বিশ্বজিৎ দত্ত: ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ বৃদ্ধি, টাকার মান বাড়ানো ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি রয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়নে কোন দিক নির্দেশনা বাজেটে নেই কেনো, এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরাও শংকিত। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে কাজ চলছে। আস্তে আস্তে তা বাজেটের লক্ষ্যসীমা ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
শুক্রবার বিকেলে শেরেবাংলানগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
পরে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিস্তারিত বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও টাকার মান নিয়ে বিস্তারিত লিখা হয়নি, কারণে এই বিষয়গুলো প্রধানত মুদ্রানীতিতে ব্যাখা করা হবে। কিছু দিনের মধ্যেই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির বেশিরভাগই হয়েছে আমদানি করা পণ্যে। বাজারে টাকা ছাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি হয়নি। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ২ লাখ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার পরেই শুধুমাত্র ৭০ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছাড়ে। সুতরাং মুদ্রাজনিত মুদ্রাস্ফীতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
রিজার্ভের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ৫ মাসের আমদানির সমান রিজার্ভ এখনো আছে। কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্স আছে। ফাইনান্সিয়াল একাউন্ট আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
ব্যাংকে সুশাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইন হয়েছে। এটি কেবিনেটে পাশ হলে ব্যাংকের সুশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে। নন পারফরমিং ঋণের বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৫ শতাংশ ও সরকারি ব্যাংক ১০ শতাংশের বেশি রাখতে পারবে না বলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এই কথার রেশ ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরাই রেমিটেন্স বৃদ্ধির জন্য সবার আগে চেষ্টা করেছি। ব্যাংকের ৯ ও ৬ শতাংশ সুদের কারণে দেশে অনেক উদ্যোক্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি করা না হলে গত ৪ বছরে দেশের অর্থনীতি অচল হয়ে যেতো।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ১ কোটি লোককে কম মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই এই কর্মসূচি বিস্তৃত করার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমাবো, যেসব নিত্যপণ্যে শুল্ক ছাড় দিতে হবে তাও করবো। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধি কমিয়ে নিয়ে আনবো। এখনো বাংলাদেশে থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও ব্যাংককের চেয়ে মূল্যস্ফীতি কম।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী টিপু ম্ন্সুী বলেন,বাজারে কিছু মধ্যসত্বভোগী কারসাজি করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করছে আমরা এগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। আশা করছি বাজেটে ঘোষিত ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি অর্জন করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের দুর্নীতি কমানোর বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এম তাজুল ইসলাম বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক প্রকল্পের আগের ব্যয়ের সঙ্গে নতুন ব্যয় সমন্বয় করা হচ্ছে। এই কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে দুর্নীতির কোন বিষয় নেই।
আইএমএফের পরামশের্ এবারের বাজেট করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন; তাদের পরামর্শ মোতাবেক বাজেট করা হয়নি। তবে তাদের অনেক পরামর্শ আর্থিকখাতের সংস্কারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব পরমর্শ ভাল। যেটুকু গ্রহণ করার ততটুকু গ্রহণ করেছি। আমারা তাদের ভাল পরামর্শগুলো নিয়েছি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফের যে ঋণ তা আমাদের দেশে আসা দেড় মাসের রেমিটেন্সের সমান। সুতরাং আইএমএফের ঋণ নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।
প্রশ্নোত্তর পর্বে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন কোন মানুষ কাজ পায় না, এমন নয়। বেসরকারিখাতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে, প্রচুর মানুষ কাজ করছে। আগে মানুষ না খেয়ে মারা যেতো। এখন মানুষ না খেয়ে মারা যায় না।
ক্যাশলেস সোসাইটি করার বিষয়ে গভর্ণর বলেন, এটা করার জন্য বাজেটে ৪ বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এটি এর আগেই বাস্তবায়িত হবে। দেশের ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংক সিস্টেম চালু করতে। যাতে গ্রাহকদের ব্যাংকেই যেতে না হয়। সব কাজ তারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই সম্পন্ন করবে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব
বিডি/এসবি/এসবি২