নাজিয়া আফরিন: যেহেতু ৬ মাস বয়স থেকে শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার দেয়ার প্রয়োজন হয় তাই এই সময় কিছু বিষয় মেনে চলা আবশ্যক। নিম্নোক্ত কিছু খাবার এসময় পরিহার করা উচিৎ -
● লবণ: শিশুদের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি তাদের কিডনির জন্য ভালো নয়। শিশুর খাবার বা রান্নার পানিতে লবণ যোগ করা যাবে না এবং লবণ জাতীয় খাবার অথবা নোনতা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
● চিনি: শিশুর চিনির প্রয়োজন নেই। চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চললে শিশুর দাঁতের ক্ষয় রোধ হতে সাহায্য করবে।
● সম্পৃক্ত চর্বি: স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে এমন খাবার শিশুকে দেওয়া যাবেনা, যেমন চিপস, বিস্কুট, পাউরুটি এবং কেক।
● মধু ও কৌটাজাত খাদ্য: মাঝে মাঝে, মধু ও কৌটাজাত খাদ্যে ব্যাকটেরিয়া থাকে যা শিশুর অন্ত্রে বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করতে পারে এবং যা শিশুর বোটুলিজমের দিকে পরিচালিত করে, যা একটি অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থতা। শিশুর বয়স ১ বছরের বেশি না হওয়া পর্যন্ত মধু দেয়া ঠিক না। মধু একটি চিনি, তাই এটি এড়ানো দাঁতের ক্ষয় রোধেও সাহায্য করবে।
● আস্ত বাদাম এবং চিনাবাদাম: আস্ত বাদাম বাদাম এবং চিনাবাদাম ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের দেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি শিশুর শ্বাসরোধ করতে পারে। বাদাম এবং চিনাবাদাম গুঁড়ো করে অথবা বাটার আকারে কম পরিমাণে দেয়া যেতে পারে। এছাড়াও পরিবারে বাবা মায়ের অ্যালার্জির ইতিহাস থাকলে শিশুর অ্যালার্জি হবার সম্ভাবনা থাকে।
● পনির: কিছু পনির ‘লিস্টেরিয়া’ নামক ব্যাকটেরিয়া বহন করে। সেক্ষেত্রে, পনির পরিহার করা লাগতে পারে। যদিও, পনির একটি স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্যের অংশ এবং ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন সরবরাহ করে।
● কাঁচা এবং হালকা সিদ্ধ ডিম: কাঁচা এবং হালকা সিদ্ধ ডিম এড়িয়ে চলতে হবে, মুরগির ডিমের পরিবর্তে রাজহাঁস বা কোয়েলের ডিম দেয়া ভালো।
৬ মাস বয়সের শুরুর দিকে ফলের রস জাতীয় একেবারে তরল দিয়ে শুরু করতে হবে। পরবর্তীতে ৭-৮ মাস বয়সে চটকানো খাবার দিতে হবে। বিভিন্ন ধরণের খাদ্য উপাদানের সংমিশ্রণের মাধ্যমে শিশুর খাদ্যের পুষ্টিমূল্য বাড়ানো যায়। নিম্নোক্ত কিছু খাবার এসময় দেয়া যেতে পারে -
● পুডিং: ঘরে তৈরী পুডিং শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।
● পায়েস: পায়েস তৈরী করে শিশুকে খাওয়ানো ভালো।
● খিচুড়ী: চাল ও বিভিন্ন রকম ডাল আধা ভাঙা করে শাক-সবজি, মাছ বা কলিজার টুকরো সিদ্ধ করে সামান্য তেল এর মিশ্রণে থকথকে খিচুড়ী শিশুর জন্য ভালো।
● সবজি সিদ্ধ করা স্যুপ: টাটকা সবজি সিদ্ধ করা স্যুপ শিশুর জন্য অত্যন্ত ভালো।
● পাতলা দুধ বা ফলের রস: পাতলা দুধ বা ফলের রস শিশুকে দেয়া যেতে পারে।
● হালুয়া: ডালের, গাজরের, আলুর হালুয়া দেয়া ভালো।
● দুধ-রুটি: দুধ দিয়ে রুটি ভিজিয়ে সকালের খাবারে দেয়া যায়।
● দুধ-কলা: দুধ দিয়ে কলা চটকিয়ে নাস্তা হিসেবে দেয়া যায়।
● সিদ্ধ ডিম: ভালোভাবে সিদ্ধ করা ডিম শিশুকে খাওয়ানো যায়।
● কলিজা, মাছ বা মাংস সিদ্ধ: কলিজা, মাছ বা মাংস নরম টুকরো সিদ্ধ করে দুধ বা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
শিশুকে খাওয়ানোর ব্যাপারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। নয়তো পেটের অসুখ, কৃমি হয়ে শিশুর স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে। বাইরের খাবার াশশুকে খাওয়ানো একেবারেই উচিৎ নয়।
নাজিয়া আফরিন: স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মকর্তা, মানবিক সাহায্য সংস্থা