দুদককে ইসি
হলফনামায় শেখ হাসিনার সম্পদের তথ্য গোপনে কিছু করার নেই
‘নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া শেখ হাসিনার হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগের বিরুদ্ধে এখন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কিছু করার নেই।’ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাঠানো চিঠির জবাবে এ কথা জানিয়েছে ইসি।
শুক্রবার ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুযায়ী এটাতে ইসির কিছু করার নেই।
আখতার আহমেদ বলেন, আমাদের রিপ্লাই জানিয়ে দিয়েছি। দুদককে চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, আরপিওর বিধানে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। আরপিওতে এ ধরনের কোনো প্রভিশন নেই জানিয়ে দিয়েছি।
গত ২২ মে নির্বাচন কমিশন সচিবকে দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসিতে দাখিল করা হলফনামায় নিজের সম্পদের বিষয়ে অসত্য তথ্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর আওতায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, দুদকে শেখ হাসিনার দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায়, তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে হলফনামায় ৬ দশমিক ৫০ একর কৃষিজমি এবং তার দাম ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। কিন্তু দুদক যাচাই করে দেখেছে, শেখ হাসিনার নামে ২৮ দশমিক ৪১১ একর কৃষিজমি রয়েছে। যার মধ্যে কেনার জমির মোট দাম ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা। এ হিসাবে তিনি ২১ দশমিক ৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেছেন এবং ক্রয়মূল্যও প্রকৃত দামের চেয়ে ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০ টাকা কম দেখিয়েছেন, যা হলফনামায় ‘অসত্য তথ্য দেওয়ার শামিল’।
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার জানান, হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ার অভিযোগ এলে দুটি বিষয় দেখতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) এর ১২ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্য-অযোগ্যতার বিষয়টি রয়েছে। হলফনামার এমন কোনো তথ্য অসত্য দিলেন প্রার্থী, যা তার প্রার্থী বা নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্যতা- তাহলে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও জানান, যেমন ঋণ খেলাপের বিষয়টি অযোগ্যতার মধ্যে পড়ে, হলফনামায় এ ধরনের বিষয়ে অসত্য তথ্য থাকলে ইসির করার কিছু থাকে। কিন্তু সম্পদের তথ্যে গরমিল হলে বা অসত্য তথ্য দিয়েছে অভিযোগ আনলে এ-সংক্রান্ত বিষয়টি অযোগ্যতার মধ্যে পড়ে না। সেক্ষেত্রে ইসির করার কিছু থাকে না। বিদ্যমান সুযোগ আরপিওতে। তাহলে যেসব বিষয়ে অভিযোগ আসে, সে বিষয়ে স্ব স্ব সংস্থা প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার থাকে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার একগুচ্ছ আইনি সংস্কার আসছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও ইতোমধ্যে হলফনামার অসত্য তথ্য দিলে ভোটের পরেও ব্যবস্থা নেওয়া এবং নির্বাচন বাতিলের মতো সুপারিশ করেছে।
সার্বিক সুপারিশ পর্যালোচনা করে আরপিও সংস্কার প্রয়োজনীয় প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত করলে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সায় পেলে পরবর্তী সময়ে অধ্যাদেশ আকারে সংশোধন যুক্ত হতে পারে। উৎস: সমকাল।