শিরোনাম
◈ দেশে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, ব্যাংক খাতের ৮০% অর্থ নিয়ে গেছে: অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ◈ চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক পাঁচ নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কার ◈ ওজন কমাতে র‍্যাব কর্মকর্তাকে যে উপদেশ দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বড় ইভেন্টে ঝুঁকি, ভারতের সেই মাঠ থেকে সরে যেতে পারে বিশ্বকাপ ◈ মানব বীর্য প্লাজমার প্রতিক্রিয়ায় লিথুয়ানিয়ান নারীর গর্ভধারণে ব্যর্থতা! ◈ মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের খোঁজ নিতে বার্ন ইনস্টিটিউটে প্রধান উপদেষ্টা ◈ নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি: কিছু জেলায় আবারও বন্যার শঙ্কা ◈ বিমানবন্দর থেকেই আরও ৮০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া ◈ গুলশানে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, হাতেনাতে ৫ জন গ্রেপ্তার ◈ মুরাদনগরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দর্শক গেলারিতে বাস, নিহত ১ আহত ৪

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২৫, ০২:৩৫ রাত
আপডেট : ২৭ জুলাই, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সংস্থা 'ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম' (ইউএসসিআইআরএফ)। সম্প্রতি সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই উদ্বেগ তুলে ধরা হয়।

২০২৪ সালের মে মাসে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা سفر করে এবং সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর এই রিপোর্টটি তৈরি করা হয়। ইউএসসিআইআরএফ-এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক সীমা হাসান রিপোর্টটি লিখেছেন।

রাজনৈতিক পালাবদল ও সহিংসতার চিত্র

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকারের পালাবদল এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর দেশের ধর্মীয় সহনশীলতা ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

এতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর ৫ থেকে ৮ই আগস্ট পর্যন্ত দেশে একটি কার্যকর প্রশাসনের অভাবে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটে। এই সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বেশ কিছু হামলার ঘটনা ঘটে, যার মূল কারণ ছিল তাদেরকে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করে চালানো প্রতিশোধমূলক আক্রমণ।

ইউএসসিআইআরএফ পুলিশের একটি রিপোর্টের বরাত দিয়ে জানায়, ৫ থেকে ২০শে আগস্টের মধ্যে দেশে মোট ১,৭৬৯টি সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১,২৩৪টি রাজনৈতিক, ২০টি সাম্প্রদায়িক এবং ১৬১টি ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সংঘটিত হয়। তবে, এই অস্থিরতার মাঝেও অনেক মুসলমান ছাত্র ও সাধারণ নাগরিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় পাহারা দিয়েছেন।

সংবিধান সংস্কার ও বিতর্ক

অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে, যার কিছু সুপারিশ নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়:

  • ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বনাম ‘বহুত্ববাদ’: কমিশন সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ বা ‘বহুত্ববাদ’ যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে।

  • রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া:

    • দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এর পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা’ শব্দবন্ধটি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে।

    • অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী এবং আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের নবগঠিত দল ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি) ‘বহুত্ববাদ’ শব্দটির আংশিক সমর্থন করে এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে।

নারী অধিকার ও ইসলামপন্থী দলগুলোর বিরোধিতা

নারী সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে রিপোর্টে। কমিশনের ৪৩৩টি সুপারিশের মধ্যে অন্যতম ছিল ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনের পাশাপাশি একটি ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক আইন প্রবর্তন করা। এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে ইসলামপন্থী দল হেফাজতে ইসলাম। তারা কমিশনটিকে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে এর সদস্যদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে। পরে ৬ জন নারী অধিকারকর্মী আইনি নোটিশ পাঠালে সংগঠনটি ক্ষমা প্রার্থনা করে।

এছাড়াও, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারিতে একটি নারী ফুটবল ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য করে এবং নাদিরা ইয়াসমিন নামে এক নারী অধ্যাপককে হুমকির মুখে কলেজ থেকে বদলি হতে বাধ্য করা হয় বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা

ইউএসসিআইআরএফ বাংলাদেশে প্রচলিত ব্লাসফেমি সংক্রান্ত আইন (দণ্ডবিধির ২৯৫এ ধারা) এবং ২০২৩ সালের সাইবার সিকিউরিটি আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই আইনগুলোর আওতায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর জন্য কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

উপসংহার ও সুপারিশ

রিপোর্টের শেষে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় সহনশীলতার ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে। সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ায় সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না হলে এই সংস্কার দীর্ঘমেয়াদে বৈষম্যকে আরও গভীর করতে পারে। সব রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক শক্তির সম্মিলিত অংশগ্রহণই দেশে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

সূত্র: ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্ট।

 
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়