শিরোনাম
◈ হঠাৎ মাঝ আকাশ থেকে  সিঙ্গাপুরগামী বিমানের জরুরি অবতরণ ◈ সামাজিক ব্যবসা সারা বিশ্বকে বদলে দিতে পারে : প্রধান উপদেষ্টা ◈ চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে ঢাকার ভূমিকা নিয়ে সতর্ক নয়াদিল্লি: ‘নিবিড় নজর’ রাখছে ভারত ◈ চীনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির পর ভারতের সঙ্গেও 'বড় চুক্তি'র ইঙ্গিত ট্রাম্পের ◈ ‘জুলাই যোদ্ধার’ স্বাস্থ্য কার্ড যুবলীগ কর্মীর হাতে! ফেরত আনল প্রশাসন ◈ ক্লাব বিশ্বকা‌পের শেষ ষোলোতে ম‌্যান‌চেস্টার সিটি ◈ রেডবুল‌কে ৩-০ গো‌লে হা‌রি‌য়ে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় রিয়াল মাদ্রিদ ◈ আগ্রাসনের পুনরাবৃত্তি হলে ইরান এমন শিক্ষা দেবে যা ইতিহাস হয়ে থাকবে ◈ ইরানের উপর হামলা জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন,বিবৃতি ব্রিকসের ◈ রেলওয়ের কেনাকাটায় পুকুরচুরি: পরিচ্ছন্নতা উপকরণ কিনতে ২৫০০০ ঢাকার বিল আড়াই লাখ টাকা! (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৪ জুন, ২০২৪, ১২:০৭ রাত
আপডেট : ১৫ জুন, ২০২৪, ১২:৪৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এবার প্রিন্স মামুনের পক্ষে কথা বললেন তসলিমা নাসরিন

মনিরুল ইসলাম: [২] নেটদুনিয়ায় এ সময় আলোচিত ঘটনা টিকটকার প্রিন্স মামুন গ্রেপ্তার, লায়লা আক্তার ফারহাদকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ। প্রিন্স মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা। কেউ লায়লার পক্ষে। কেউবা মামুনের পক্ষে নানান মন্তব্য করছেন।

[৩] এবার এ ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন লেখক তসলিমা নাসরিন। 

[৪] বুধবার  ১২ জুন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়েছেন তসলিমা নাসরিন। যেখানে টিকটকার মামুনের পক্ষ নিয়ে শেয়ার করেছেন নানা কথা।

[৫] ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন,পুরুষ যেমন বদমাশ হতে পারে, নারীও তেমন বদমাশ হতে পারে।নারী হয়ে জন্ম নিয়েছে বলেই সে ভাল, সে সত্যবাদী,  এ আমি মনে করি না। 

[৬] তসলিমা নাসরিন ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, প্রিন্স মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রিন্স মামুন ছিল লায়লা আক্তারের জিগোলো। সেই অল্প বয়সী তরুণদের জিগোলো  বলা হয়  যারা   টাকা পয়সা আর নানা উপহার সামগ্রীর বিনিময়ে বয়স্কা মহিলাদের সঙ্গ দেয়। মূলত যৌনসঙ্গ। ৪৮ বছর বয়সী  লায়লা ২৪ বছর বয়সী মামুনকে জিগোলো হিসেবেই রেখেছিলেন। মামুনকে তিনি মাঝে মাঝে টাকা দিতেন, তার বিনিময়ে সুদর্শন তরুণটির সঙ্গ উপভোগ করতেন।  মামুনকে শুধু যৌনসঙ্গী হিসেবে ব্যবহার করতেন না, মামুনকে তিনি  টাকা রোজগারের জন্যও ব্যবহার করতেন। মামুনের পেছনে তিনি যত টাকা ব্যয় করতেন, তার চেয়ে বেশি  তিনি মামুনের সঙ্গে  ভিডিও বানিয়ে আয় করতেন। জনপ্রিয় টিকটকার মামুন নাচতো, বা গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলাতো, তার  পাশে রঙ করা পুতুলের  মতো দাঁড়িয়ে  থাকতেন লায়লা--- এসব  অর্থহীন রুচিহীন ভিডিও   ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুকে আপলোড করতেন তিনি।  শুধু নাচ গানের ভিডিও নয়, মামুন খাচ্ছে, মামুন হাসছে, মামুন খেলছে – সব কিছুর ভিডিও তাঁর করা চাই, মামুনের জন্য ভিউয়ার সংখ্যা এত বেশি ছিল যে তিনি এ থেকে ভাল টাকা রোজগার করতেন। করতেনই বা বলি কেন, রোজগার এখনও করছেন।  তিনি ধনী। মামুন দরিদ্র। তিনি  মামুনকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন, মামুনকে খাওয়াচ্ছেন, পরাচ্ছেন। ইচ্ছে হয়  মামুনকে তিনি টাকার বিনিময়ে  সারাজীবনের জন্য কিনে নেন।  মামুনকে বিয়ে করতে চান লায়লা। মামুনের কোনও ইচ্ছে নেই  তার দ্বিগুণ বয়সী মহিলাকে বিয়ে করার। চাপাচাপি করলে এক শর্তে সে রাজি, তাকে লায়লার বাড়িটি লিখে দিতে হবে।  পাকা জিগোলোর মতোই ব্যবহার মামুনের। কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে লায়লা হয়তো ভেবেছিলেন নিজের স্বপ্ন পুরণ করবেন। কিন্তু মামুন চায় বাড়ি। মামুনকে  লায়লা বাড়ি লিখে দেবেন কথা দিয়েও দেন না। মামুন সে কারণে লায়লাকে ছেড়ে চলে যায়। লায়লার দরকার সঙ্গ, মামুনের দরকার টাকা।  এই সম্পর্কটি শুরু থেকেই ছিল দেয়া নেয়ার সম্পর্ক।  বাড়ি না পেয়ে   লায়লার সঙ্গে তিন  বছরের  সম্পর্কে ইতি টানলো মামুন। সম্পর্কে ইতি টানা মানবাধিকারের অংশ।  মেনে নেওয়া উচিত ছিল লায়লার, কিন্তু তিনি মেনে নেন না।  যদিও  যে কারোরই  যে কোনও  বন্ধুত্বের, প্রেমের, বিয়ের,এমনকী জিগোলোর  সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার অধিকার আছে,  কিন্তু  মামুনকে সে অধিকার কিছুতেই দিতে চাননি লায়লা।    ফেসবুকে সারাক্ষণই মামুনের জন্য তাঁর কান্নাকাটি চলতে থাকে,  মিডিয়ার লোক নিয়ে  চলে যান মামুনের গ্রামের বাড়িতে। মানুষকে দেখান মামুনকে তিনি  খুব  ভালবাসেন।   মামুনকে তিনি সত্যিই যদি ভালবাসতেন,    মামুন  তাঁর পায়ের নখের যোগ্য নয় --এ কথা  বলতেন না বারবার, মামুনের বিরুদ্ধে  মামলা করে তার সর্বনাশ করতেন না!  লায়লার মতো  চালাক চতুর   নয় মামুন।  সে বিশ্বাস করেছিল  লায়লা  তার ফ্যান, লায়লা তাকে ভালবাসেন। লায়লা তার জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করবে।  হয়তো কোনওদিন সে ভাবতে পারেনি, লায়লা তাকে একদিন জেলখানার ভাত খাওয়াবে।  

[৭] তিনি লিখেন, মামুনের পারিবারিক সমস্ত তথ্য প্রকাশ করলেও  তাঁর নিজের বয়স কত, তাঁর  বিয়ে হয়েছিল কিনা, তাঁর সন্তান আছে কিনা ইত্যাদি  পারিবারিক কোনও তথ্যই    লায়লা প্রকাশ করেননি। মিডিয়া কোনও প্রশ্ন করলে  তিনি কায়দা করে উত্তর এড়িয়ে গেছেন। মামুনের পরিবারের  দারিদ্র নিয়ে, মামুন এবং তার পরিবারের সবার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে   সোশ্যাল মিডিয়ায় কম তুচ্ছ তাচ্ছিল্য তিনি করেননি। নিজের ধন দৌলত নিয়ে লায়লা সব সময় গর্ব করেছেন, নিজের ডিগ্রি, নিজের বেতন, নিজের বাড়ি গাড়ি ধন দৌলত নিয়ে তাঁর অহংকারের শেষ নেই।  আর মামুনকে কখন কত টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন, মামুনকে কত টাকা দামের কী উপহার দিয়েছেন, সবই বিশ্ববাসীকে বারবারই জানিয়ে দিয়েছেন। মামুন লায়লাকে বিয়ে করতে রাজি নয় বলে  লায়লা এখন মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ঠুকে দিয়েছেন, মামুন নাকি  তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে।  এমন বানোয়াট কথা  অসৎ না হলে বলা যায় না। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন সম্পর্ক করলে প্রতারণা হয়, ধর্ষণ হয় না। অনুমতি ছাড়া যৌনসম্পর্ক করলে  হয় ধর্ষণ। লায়লার তো এ ব্যাপারে অনুমতির কোনও অভাব ছিল না।  লায়লা বুঝে গিয়েছেন মামুন আর তাঁর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখবে না, জিগোলো সম্পর্কটিও চুকে বুকে গেছে। মামুনকে আগের মতো নিয়ন্ত্রণ করাও তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। বিয়ে করা তো হবেই না।  এই কারণে তাঁর এত রাগ মামুনের ওপর। মামুন যে তাকে ভালবেসে বিয়ে করবে না, সে যে বিয়ে করলে টাকা কড়ি আর বাড়ি গাড়ির বিনিময়ে করবে, এটি লায়লা মেনে নিতে পারেননি।  লায়লা  বহুবার  মামুনকে হুমকি দিয়েছেন তাঁকে বিয়ে  না করলে ,বা  তাঁর সঙ্গে একত্রবাস না করলে, তাঁর  সঙ্গে আগের মতো  ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েট’ না করলে বা ভিডিও  না বানালে তিনি মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণের  মামলা তুলে নেবেন না। যখন দেখেছেন মামুন কিছুতেই তাঁর কাছে ফিরে যাবে  না, তখন  বলেছেন, তাঁকে নব্বই লক্ষ টাকা দিলে তিনি মামলা তুলে নেবেন।  মামুনকে  কী করে হেনস্থা করা যায়,   কী ভাবে তাকে  নিঃস্ব করে ফেলা যায়, তিনি করছেন, এভাবেই তিনি তাঁর অনুদার  এবং প্রতিশোধপরায়ণ চেহারাটি প্রকাশ করছেন।   মামুনের বড় দুই ভাই বোন প্রতিবন্ধী। তারা কথা বলতে পারে না। তার অসহায় মা বাবা আর ভাই বোনের জন্য   টিকটিক আর ইউটিউব থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে একখানা একতলা বাড়ি বানিয়েছে মামুন, পরিবারের মানুষগুলোর মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। কিছুদিন আগে  ঢাকায় একটি সেলুনের ব্যবসা শুরু করেছে সে।  হাজারো ভক্ত মামুনকে দেখতে এসেছিল।  সেই  সেলুনের উদ্বোধনের  দিন লায়লা গিয়েছেন। প্রেস কনফারেন্সের ভিড়ে  সবাইকে দেখিয়ে  নিজের ওড়না দিয়ে মামুনের মুখের ঘাম মুছে দিয়ে দরদী প্রেমিকার অভিনয় করে আসার দুদিন পর লায়লা ধর্ষণের মামলা ঠুকে দিয়েছেন মামুনের বিরুদ্ধে। 

[৮] লায়লার আত্মীয় স্বজন মিলিটারিতে, ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশও মনে হয় মিলিটারির আদেশ পালন করতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সত্যিকার নারীনির্যাতক আর ধর্ষকরা দেশময় ঘুরে বেড়াচ্ছে, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে না। আর মামুনের মতো স্ট্রাগল করা এক তরুণকে তড়িঘড়ি গ্রেফতার করেছে। রিমান্ডে নেওয়া হবে বেচারাকে, বেধড়ক পেটানো হবে। যে তরুণ লায়লার চক্রান্তের শিকার, সে এখন শিকার হচ্ছে মিথ্যে মামলার, ফেঁসে গেছে আইনের মারপ্যাঁচে। মামুনের  আত্মীয়স্বজন লায়লার আত্মীয়স্বজনের মতো  প্রভাবশালী নয়। সুতরাং মামুনকে ভুগতে হচ্ছে, ভুগতে হবে।  না বুঝে সে আটকে গেছে লায়লার পাতা ফাঁদে।  মামুনকে মুক্ত করার জন্য, আশা করছি, মানবাধিকারের জন্য যে  আইনজীবীরা লড়েন, এগিয়ে আসবেন। লায়লা আর মামুনের এই দ্বন্দ্ব বা  লড়াই  আসলে নারীবাদ আর পুরুষতন্ত্রের  লড়াই নয়, এ  ধনী আর দরিদ্রের লড়াই, সবল আর দুর্বলের লড়াই, দম্ভ আর অসহায়ত্বের  লড়াই, শিকারী আর শিকারের লড়াই।   

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়