শিরোনাম
◈ জাতীয় মানবাধিকারের নামে সমকামিতার অফিস করতে দিবো না: মামুনুল হক ◈ মির্জা ফখরুলের ভাইয়ের ওপর হামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার ◈ ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন কী কাজ করবে, কেন কিছু দলের আপত্তি? ◈ গডফাদার’ মন্তব্য ঘিরে উত্তেজনা: চকরিয়ায় এনসিপির বিরুদ্ধে বিএনপির তীব্র প্রতিক্রিয়া (ভিডিও) ◈ গোপালগঞ্জে কারফিউর সময় বাড়ল ◈ চরমপন্থা ও ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের আশঙ্কা: সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান তারেক রহমানের ◈ অনেকেই এখনো ভাঙার কাজে ব্যস্ত, কিন্তু গড়ার কাজে কাউকে পাওয়া যায় না: মাহফুজ আলম ◈ জামায়াত আমির এখন কেমন আছেন? ◈ নতুন অস্ত্র? আকাশ থেকে কয়েক কোটি ভয়ানক মাছি ছাড়বে যুক্তরাষ্ট্র! (ভিডিও) ◈ ঢাকায় এসিসির সভা ভার‌তের স‌ঙ্গে বর্জন কর‌লো শ্রীলঙ্কা, আফগা‌নিস্তান ও ওমান

প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০২৫, ০৩:৫০ রাত
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০২৫, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শহীদ মুগ্ধকে নিয়ে ফেসবুকে ভাই স্নিগ্ধের আবেগময় স্মৃতিচারণা

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধকে নিয়ে ফেসবুকে আবেগময় স্মৃতিচারণা করেছেন তাঁর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। মুগ্ধর জীবনের নানা মুহূর্ত তুলে ধরেছেন তিনি। স্নিগ্ধর ভাষ্যে উঠে এসেছে দুই ভাইয়ের শৈশব, বন্ধুত্ব, প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং এক শেষরাতের হৃদয়বিদারক মুহূর্ত।

স্নিগ্ধ লিখেছেন, ‘১৮ জুলাই, আজ একটা গল্প বলি।

১৯৯৮ সালের ৯ অক্টোবর আমাদের জন্ম—আমি ও আমার যমজ ভাই মুগ্ধ। ছোটবেলায় দুজনই নাকি ছিলাম গোলগাল। দেখতে একই রকম হওয়ায় একজন আরেকজনের হয়ে সুবিধা নেওয়াও কম হয়নি। পরীক্ষায় একে অপরের হয়ে বসেছি, কোনো শিক্ষক ধরতে পারেননি।

ছোটবেলায় মাটিতে পড়ে থাকা কিছু দেখলেই দুজন দৌড় দিতাম, কে আগে সেটা বারান্দা দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলবে। বারান্দা বন্ধ থাকলে সেটা কমোডে ফেলে দিয়ে খিলখিল করে হাসতাম। স্বর্ণের চেইন থেকে শুরু করে পায়ের জুতা—মাটিতে কিছুই রাখা যেত না।’

তিনি লেখেন, “পড়ালেখায় কখনো ওর চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারিনি, কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংসহ নানা বিষয়ে আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল।

তবে একটা জিনিস ছিল মুগ্ধর—সাহস। সেই সাহসের কত গল্প যে বলার আছে!
সারা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছি একসঙ্গে। ঠিক মৃত্যুর আগের রাতেও রাত ১টা পর্যন্ত একসঙ্গে কাজ করে ঘুমাতে যাই। প্রতিদিনের মতো সেদিনও মশারি টানানো নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

কিন্তু কিছুক্ষণ পর মুগ্ধ নিজেই ডেকে আমাকে তুলল—আগে কখনো এমন করেনি!
ঘুম থেকে তুলে বলছিল নানা কথা, বিশেষ করে আম্মুকে নিয়ে। বারবার বলছিল, ‘আম্মু সারা জীবন আমাদের জন্য কষ্ট করেছেন, কীভাবে নিজের টাকায় আম্মুকে একটা ফ্ল্যাট কিনে দেব—এই স্বপ্নটা আমি একদিন পূরণ করব।’

তারপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের ভিডিও বের করে দেখাতে লাগল, বলল, ‘এখন খুলনায় থাকা উচিত ছিল, জুনিয়রদের পাশে দাঁড়াতে পারতাম।’

ওর কথা চলতেই থাকল। প্রায় ৩টা বাজে, অথচ থামার নাম নেই। আমি তখন এক দিন আগের এক দুর্ঘটনায় আঙুলের নখ উঠে গিয়ে ব্যথায় কাতর ছিলাম। বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, ‘ঘুমাতে দে।’ সেটাই ছিল ওর সঙ্গে আমার শেষ কথা।”

স্নিগ্ধের পোস্টে উঠে এসেছে আরো অনেক ব্যক্তিগত মুহূর্ত। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বেশি ঝগড়া হতো জামাকাপড় নিয়ে। আন্দোলনে যাওয়ার দিনও আমার একটা জামা পরে গিয়েছিল মুগ্ধ। যখন জানলাম ও গুলিবিদ্ধ, তখন আমিও ওর একটা শার্ট পরে হাসপাতালে ছুটে যাই।

হাসপাতালে প্রথম ওকে দেখে মনে হয়েছিল, আরাম করে ঘুমাচ্ছে। বোঝার উপায় ছিল না যে ও আর নেই।

মায়ের পেট থেকে একসঙ্গে আসা মানুষটা কীভাবে একা চলে যায়!

সারা রাত ওর লাশের গাড়ির পাশে বসে ছিলাম। পার্থক্য ছিল—গত রাতে ওর শরীরে প্রাণ ছিল, আর আজ নিথর।’

তিনি লিখেছেন, “ওর মৃতদেহ দেখে মনে হচ্ছিল, শরীর থেকে আলো বের হচ্ছে। ওকে এতটা সুন্দর কখনো লাগেনি। তখনই মনে পড়ল—আম্মু-আব্বু তো তখনো জানেন না মুগ্ধ আর নেই।

তাঁরা তখন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসছিলেন। ভাবছিলাম, মা যখন মুগ্ধকে দেখবেন, কী হবে তখন!

সকালে তাঁরা এলেন। মুগ্ধর লাশের কাছে যেতেই বুঝে ফেললেন—মুগ্ধ আর নেই।...

আম্মু বলতেন, ‘তোমাদের দুজনকে একসঙ্গে মানুষ করতে করতে আমার জীবনটা পানি হয়ে গেছে। যাদের যমজ সন্তান আছে, তারা জানেন—এটা কতটা কষ্টকর।’ সেই মাকে দেখলাম নির্বাক হয়ে মুগ্ধর কপালে শেষ চুমু খেতে। চুমুর দৃশ্যটা দেখে মনে হচ্ছিল—এক মা কপালে চুমু দিচ্ছেন, আর আরেক মা, যাকে আমরা দেশ বলি, সে কপালে গুলি চালিয়েছে।”

পোস্টের শেষাংশে স্নিগ্ধ লেখেন, “আজ এটুকুই থাক। এরপর কীভাবে মুগ্ধকে দাফন করা হলো, কীভাবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমাদের ব্ল্যাংক চেক আর হুমকি-ধমকির মাধ্যমে কিনে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে—সেসব গল্প আরেক দিন বলব।

যারা বেঁচে থাকে, তাদের দায় বেশি। একটি কথা আছে—‘সত্য মরে না।’ মুগ্ধর গল্পও শেষ হবে না। কারণ ওর স্বপ্নগুলো এখন আমাদের শ্বাসে বেঁচে আছে।”

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়