শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি

প্রকাশিত : ২৮ জুন, ২০২৫, ০২:৩৫ রাত
আপডেট : ৩০ জুন, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নোবেলজয়ী থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান: জন্মদিনে নতুন অধ্যায়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক।। আজ ২৮ জুন, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্মদিন। 'গরিবের ব্যাংকার' হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত এই কিংবদন্তি এ বছর তার জন্মদিন পালন করছেন এক ঐতিহাসিক ও গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে। দেশের ক্রান্তিকালে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে আসীন এই মহান ব্যক্তিত্বের বর্ণাঢ্য জীবনের দিকে ফিরে তাকানো যাক।

এক মানবিক ভাবনার সূচনা:
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাফল্যের গল্প শুরু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ অধ্যাপক হিসেবে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলাদেশে তিনি দেখেন, প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের কোনো কাজেই আসছে না। জোবরা গ্রামের ৪২ জন দরিদ্র নারী মহাজনের ঋণের জালে এতটাই আবদ্ধ ছিলেন যে, তাদের সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২৭ ডলার। ড. ইউনূস নিজের পকেট থেকে সেই টাকা দিয়ে তাদের মুক্ত করেন এবং উপলব্ধি করেন, দরিদ্র মানুষের জন্য একটি নতুন অর্থনৈতিক মডেল প্রয়োজন।

গ্রামীণ ব্যাংক: একটি বৈশ্বিক বিপ্লব:
সেই উপলব্ধি থেকেই জন্ম নেয় ক্ষুদ্রঋণ ধারণা এবং তার হাত ধরে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রামীণ ব্যাংক। জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এই ব্যাংকটি গ্রামের দরিদ্র নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলে, যা সামাজিক পরিবর্তনে এক নীরব বিপ্লব ঘটায়। গ্রামীণ ব্যাংকের এই মডেল বিশ্বজুড়ে "মাইক্রোক্রেডিট" আন্দোলন হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে এবং কোটি মানুষের দারিদ্র্য মুক্তির পথ দেখায়।

বিশ্বমঞ্চে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি:
ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের এই যুগান্তকারী কাজের স্বীকৃতি আসে ২০০৬ সালে, যখন তারা যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এই পুরস্কার প্রমাণ করে যে, দারিদ্র্য বিমোচন কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বিশ্ব শান্তিরও একটি অপরিহার্য শর্ত।

ক্ষুদ্রঋণ ছাড়িয়ে সামাজিক ব্যবসা:
ড. ইউনূসের ভাবনা শুধু ক্ষুদ্রঋণেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তিনি বিশ্বকে 'সামাজিক ব্যবসা' (Social Business) নামে এক নতুন দর্শনের সাথে পরিচয় করান, যার মূল উদ্দেশ্য মুনাফা নয়, বরং সামাজিক সমস্যার সমাধান। এই ধারণাটি বিশ্বজুড়ে উন্নয়ন ও কর্পোরেট জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

এক নতুন অধ্যায়: রাষ্ট্রপরিচালনার গুরুদায়িত্ব:
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক শূন্যতায় জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার বিশ্বজোড়া খ্যাতি, প্রশ্নাতীত সততা এবং অরাজনৈতিক ভাবমূর্তি তাকে এই পদের জন্য অপরিহার্য করে তোলে। জাতি এখন তার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে যাওয়ার প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছে।

কিংবদন্তির উত্তরাধিকার ও বর্তমান:
ড. ইউনূসের জীবন এক চলমান অনুপ্রেরণার নাম। দারিদ্র্যজয়ের নায়ক থেকে শুরু করে সামাজিক ব্যবসার প্রবর্তক এবং এখন একজন রাষ্ট্রনায়ক—তার পথচলা প্রমাণ করে যে, একজন মানুষ তার সততা, প্রজ্ঞা ও কর্ম দিয়ে কতটা উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেন।

জন্মদিনে এই মহান স্বপ্নদ্রষ্টা ও রাষ্ট্রনায়কের প্রতি রইল অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সংকট কাটিয়ে এক নতুন ভোরের দিকে এগিয়ে যাবে—এই প্রত্যাশা আজ কোটি মানুষের।

 
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়