শিরোনাম
◈ দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে নির্বাচনের পথে বিএনপি ◈ স্প‌্যা‌নিশ লা লিগায় বার্সেলোনার টানা সপ্তম জয় ◈ ইউ‌রো‌পীয় ইউ‌নিয়ন বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে পা‌শে থাক‌তে আগ্রহী ◈ চলতি বাজেটে রাজস্ব খাতে বরাদ্দ বাড়ছে, আগামী বাজেটের রূপরেখা দেবে অন্তর্বর্তী সরকার ◈ খুনিকে দ্রুত জীবিত গ্রেপ্তার চাই, বন্দুকযুদ্ধের নাটক দেখতে চাই না: ইনকিলাব মঞ্চ ◈ আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের দাপট, গোল্ডসহ ১১ পদক অর্জন ◈ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্যাখ্যা দেননি. ইনকিলাব মঞ্চ কর্মসূচি দেবে সোমবার ◈ হাদি হত্যা মামলায় নতুন মোড়, সেই ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যাংকে শত কোটি টাকার লেনদেন ◈ বাংলাদেশের দুর্বল ব্যাংক কিনতে চীনকে প্রস্তাব, সহজ হবে লেনদেন, কমবে ডলারের চাপ (ভিডিও) ◈ চূড়ান্ত হলো বিএনপির ৩০০ আসনের মনোনয়ন, শিগগিরই ঘোষণা

প্রকাশিত : ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৯:৩৬ সকাল
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পণ্যজট ও ঝুঁকি কমাতে বিমানবন্দরের বাইরে কুরিয়ার ক্লিয়ারেন্স চালুর উদ্যোগ সরকারের

জায়গা সংকট ও অগ্নি দুর্ঘটনার পর সৃষ্ট জট নিরসনে কুরিয়ার ও এয়ার এক্সপ্রেস চালানের পণ্য দ্রুত খালাস করতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে নিরাপদ ও সুরক্ষিত স্থান থেকে বিকল্প কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। 

সূত্র জানিয়েছে, কুরিয়ার সার্ভিসের জন্য বিকল্প কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স চালু করতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কাজ শুরু করেছে। 

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গত ১০ ডিসেম্বর বিডা ভবনে একটি স্টেকহোল্ডার মিটিং হয়েছে। সেখানে আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি ছাড়াও এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস ডেলিভারির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

বিডার কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় বিমানবন্দরে পণ্য অবতরণের পর তা সিলগালা অবস্থায় কাস্টমসের সরাসরি তত্ত্বাবধান, ট্র্যাকিং ও সুপারভিশনের মাধ্যমে বিমানবন্দরের প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটারের মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও সুরক্ষিত স্থানে স্থানান্তর করা হবে। সেখানে আনপ্যাকিং ও কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সম্পন্ন হবে। তারপর ওখান থেকে কুরিয়ার কোম্পানিগুলো গ্রাহকের ঠিকানায় পণ্য পৌঁছে দেবে।

এতে করে বিমানবন্দরের ভেতরে পণ্যের জট কমবে, নিরাপত্তা ঝূঁকি হ্রাস পাবে এবং ভবিষ্যতের অগ্নিকাণ্ডের মতো দূর্ঘটনার আশঙ্কাও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বৃহস্পতিবার টিবিএসকে বলেন, 'কুরিয়ার সার্ভিসের জন্য বিকল্প কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করার জন্য আমরা ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।'

১০ ডিসেম্বরের বৈঠকের পর লুৎফে সিদ্দিকী এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন: 'আমার এনবিআর ও বিডার সহকর্মীরা বিমানবন্দরে কুরিয়ার সার্ভিসের জন্য বিকল্প কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স চালু করতে দিনরাত কাজ করছেন। জট কমাতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ এবং বেসরকারি খাতের ক্রেতা, বিক্রেতা ও এজেন্টসহ সব পক্ষকে গঠনমূলকভাবে একসঙ্গে কাজ করতে দেখা সত্যিই উৎসাহব্যঞ্জক।'

বিডার নির্বাহী সদস্য ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রধান নাহিয়ান রহমান রচি টিবিএসকে বলেন, 'বিমানবন্দরের পণ্যজট দীর্ঘদিন ধরেই বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ। সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। আমরা এনবিআরের এই ইতিবাচক উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। প্রস্তাবিত বিকল্প ব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে এবং দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সব স্টেকহোল্ডার সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন বলে আমরা আশা রাখছি।'

তিনি আরও বলেন, যেহেতু এই সমস্যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তাই সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয় ত্বরান্বিত করাই বিডার মূল লক্ষ্য।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে কার্গো খালাস কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা সময়মতো পণ্যের নমুনা ও স্বল্প মূল্যের চালানগুলো ছাড় করতে পারছেন না। 

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত, ভিয়েতনাম, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের বিকল্প কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থা চালু করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা চালুর জন্য এনবিআর একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে বলে জানা গেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিকল্প কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের স্থান যেন বিমানবন্দরের ২০-২৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই হয়।

সভায় অংশগ্রহণকারী একজন ব্যবসায়ী টিবিএসকে বলেন, 'অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বিমানবন্দরে ক্লিয়ারেন্স করতে সময় লাগছে। কখনও ২ থেকে ৬ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। বিকল্প কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থা চালু হলে সময় অনেক কম লাগবে।'

এনবিআরের একজন কর্মকর্তা জানান, বিশ্বব্যাপী প্রচলিত রীতি অনুযায়ী অধিকাংশ দেশেই বিমানবন্দরের ভেতরে পূর্ণাঙ্গ কার্গো ক্লিয়ারেন্স করা হয় না। বরং বিমানবন্দরের বাইরে নির্ধারিত স্থানে এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়, যাতে নিরাপত্তা ঝুঁকি ও জট কম থাকে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যবহৃত অফ-ডক ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থার মতো একটি নতুন মডেল প্রস্তাব করেছে। 

সূত্র জানায়, 'এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস ডেলিভারি' বৈঠকে এনবিআর স্টেকহোল্ডারদের জানিয়েছে যে বিমানবন্দরের বাইরে অনুমোদিত স্থানে এয়ার এক্সপ্রেস পণ্য খালাস সহজ করতে তারা স্বউদ্যোগে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে।

এই খসড়া গাইডলাইন ইতিমধ্যে গ্রাহক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, বিভিন্ন শিল্প সংস্থা ও এয়ার এক্সপ্রেস অপারেটরদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি ও বহুমুখী খাতসংশ্লিষ্ট হওয়ায় সব পক্ষের মতামত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এটি বাস্তবায়ন করা হবে। 

সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রক কাঠামো ইতিমধ্যে প্রস্তুত রয়েছে। এখন স্টেকহোল্ডাররা গাইডলাইনটি পর্যালোচনা করে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য এনবিআরের কাছে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ সমাধান করতে সাধারণত সময় লাগে। তবে এনবিআরের এই দ্রুত ও ইতিবাচক সাড়া সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। প্রস্তাবিত এই কাঠামো আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের দীর্ঘদিনের উদ্বেগও দূর করবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ বিমানবন্দরের বাইরে কার্গো খালাস একটি বিশ্বস্বীকৃত পদ্ধতি।

এই উদ্যোগটি ন্যাশনাল লজিস্টিকস পলিজি ২০২৫-এর সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ, যেখানে আমদানি ও রপ্তানির লিড টাইম কমানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশের সভাপতি কবির আহমেদ। তিনি বলেন, এটা খুবই ভাল পদ্ধতি। পৃথিবীর সব দেশেই এই পদ্ধতি আছে। তবে বাংলাদেশে এটা পরিচালনার জন্য যেন একটি ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে দেওয়া হয়। সেই ক্যাটাগরিতে যারা পড়বে, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এর কাজ  পেয়ে যাবে। 

তিনি আরও বলেন, 'আর বলেছি, যেন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে মাথায় রেখে ক্রাইটেরিয়া সেট করা না হয়। ৬ থেকে ৭টি ফ্রেইট ফরওয়ার্ড প্রতিষ্ঠান বা এক্সপ্রেস প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কনসোর্টিয়াম করে তাদের পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া যায়। দেখা যাবে এতে সম্মিলিতভাবে কাজগুলো দ্রুত হবে।' এটি যেন বিমানবন্দরের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে হয়, সে পরামর্শও দিয়েছেন তারা। 

কবির আহমেদ বলেন, উড়োজাহাজ অবতরণের দুই ঘণ্টার মধ্যে সেবাদানকারীদের কার্গোর দায়িত্ব নিতে হবে এবং পরবর্তী দুই ঘণ্টার মধ্যে পণ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য বন্ডেড ট্র্যাকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে একটি নীতিমালার কাঠামো প্রয়োজন হবে; কারণ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডাররা এক্ষেত্রে ব্যাংক গ্যারান্টি দেবে এবং প্রয়োজনে কাস্টমসকে অগ্রিম অর্থ পরিশোধসহ যাবতীয় জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।

তিনি আরও বলেন, এই মডেলটি পৃথিবীর সব দেশে আছে। এটি আন্তর্জাতিক মান অনুসারে তৈরি করা হয়েছে; যেখানে প্রি-ক্লিয়ারেন্স ও বন্ডেড ডেলিভারি সম্ভব, এমনকি শুল্ক-কর পরিশোধের আগে। ভারতে, কম্বোডিয়াসহ অন্যান্য দেশে এ ধরনের সিস্টেম ইতিমধ্যেই কার্যকর রয়েছে। এর মাধ্যমে বিমানবন্দরের জট কমানো, কাস্টমস কার্যক্রম দ্রুত করা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধা সৃষ্টি করা সম্ভব।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, স্টেকহোল্ডারদের লিখিত মতামত জমা দেওয়ার জন্য সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এরপরই গাইডলাইন ও বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি তৈরি পোশাক (আরএমজি) কারখানার একজন সিনিয়র ম্যানেজার বলেন, উদ্যোগটি ইতিবাচক হলেও এটি আরও বিশদ পর্যালোচনার দাবি রাখে। 

তিনি বলেন, 'আরএমজি খাতের জন্য আকাশপথের চালানগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বেশিরভাগ চালানে ফিনিশড পণ্য থাকে, যা এক থেকে দুই দিনের মধ্যে সরবরাহ করতে হয়। বিদেশি ক্রেতারা এক্স-ফ্যাক্টরি লিড টাইমের জন্য সাধারণত ২৫-৩৫ দিন সময় দেয়, তাই বিমানবন্দরের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দ্রুত সম্পন্ন হওয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।'

তিনি বিমানবন্দরের আমদানি পরিদর্শন বিভাগকে আরও শক্তিশালী এবং পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, কর্মকর্তাদের উচিত কমার্শিয়াল ইনভয়েসের সাথে ব্যাংকের প্রোফর্মা ইনভয়েস যাচাই করা এবং প্রয়োজনে সশরীরে পণ্য পরিদর্শন করা। এছাড়া জালিয়াতি বা নথিপত্রের অসংগতিগুলো সবার সামনে তুলে ধরার জন্য আমদানি এলাকায় একটি বড় ডিসপ্লে স্ক্রিন স্থাপনের প্রস্তাব দেন তিনি, যাতে যেকোনো অনিয়ম প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়