মনিরুল ইসলাম: বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে দেশবাসীকে কৃচ্ছতা সাধনের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রত্যেককে তার নিজ নিজ জায়গায় থেকে যতটুকু সম্ভব কৃচ্ছসাধন করতে হবে। প্রত্যেককে নিজস্ব সঞ্চয় বাড়াতে হবে। মিতব্যয়ী হতে হবে। কৃচ্ছতা সাধন করে কিছু সঞ্চয় করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, তথা অপচয় কমাতে হবে। সকল বিলাস দ্রব্য পরিহার করে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনায় মনোযোগ দিতে হবে।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সঞ্চয় বাড়ানোর মাধ্যমে জাতীয় সঞ্চয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে হবে। বিদ্যুৎ ও পানি ঢালাওভাবে ব্যবহার করবেন না। অপচয় করবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও অপচয় বন্ধ করতে হবে। আমদানিকৃত বিলাশ বহুল দ্রব্য ক্রয় পরিহার করে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিজের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কথায় কথায় বিদেশে চিকিৎসা নিলে হবে না, দেশেও ভালো চিকিৎসা হয়। আজকে যে সারা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ এবং করোনা মহামারি এটা মোকাবিলা করেই আমাদের আগাতে হবে।
সংসদনেতা বলেন, করোনার সংকট কাটিয়ে এ পর্যন্ত ২৮টি প্রনোদনা প্যাকেজ চালু করেছি যার মোট আর্থিক মুল্য এক লাখ ৮৭ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। এই প্রনোদনা কার্যক্রম আমরা ৭১ দশমিক ৫৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। এই প্রনোদনা চলমান থাকবে। আরেকটি সুখবর হলো রফতানি খাত যাতে বাধাগ্রস্থ না হয়, তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে আমরা রফতানি করতে পেরেছি। অতিমারি মোকাবিলা করে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্লাবে বাংলাদেশ যোগদান করেছে।
তিনি বলেন, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের ফলে করোনাকালে গ্রামীণ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায় এবং গ্রাম থেকে শহরে আসার প্রবণতা কমে যায়। বরং শহর থেকে মানুষ গ্রামে চলে যায়। কারণ গ্রামের অর্থনীতি ও পরিবেশ অনেক ভালো ছিলো। করোনাকালে সব থেকে কৃষি খাতের উপর আমরা জোর দিয়েছি। কারণ আমাদের খাদ্য উৎপাদন যাতে নিশ্চিত থাকে। কাজেই কৃষি খাতের উৎপাদন স্বাভাবিক ছিলো। শিল্পখাত যাতে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, মানুষের জীবনজীবিকার যতটুকু সুবিধা দেওয়া সেটা আমরা দিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশ কোনো সংকটে পড়ে, আমি এটুকু কথা দিতে পারি, আওয়ামী লীগ একইভাবে মানুষের পাশে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সমন্বয় রাখার জন্য ডলারের বিপরীতে টাকার মুল্য মান পুনঃনির্ধারন করা হচ্ছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। বিলাসবহুল সামগ্রী আমদানি যাতে কম হয়, সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সবার জন্য পেনশন বীমা চালুর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ প্রক্রিয়ায় অনেক দুর এগিয়েছি। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরে সার্বজনীন পেনশন চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। মন্ত্রীসভার সর্বশেষ বৈঠকে এ আইনের অনুমোদন দিয়েছি। খুব শিগরিই সংসদে আইনটি উঠবে। আমরা তা কার্যকর করতে পারবো। তাতে যারা পেনশন পাবেন, তাদের জীবনটা সুরক্ষিত হবে।
সংসদ নেতা বলেন, করোনাটা যখন কমে গেছে আমাদের আমদানী বেড়েছে। এই আমদানী নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। আমরা বেশিরভাগেই ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানী করেছি। এগুলো স্থাপন ও চালু হলে দেশ লাভবান হবে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এটা করতে গিয়ে হয়তো আমাদের ডলারে কিছুটা টান পড়েছে কিন্তু সেটা এখনো আশঙ্কাজনক কোন বিষয় নয়। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার জন্য আমরা সব পদক্ষেপ নিয়েছি।
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বাংলাদেশ ক্ষতবিক্ষত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যাগ নিয়েই আমাদের চলতে হয়। দুর্যোগ মোকাবিলায় জাতির পিতা দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে সরকার কাজ করে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখন বন্যা চলছে। এই বন্যাও আমরা মোকাবিলা করতে পারবো। পদ্মা সেতু এই বন্যা মোকাবিলায় সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :