পাভেল রহমান: আম্মার কথা মনে পড়ে। বাবার মৃত্যুর পর আমার জন্মদাতা মা যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তখনই পাশে দাঁড়ালেন তিনি আমাদের আম্মা শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। আমি এলিফেন্ট রোডের ‘কণিকায়’ যেদিন প্রথম এলাম সেইদিন তিনি আমাকে নিজে হাতে রান্না করে খাওয়ালেন। আমি এতোটাই বিমুগ্ধ যে মাঝে মাঝে তাঁর ছবি তুলতেই ভুলে যাই সেই দিনটিতে। পরিপাটি সাজানো ঘর, রুমির ছবি আঁকা দেয়াল, ঝকঝকে রান্না ঘর, আর পড়ার টেবিল। যেন সব নিখুঁত করে সাজানো। এসবই উঠে আসে আমার ক্যামেরায়।
শহীদ জননীর মায়াভরা ভালোবাসায় আমি হয়ে উঠি তাঁর আরেক সন্তান যেমনটি বন্ধু মাশুক হেলাল যেমনটি সব মুক্তিযোদ্ধারা হয়ে উঠেছিলেন এই বাংলায়। আম্মা হয়ে উঠেন একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে কঠিন এক লড়াকু সেনাপতি। আমরা তাঁকে ঘিরে বয়ে চলেছি এক বিরামহীন তরী। বেবি আপা (শ্রদ্ধেয় বেবি মওদুদ) আমি দীর্ঘ সময় ছিলাম তাঁর পাশে। আমাদের বিজয় হয়েছিলো তাঁর দৃঢ়তায়। এর মাঝে আমার অসুস্থতায় কিংবা সাইক্লোনের কঠিন এসাইন্মেন্ট সব কিছুতেই খবর রাখা চাই। এমনকি মরণ ব্যাধি ‘ক্যান্সারের’ চিকিৎসায় গিয়ে আম্মা চিঠি দিয়ে খোঁজ রাখতেন। বলতেন সাবধানে কাজ করতে। আমরা সেই আম্মাকে পেয়েছিলাম ‘যে মায়ের সন্তানেরা কান্দে আবার হাসতে জানে’। আমাদের এমন মা চাই যে মা নিজের সন্তানকে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে পৌঁছে দিয়েছেন নিজে গাড়ি চালিয়ে। এমন একটা মা ছিলেন বলেই তো আমরা দেশের জন্য জীবন বিলিয়েছি স্বাধীনতার তরে। সস্রদ্ধ সালাম আম্মা শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, বীর যোদ্ধা রুমির মা তোমাকে। ধানমণ্ডি, ঢাকা। ৩ মে ২০২৪।
ক্যাপশন: আম্মা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের এর এই ছবিটি তাঁর পড়াশোনার টেবিলে আমি তুলেছিলাম গন আদালতের সেই বিজয়ের দিনে। ৩-৪-২৪। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :