শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ শতাংশ শুল্কের চাপ: উৎপাদন বাংলাদেশসহ চার দেশে সরিয়ে নিচ্ছে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান ◈ এআইয়ের অপব্যবহার রোধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে : ইসি ◈ নির্বাচনের সময় ঘোষণার পরও নানা প্রশ্ন ও দাবির চাপ ◈ মোরেলগঞ্জে ১৫ বছর ধরে বন্ধ পরিবার স্বাস্থ্য কেন্দ্র, চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত ৫৫ হাজার মানুষ ◈ নাটোরে ব্যবসায়ীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে গলা কেটে হত্যা ◈ আমি সেলিব্রিটি, আমার ওপর অনেক লোক আছে, এই বলে ভয় দেখাত: সানাই মাহাবুবের স্বামী মুসা (ভিডিও) ◈ বেনাপোল বন্দরের রাজস্ব আহরন বাড়লেও সেবা বাড়েনি! ◈ ভারতে পাচার দুই বাংলাদেশিকে বেনাপোলে হস্তান্তর ◈ ব্যালন ডি’অর ২০২৫ এর সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া : প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:২৯ রাত
আপডেট : ০৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্বাচনের সময় ঘোষণার পরও নানা প্রশ্ন ও দাবির চাপ

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন।। নির্বাচনের সময় নির্ধারিত করে প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে কমিশন৷ কিন্তু এই কমিশনের অধীনেই নির্বচন হবে? অন্তর্বর্তী সরকার, নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে নির্বাচন? দুই ছাত্র উপদেষ্টা কি নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবেন? আরো প্রশ্ন আছে, কিন্তু উত্তর জানা নেই৷

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন মঙ্গলবার। তারপর নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন বলেছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করে ফেলবে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। বৃহস্পতিবার বিকালে কমিশন সভা শেষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি জানান, সেপ্টেম্বর মাস থেকে  প্রবাসীদের ভোটার এডুকেশনের কাজ করা হবে৷ তিনি আরো জানান, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যারা ভোটার হবেন, তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে এবং তারা ভোট দেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ইতিমধ্যে নির্বাচনের জন্য অর্থও বরাদ্দ করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য দুই হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বেশি।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন," নির্বাচনের জন্য যত টাকা লাগবে, তা দেয়া হবে। এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।”

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের জন্য যত বরাদ্দ রাখা হয়েছে, এর মধ্যে দুই হাজার ৭২৭ কোটি টাকা পরিচালন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ আর ২২৯ কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার দেয়া ভাষণে নির্দিষ্ট করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক' বলে অভিহিত করে একে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "এই ঐতিহাসিক ঘোষণায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যাবে, গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে। এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একটি কার্যকর জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য বিএনপি সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।”

এই নির্বাচন অতি জরুরি বলে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, "এখন এই নির্বাচনটা দেশের জনগণই চায়। জনগণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে বড় প্রহরী হয়ে দাঁড়াবে।”   

জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও তারা চায় নির্বাচন হতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতে। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরের দিন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানে আইনের ভিত্তি দিতে হবে এবং সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, "আমরা মনে করি, পিআর পদ্ধতি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মাইলফলক। ৫৪ বছরের আগের ট্র্যাডিশনাল নির্বাচন দেশের জন্য উপযোগী নয়। রাতে ভোটকেন্দ্র দখল এগুলো আগের ঐতিহ্য।”

আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ ফজলুল করিম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, "দেশে এখনো নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয় নাই। এখনো ভোটের জন্য লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। আমাদের নির্বাচনে যাওয়া কঠিন হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন যথাযথ ফাংশন করছে না এবং বর্তমান সরকার প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সেখানে এই অবস্থায় নির্বাচন করতে গেলে প্রার্থীদের নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে যায়। এই ঝুঁকিতে কেন নির্বাচনে যাবো- সেই প্রশ্ন আপনাদের কাছে রাখলাম।''

তিনি আরো বলেন, ‘‘পিআর আমাদের দাবি। এর মাধ্যমে কালোটাকার দৌরাত্ম্য কমবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হবে, কিন্তু বিএনপি এককভাবে ক্ষমতায় যেতে চায় বলে পিআর নিয়ে শিষ্টাচারবহির্ভূত কথাবার্তা বলে।''

আর এনসিপি তাদের প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচনের আগে সংস্কার, বিচার ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা চেয়েছে। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, "র্বাচনের আগেই সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান করতে হবে, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। গণহত্যাকারীদের বিচার ও রাষ্ট্র কাঠামোর গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার নিয়ে এই সরকার যাত্রা শুরু হয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে সংস্কারকে দৃশ্যমান করা ও সংস্কার বাস্তবায়ন করা এই সরকারের অবশ্য কর্তব্য।”

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, "দেশের মানুষের প্রধান দাবি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। আর সেজন্য যত দ্রুত নির্বাচন হয়, ততই ভালো। নির্বাচন পিছানোর যে-কোনো ধরনের প্রচেষ্টা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। আমরা আশা করবো, এখন নির্বাচন কমিশন দ্রুত নির্বাচনের জন্য এগিয়ে যাবে।”

তার কথা, "যারা বিভিন্ন ইস্যু সামনে আনছেন, তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আসলে প্রয়োজনীয় সংস্কার যা করা দরকার, তা করা হবে। আর যা বাকি থাকবে, তা নির্বাচিত সরকার এসে করবে।”

তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলনা আতাউর রহমান গাজী বলেন, " নির্বাচন অবশ্যই জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে। আগে জুলাই সনদ হোক, তারপরে আমরা বলতে পারবো আমরা নির্বাচন নিয়ে কী অবস্থান নেবো। আমরা পিআর পদ্ধতির কথা বলেছি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। আগের মতো নির্বাচন চাই না। তাহলে এই বিপ্লব কেন?”

আর এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, "শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়নি। তাই মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ, গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার - এগুলো আমরা নির্বাচনের আগে চাই।'' তিনি মনে করেন, ‘‘এই নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূল আচরণ করছে আমাদের প্রতি। আমাদের নিবন্ধন, প্রতীক তারা ঝুলিয়ে রেখেছে।'' তিনি আরো জানান এই কমিশনই তারা চান না, ‘‘কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে আমরা এখনো অবিচল আছি।”

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন," আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই। এখন নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করা। নির্বচনের জন্য আইন-শৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে কাজ শুরু করা।”

"আর আমরা চাই  নির্বাচনের তিন মাস আগে এই অন্তর্বর্তী সরকার পদত্যাগ করুক। তারা নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। নির্বাচন হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে,” বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, " আমরা অন্তর্ভূক্তিমূলক, অর্থাৎ, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চাই। আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের প্রশ্ন যদি আসে তখন আমরা সে ব্যাপারে আমাদের মতামত দেবো৷ তবে নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ বা তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিপক্ষে আমরা।”

যেসব প্রশ্ন সামনে

বিএনপি নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো শর্ত আরোপ না করলেও অন্য তিনটি প্রধান দল শর্ত উল্লেখ করেছে। তার মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীরের কথায় নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে তাদের সংশয়ের কথাও প্রকাশ পেয়েছে। আর এনসিপি আগেই এই নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেছে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তাহলে নির্বাচনের আগে তিন মাসের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে কিনা - এমন প্রশ্নও করছেন কেউ কেউ। আর  আওয়ামী লীগের কার্যক্রম যেহেতু নিষিদ্ধ, তাই তাদের ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কতটা হবে?

আরো যেসব প্রশ্ন এখনো সামনে আছে তা হলো: ১ মৌলিক সংস্কার ২.বিচার ৩.জুলাই সনদ ৪.নির্বাচন পদ্ধতি ৫. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ৬.আইন-শৃঙ্খলা ৮.  নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নাকি অন্তর্বর্তী সরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন," নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়ার একটি চাপ আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে আসবে। তারা বলবে, ইস্যুটিকে অ্যাড্রেস করবে। তবে সরকারকে বাধ্য করতে পারবে বলে মনে হয় না। সরকার আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। ফলে, সরকার একটি অবস্থান নিয়ে ফেলেছে।”

তার কথা, "বিএনপি তো নির্বাচনের কথাই বলে আসছিল। তবে অন্য কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে কিছু ইস্যু তুলছে। এর মধ্যে সংস্কার, বিচার, জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন। আমার মনে হয়, তারা সরকারকে একটা চাপের মুখে রাখতে চায়। যার যার অবস্থান থেকে সুবিধা নিতে চায়। আর বিএনপি যেহেতু  সবচেয়ে বড় দল তাই বিএনপিকেও চাপে রাখতে চায়, মেসেজ দিতে চায়।  বড় দল হিসাবে যাতে বিএনপি কোনো বাড়তি সুবিধা না পায় সেটা তারা নিশ্চিত করতে চায়। এখানে জোটবদ্ধ হওয়ার একটা বিষয় আছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," কোনো দল বা জাময়াত ও এনসিপি বা আরো কোনো দল মিলে নির্বাচন বর্জন করলে সেটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য। কিন্তু আমার মনে হয়, তারা শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ দর কষাকষি করবে; কিন্তু নির্বাচন বর্জন করবে না। তাহলে তো ২০১৪ সালের মতো একটি পরিস্থিতি হবে। সেটা হলে ফ্যাসিবাদ তাড়িয়ে আবার ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার মতো হবে।”

এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন  সংস্কারের ১৬৬ টি সংস্কার সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করলেও এখন পর্যন্ত ঐকমত্য হয়েছে ১৯টি বিষয়ে। তবে নোট অব ডিসেন্টও আছে। সেই বিবেচনায় ১৬টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে। জুলাই সনদ এখনো হয়নি। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয়  ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, "আমি মনে করি, প্রয়োজনীয় সংস্কার করেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হতে হবে। নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার লাগবে। আইনের সংস্কার লাগবে। তবে সবই সম্ভব। আমি কোনো আশঙ্কা দেখছি না।”

তার কথা, "ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব দেখছি না। তবে নির্বাচন কশিশনকে তার কাজের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে হবে। আর সেসব সংস্কার প্রয়োজন, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমত হতে হবে। সেটা হলে কোনো সমস্যা দেখছি না।”

আর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন," নির্বাচন আমার মনে হয়, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের অধীনেই হবে। সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো শেষ পর্যন্ত আপত্তি করবে না। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে আপত্তি থাকবে। বিশেষ করে দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে নির্বাচনের সময় হয়তো উপদেষ্টা পরিষদে রাখা যাবে না। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা হবে সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে। সেটা তো সম্ভব নয়।”

তার কথা, "এখন বিএনপি ছাড়া  কয়েকটি দল যেসব ইস্যু সামনে আনছে, আসলে এগুলো তারা চাপ সৃষ্টির জন্যই করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে  দিতে ভারত ছাড়া বড় কোনো আন্তর্জাতিক চাপ আসবে বলে মনে হয় না।”

"এনসিপি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো জামায়াত। তারা যা-ই বলুক, তারা  নির্বাচন বর্জনের মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না বলে মনে করি। কারণ, এবার তারা  প্রথমবারের মতো  দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হতে পারে। আর নির্বাচন বর্জন করে তারা বিএনপির সাথে স্থায়ী দূরত্ব তৈরি করতে চাইবে বলে মনে হয় না,” বলেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনের করণীয়

সাবেক নির্বাচন কমিশনার জেসমিন টুলী বলেন, "নির্বাচন কমিশন অনেক কাজই এগিয়ে নিয়ে গেছে। ভোটার তালিকা করেছে, সীমানা নির্ধারণের কাজ করেছে। এখন তাদের আরপিও ও আইনি সংস্কারের কাজগুলো দ্রুত করতে হবে। আর এগুলো করতে তাদের হাতে সময় যথেষ্ট আছে বলে আমি মনে করি। কিছু কাজ আছে যেগুলো ধাপে ধাপে করতে হয়। যেমন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, নির্বাচনি সরঞ্জাম- এগুলো কোনো সমস্যা নয়।”

"তাদের এখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কাজে হাত দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে শুধু একটা সংলাপ নয়, নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। তাদের আস্থায় রাখতে হবে,” বলেন তিনি।

তার কথা, "১৬-১৭ বছর পর দেশের মানুষ ভোট দিতে যাচ্ছেন। তারা এতদিন ভোট দিতে পারেননি। তাই ভোটারদের সচেতন করার কাজ এখনই শুরু করতে হবে। আর এআই-নির্ভর যে প্রচারণা, সেটার ব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

"নির্বাচনের ৬০-৭০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করতে হয়।  তার আগে এবং পরে দুই পর্যায়েই নির্বাচন কমিশনের কাজ আছে। সেই কাজগুলোর প্রতিটি পদক্ষেপে কমিশনে তার দক্ষতা এবং গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। আর সরকারের দায়িত্ব হলো কমিশনকে সার্বিক সহায়তা করা।”

 

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়