যতিক্রমী কিছু করবেন, যারা উদাহরণীয় হবেন। 

আমাদের স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসে সবাই কি সমান পারফর্ম করে? সবাই তো একই শিক্ষকদেরই ছাত্র হয়ে একই ক্লাসে শিক্ষা লাভ করে। একই কথা এমআইটি, ক্যামব্রিজ, হার্ভার্ডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যত ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের সেরা শিক্ষার্থীও হবে সেই মানের সেরা। হাভার্ডের সেরা আমাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা এক না। বাংলাদেশের সমস্যা হলো আমরা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান ভালো করে গড়ে তুলতে পারিনি। ফলে আমরা উচ্চ মানের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, ডাক্তার, রাজনীতিবিদ, আমলা পাচ্ছি না। দিন যতই যাচ্ছে এইসব ক্ষেত্রে সকলের মান নিম্নগামী। যদিওবা মাঝে মাঝে কিছু ভালো তৈরি করতে পারছি তারাও দেশে থাকছে না। এই ব্রেইন ড্রেইন একটা বিশাল সমস্যা। কিন্তু আমাদের সরকার এইটাকে এখনো এড্রেস করছে না। ভারত, চীন, কোরিয়া এটিকে এড্রেস করতে পেরেছে বলেই তাদের দেশে বিশ্বমানের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, ডাক্তার, রাজনীতিবিদ আছে। বিশ্বের অনেক দেশ আছে যারা জাল ফেলে এইসব সেরা মানুষদের শিকার করে নিয়ে যায়। এমনি এমনি কি আর নেয়?

পরিশেষে বলতে চাই মানুষ তৈরির কারখানা অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উন্নতমানের করে গড়ে তুলতে হবে। তার জন্য শিক্ষা খাতে বিশাল বিনিয়োগ করতে হবে। শিক্ষায় ন্যূনতম জিডিপির ৫.৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে। অথচ আমরা দিই ১.৯% এর কাছাকাছি যা গত বছর থেকেও কম। এই যে কমানো হলো এটিও একটি বার্তা দেয়। মেগা মেগা প্রজেক্ট করে মেগা মেগা চুরির টাকার অভাব নাই, কিন্তু শিক্ষা স্বাস্থ্য ও খেলাধুলায় বরাদ্দ দেওয়ার সময় নাই নাই। এই যে গত বছর থেকে এইবার শিক্ষায় বরাদ্দ কমালো এইটা কিন্তু একটা বার্তা দেয়। সেটা হলো সরকার চায় না দেশের মানুষ উন্নত হোক। একই কারণে সরকার ব্রেইন ড্রেইনও ঠেকাতে চায় না। কিন্তু জনগণ কি বরাদ্দ কমানোয় প্রতিবাদ করেছে? লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়