রাজধানীর ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের গোপন বৈঠকের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় মেজর সাদিকুলের স্ত্রী ও অপারেশন ঢাকা ব্লকেডের সক্রিয় এডমিন সদস্য সুমাইয়া তাহমিদ যাফরিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড শুনানিতে সুমাইয়া বলেন, আমার স্বামী সাদিকুলের সঙ্গে গিয়েছিলাম। কনভেনশনে কী হচ্ছিল আমার জানা ছিল না।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহর আদালতে রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আজ সুমাইয়াসহ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও অপারেশন ঢাকা ব্লকেডের ম্যানেজমেন্ট সদস্য আদনান বিন আব্দুল্লাহ চৌধুরীকে আদালতে হাজির করা হয়। সুমাইয়া সাত দিন ও আদনানের ১০ দিন রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির গুলশান বিভাগের পরিদর্শক মো. জেহাদ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল কাইয়ুম নয়ন আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিতে তারা বলেন, আসামিরা রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কে বি কনভেনশন হলেসরকারি বিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক মিটিং করেছেন। তারা কিন্তু বসে নেই। অপারেশন ঢাকা ব্লকেডের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষের সঙ্গে সুমাইয়া এএসপি পরিচয় দিয়ে মিটিং করেছেন। সুমাইয়া ও তার স্বামী মিলে এই চক্রান্ত করছেন। শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য এসব কাজ করেছেন তারা। কেন ৩০০ থেকে ৪০০ লোক সমাবেশ করলেন? কেন নিজেকে মিথ্যা পরিচয় দিলেন, তা রাষ্ট্রের জানা দরকার। এ জন্য আসামির সর্বোচ্চ রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীনসহ আরও কয়েক জন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তারা বলেন, সরকার এতোটা ঠুনকো না, যে একটা বৈঠকে সরকারের পতন হবে। সুমাইয়াকে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে এই মামলায় সন্দিহানভাবে গ্রেফতার করা হয়। মামলার এজাহারে সুমাইয়ার নাম উল্লেখ নেই। রিমান্ড বিষয়ে নারী, শিশু, অসুস্থ রোগীর শিথিলতা আইনে শিথিলতা রয়েছে। কী কারণে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাও জানেন আসামিরা। প্রয়োজনে তাদের জেলগেট জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। আসামির রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি।
এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে সুমাইয়া তাহমিদ যাফরিন বলেন, কে বি কনভেনশন হলে এএসপি পরিচয়ে অন্য কেউ ঢুকেছে। কিন্তু আমার নামে দোষ চাপানো হচ্ছে। কে বি কনভেনশন হলে আগে থেকে সবকিছু এরেঞ্জ করা ছিল। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে ওখানে গিয়েছিলাম। ওখানে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। আমি কোনও অন্যায় কাজ করিনি।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহর আদালত সুমাইয়ার পাঁচ দিন এবং আদনানের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের নিজ বাসা থেকে আদনানকে ও মিরপুরের ডিওএইচএসের বাসা থেকে সুমাইয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন। তারা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তারা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন।
ওই ঘটনায় গত ১৩ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক জ্যোতির্ময় মন্ডল সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। এ মামলায় ওই দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদুজ্জামান মোল্লার স্ত্রী শামীমা নাসরিন শম্পা ও বরগুনার সোহেল রানাকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। উৎস: বাংলা ট্রিবিউন।