শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০২৩, ০৬:৪৪ সকাল
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০২৩, ০২:৪৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাগ্রত চৌরঙ্গী: মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের স্মারক 

ছবি: সংগৃহীত

সালেহ্ বিপ্লব: মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস আজ ১৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে জয়দেবপুরের সংগ্রামী জনতা পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু করেছিলেন। বাসস

১৯ মার্চের বীরত্বকে অমর করে রাখতে ১৯৭২-১৯৭৩ সালে গাজীপুরের চৌরাস্তায় নির্মাণ করা হয় ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাস্কর্য। দিবসটি পালন  উপলক্ষে আজ গাজীপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।  

সে সময় গাজীপুর সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এক। তিনি এক নিবন্ধে বলেন, ১৭ মার্চ ১৯৭১ জাতির পিতা  বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিনে শুভেচ্ছা জানাতে লাখ লাখ জনতার ঢল নেমেছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে।  কুর্মিটোলা (ঢাকা) ক্যান্টনমেন্টে অস্ত্রের মজুদ কমে গেছে অজুহাতে জয়দেবপুরে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করে  সেই অস্ত্র আনার ষড়যন্ত্র করেছিলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এ কথা বঙ্গবন্ধুকে জানাই। আমাদের করণীয় জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তুই একটা আহম্মক, কী শিখেছিস যে আমাকে বলে দিতে হবে?। একটু পায়চারী করে রাগতস্বরে বললেন, ‘বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে দেয়া যাবে না।’ এই কথার মধ্যদিয়ে নেতার হুকুম পেয়ে গেলাম।

মোজাম্মেল হক জানান, ১৯শে মার্চ আকস্মিকভাবে পাকিস্তনি বিগ্রেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট জয়বেদপুরস্থ (গাজীপুর) ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার জন্য পৌঁছে যায়। তখন বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক জনতা চারিদিক থেকে লাঠিসোটা, দা, কাতরা, ছেন, দোনালা বন্দুকসহ জয়দেবপুর উপস্থিত হয় ।

মোজাম্মেল হক বলেন, জয়দেবপুর রেল গেইটে মালগাড়ীর বগি, রেলের অকেজো রেল লাইন, স্লিপারসহ বড় বড় গাছের গুড়ি, কাঠ, বাঁশ, ইট ইত্যাদি যে যেভাবে পেরেছে তা দিয়ে এক বিশাল ব্যারিকেড দেয়া হয়। জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত আরো ৫টি ব্যারিকেড দেয়া হয়, যাতে পাকিস্তানি বাহিনী অস্ত্র নিয়ে ফেরৎ যেতে না পারে। ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন-কমান্ড মেজর কে এম শফিউল্লাহকে (পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান) জনতার উপর গুলি বর্ষণের আদেশ দেয়া হয়। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা জনতার উপর গুলি না করে আকাশের দিকে গুলি ছুঁড়ে সামনে আসতে থাকে। 

মন্ত্রী বলেন, আমরা বর্তমান গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উপর আবস্থান নিয়ে বন্দুক ও চাইনিজ রাইফেল দিয়ে সেনাবাহিনীর উপর পালাক্রমে গুলি বর্ষণ করি। এই অস্ত্রগুলোও সেনাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া। আমরা যখন ব্যারিকেড দিচ্ছিলাম, তখন টাঙ্গাইল থেকে রেশন নিয়ে একটি কনভয় জয়দেবপুর আসছিল। সে রেশনের গাড়িকে জনতা আটকে দেয়। সে কনভয়ে থাকা ৫ জন সৈন্যর চাইনীজ রাইফেল ও এলএমজি তাদের নিকট থেকে কেড়ে নেয়া হয়। আমরা সেগুলো দিয়ে সেনাবাহিনীর ওপর গুলি চালাই।

মোজাম্মেল হক বলেন, এদিকে রেল গেইটের ব্যারিকেড সরানার জন্য ২য় ইস্ট বেঙ্গলের রেজিমেন্টকে বিগ্রেডিয়ার জাহান জেব আদেশ দেয়। পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে জয়দেবপুরে কয়েকজন শহীদ হন, আহত হন শত শত বীর জনতা। বর্তমানে সেই স্থানেই, চৌরাস্তার মোড়ে ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নামে ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।

এমএএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়