শিরোনাম
◈ এবার আনন্দবাজারে ওবায়দুল কাদেরের সাক্ষাৎকার, জানালেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা (ভিডিও) ◈ নির্বাচনের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানো পুলিশ: প্রস্তুতি, চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা ◈ "পাষন্ড স্বামীর কান্ড" ঈদের দিন স্ত্রী কে জবাই করে হত্যা ◈ দ্রুতগতিতে টার্ন নিতে গিয়ে যাত্রীবাহী কোচ খাদে পড়ে ৫৫ যাত্রী আহত ◈ সৌদি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জানা গেলো ২০২৬ সালে কবে রমজান ও ঈদ ◈ ‌ক্রিকেটার‌দের পাওনা টাকা না দিয়ে দেশ ছাড়া ক‌রে‌ছে ওমান ক্রিকেট বোর্ড ◈ ভারতে দাঙ্গা লাগাতে চেয়েছিল পাকিস্তান'- জম্মু-কাশ্মীর সফরে গিয়ে বলেছেন নরেন্দ্র মোদী ◈ ‌টি‌কি‌টের দা‌বি‌তে বাফুফে ভবনের সামনেই ফুটবল আলট্রাসের ঈদ ◈ নেত্রীর সঙ্গে দেখা আমাদের প্রেরণা দেয়’—ঈদ রাতে ফিরোজায় বিএনপি নেতারা ◈ প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন সম্ভব? কী বলছে নির্বাচন কমিশন ও বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশিত : ০৪ জুন, ২০২৫, ০৭:৫৭ বিকাল
আপডেট : ০৮ জুন, ২০২৫, ০৯:০০ সকাল

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নিয়ে তোলপাড়, নতুন অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধা কারা?

মহসিন কবির: জাতীয় নেতাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের খবর প্রকাশের পর সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতাসহ সাধারণ মানুষ। একেকজন একেকভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

তবে খবর বিভ্রান্তমূলক বলেছে

মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং দুই মন্ত্রী মো. মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানসহ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে বলে সমকাল, যুগান্তর, ইত্তেফাক ও কালেরকন্ঠসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর।

বুধবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম জানিয়েছেন, মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যারা সশস্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যারা পরিচালনা করেছে, তারা মুক্তিযোদ্ধা। তবে ওই সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি জানান, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ কূটনীতিকরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা। সহযোগী মানে এই নয় যে তাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।

তিনি জানান, ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধার যে সংজ্ঞা ছিল সেটাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৮ ও ২০২২ সালে এটা পরিবর্তন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী দুইয়েরই সম্মান, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা একই থাকবে।

সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘প্রিয় ভাই-বোনেরা, শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দিন আহমেদসহ মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাতিল- একটা ফেইক নিউজ। নতুন অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারের সব সদস্যকে মুক্তিযোদ্ধার স্পষ্ট স্বীকৃতি দেওয়া আছে।’ বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এ কথা বলেন তিনি।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘প্রিয় ভাই-বোনেরা, শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দিন আহমেদসহ মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাতিল- একটা ফেইক নিউজ। নতুন অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারের সব সদস্যকে মুক্তিযোদ্ধার স্পষ্ট স্বীকৃতি দেওয়া আছে। মুজিবনগর সরকারের কোনো সদস্যের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাতিল হয়ে গেছে এটা যে ফেইক নিউজ তার প্রমাণ হিসাবে কমেন্টে অধ্যাদেশের স্ক্রীনশট দেওয়া হলো।’

এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ইচ্ছাকৃতভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে বন্দী হয়ে বিজয়ের পর পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জেলে বন্দি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি সরাসরি মাঠে ছিলেন না।

তাজউদ্দিন আহমদ মাঠে থেকে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল হয় কিভাবে?মন্ত্রণালয়ের কাজ ছিল- মুক্তিযোদ্ধার নামে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য আওয়ামী আমলে যারা নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তাদেরকে খুঁজে বের করে তাদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা। কিন্তু তা না করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মাঠে থেকে যারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় সরাসরি অবদান রেখেছেন তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাতিল করার মত অপ্রয়োজনীয় কাজ কোনোভাবেই কাম্য নয়।ইতিহাস যেন কখনো ক্ষমতাসীনদের পক্ষের না হয়। ইতিহাসকে ইতিহাসের মতো করেই চলতে দেওয়া উচিত।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে এই সাংবাদিকরাই হাসিনার কদমবুচি করতে করতে পুরস্কার নিতে ছুটে যেতো। বুধবার দুপুরে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এ ক্ষোভ জানান।

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছেন, অথচ এই সাংবাদিকরাই যদি ৫ই আগস্ট না হতো, জুলাই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হতো, তাহলে তার পেছনে নিজেদের ভূমিকাকে সাহসী সাংবাদিকতা দাবি করে হাসিনার কদমবুচি করতে করতে পুরস্কার নিতে ছুটে যেতো। এই হাসিনার মিডিয়া সন্ত্রাস সবার ওপরই চেপে বসবে—আজ আমার ওপর, কাল আপনার ওপর।

নতুন অধ্যাদেশে আগের আইনের ১০টি ধারায় বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। সংশোধিত অধ্যাদেশের আরো কিছু সংজ্ঞায়ও আনা হয়েছে পরিবর্তন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কারা?

গত ১৫ই মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে মঙ্গলবার রাতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

অধ্যাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে , "যাহারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করিয়া ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়াছিলেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক উক্ত সময়ে যাদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে; এবং সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও উক্ত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্য এবং বাংলাদেশের নিম্নবর্ণিত নাগরিকগণও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হইবেন।"

এছাড়াও সংশোধিত সংজ্ঞা অনুযায়ী- হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিত নারী বা বীরাঙ্গনারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।

আর, মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সকল ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সকল ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা-সহকারীরাও থাকবেন বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধে আহত কিংবা শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা স্বীকৃতি মিলবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। যে সব বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ চলাকালে নিহত হয়েছেন সংজ্ঞা অনুযায়ী তাদেরকে বলা হবে 'শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা''।


সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা কারা?
সংশোধিত এই মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি সহযোগী মুক্তিযোদ্ধারও সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, "যাহারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে বা প্রবাসে অবস্থান করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে যেসব বাংলাদেশের নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করিয়াছেন।"

এরপরই এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- ক) যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং যেসব বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন;

খ) যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং ওই সরকারের নিয়োগ করা চিকিৎসক, নার্স বা অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন;

গ) মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ; এবং যারা পরে গণপরিষদের সদস্য গণ্য হয়েছিলেন;

ঘ) স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক

ঙ) স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

অর্থাৎ এই পাঁচটি ক্যাটাগরিতে যারা ছিলেন তাদের স্বীকৃতি দেয়া হবে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। সংজ্ঞা অনুযায়ী সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা গণ্য হবেন তাদের স্বামী বা স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পিতা ও মাতা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়