সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু: গরম বাড়ার সঙ্গে চারদিকে প্রগতিশীল সাজার দৌড়ও শুরু হয়েছে। শর্টকাট পথ হিসেবে তারা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়াকে শোভন, অশোভন বাক্যবানে ধুয়ে দিচ্ছেন। এই ধৌতকর্মের মধ্য দিয়ে নিজেকে বিজ্ঞানমনষ্ক আর প্রগতিশীলদের কাতারে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। কোনও প্রগতিশীল মানুষ অন্যের সেই বিশ্বাসকে কখনোই আঘাত করেন না, সে বিশ্বাস যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্যক্তি, সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। পরমত সহিষ্ণুতা, পরবিশ্বাসকে শ্রদ্ধা জানানো প্রগতিবাদী মানুষের অনেক বড় বৈশিষ্ট, তার ব্যক্তিত্বের উজ্জ্বলতর রূপ।
বৃষ্টি কামনায় নামাজ, প্রার্থনা, ব্যাঙের বিয়ে, নতুন কোনো বিষয় নয়, এ জনপদের শতশত বছরে প্রাচীনচর্চা, বিশ্বাস। যা আমাদের কালচারের পার্ট হয়ে গেছে। নিজের কালচার, বিশ্বাস, চর্চাকে আক্রমনের লক্ষ্য করা ঠিক না। তবে এটা ঠিক, বিজ্ঞান মতে, প্রার্থনায় বৃষ্টি নামার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। প্রার্থনায় কিছু হওয়ারও কথা না। তাই বলে কি জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নততর, আধুনিক রাষ্ট্র, সমাজে প্রার্থনা নেই? আছে। মসজিদ, মন্দির, মাজার, কবর, প্রতিমা, গীর্জায়, চার্চে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ নানা বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করে না? করে। তবে কেন করে এই প্রার্থনা? করে, দুটো কারণে,
[১] ইহজাগতিক জীবনে সমাজ, সংসার, বিজ্ঞান যখন মানুষের মনোজাগতিক, শারীরিক, কোনো জটিল সংকট, সমস্যার, সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়, তখন মানুষ অলৌকিক জীবনে পরম শক্তিমানকে বিশ্বাস করে তার কাছে আশ্রয়, সাহায্য, প্রার্থনা করে।
[২] সব ধর্মের, সব জাতির, সব অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ বিশেষ বিশেষ উপলক্ষ সামনে রেখে মঙ্গল, কল্যাণ, আর সাহায্য কামনা করে যে প্রার্থনা করে সেটি তাদের কালচারের পার্ট, সেসব প্রার্থনা সবসময় ধর্ম বিশ্বাস থেকে করে না, সংস্কৃতিজাত প্রেষণা থেকেও করে। মানুষের সেই বিশ্বাসকে, চর্চাকে আঘাত, অশ্রদ্ধা না করাই ভালো যে বিশ্বাস মানুষের সামান্যতম ক্ষতি করে না, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উসকে দেয় না, সমাজে সমাজে, মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে না। ধার্মিক সাজা আর ধার্মিক হওয়ার মধ্যে যেমন আসমান-জমিন ফারাক আছে, ঠিক তেমনি প্রগতিশীল সাজা আর প্রগতিশীল হওয়ার ব্যবধানও একসমুদ্র। প্রগতিবাদিতা অর্জন করতে হয় জীবনব্যাপি নিরন্তর চর্চার মাধ্যমে, চমক, চটক হুজুগে মেতে নয়। মনে রাখা ভালো, প্রকৃত প্রগতিশীল মানুষ পবিত্র ও মানুষের জন্য নিরাপদ মানুষ। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :