গাজায় সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক নৌবহর জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত উপকূলের কাছাকাছি বুধবার পৌঁছলে তাদের কয়েকটি নৌকাকে ইসরায়েলি জাহাজ ঘিরে ধরে ‘বিপজ্জনক ও ভয়প্রদর্শনমূলক কৌশল’ চালায়।
আয়োজকদের দাবি, দুটি ইসরায়েলি ‘যুদ্ধজাহাজ’ দ্রুত এগিয়ে এসে বহরের আলমা ও সিরিয়াস নামের দুটি নৌকাকে ঘিরে ফেলে। এ সময় সব নেভিগেশন ও যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়, যা নৌকায় থাকা এক আয়োজক, থিয়াগো আভিলা, সংবাদ সম্মেলনে ‘সাইবার হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেন। পরে নৌবহর আংশিকভাবে যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে কোনো মন্তব্য করেননি।
‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে পরিচিত এই নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌকা, যাতে প্রায় ৫০০ যাত্রী রয়েছেন। এর মধ্যে আছেন সংসদ সদস্য, আইনজীবী, কর্মী এবং সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থানবার্গও।
বিবৃতিতে নৌবহর জানায়, ‘এই শত্রুতামূলক পদক্ষেপে ৪০টির বেশি দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের প্রাণ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।তবু আমরা গাজামুখী যাত্রা অব্যাহত রাখব।’ এখন তারা গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে—যেখানে ইসরায়েল কোনো নৌকা গাজায় প্রবেশ ঠেকাতে টহল দিচ্ছে। যদি আটকে না দেওয়া হয়, বৃহস্পতিবার সকালে তারা পৌঁছানোর আশা করছে।
ফ্লোটিলার ইনস্টাগ্রাম পেজে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, বেসামরিক নৌকার কাছাকাছি বন্দুক বসানো একটি সামরিক জাহাজের ছায়া।
রয়টার্স নিশ্চিত করেছে, ভিডিওটি সিরিয়াস থেকে ধারণ করা হয়েছে। তবে অপর জাহাজের পরিচয় বা ভিডিও ধারণের সময় যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
গত কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়েছে, কারণ নৌবহর ড্রোন হামলার শিকার হয়। ড্রোনগুলো স্টান গ্রেনেড ও ত্বকে জ্বালাভাব সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থ ফেলে, যাতে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও কেউ আহত হয়নি।
ইসরায়েল ওই হামলা নিয়ে কিছু বলেনি, তবে জানিয়েছে, গাজায় পৌঁছতে বাধা দিতে তারা যেকোনো ব্যবস্থা নেবে এবং তাদের নৌ অবরোধ আইনসিদ্ধ, কারণ তারা উপকূলে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধরত।
ইতালি ও স্পেন উদ্ধার বা মানবিক সহায়তার প্রয়োজনে নৌবাহিনী মোতায়েন করেছে, তবে তারা সামরিকভাবে যুক্ত হবে না বলে জানিয়েছে। তুর্কি ড্রোনও নৌবহরের গতিবিধি নজরদারি করছে। তবে নিরাপত্তার কারণে ইতালি ও স্পেন বলেছে, গাজার উপকূল থেকে ১৫০ নটিক্যাল মাইলের ভেতরে প্রবেশ করলে তারা নৌবহর অনুসরণ বন্ধ করবে।
সংগঠকদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি অধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বলেন, নৌবহর আটকানোর চেষ্টা হলে তা ‘আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে সমুদ্র আইন লঙ্ঘন’ হবে, কারণ গাজার উপকূলীয় জলসীমায় ইসরায়েলের কোনো আইনি এখতিয়ার নেই।
২০০৭ সালে হামাস উপকূলীয় অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজার ওপর নৌ অবরোধ জারি করেছে। এরপর থেকে একাধিকবার কর্মীরা নৌপথে সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন।
২০১০ সালে ইসরায়েলি সেনারা ছয় জাহাজের এক বহরে ওঠে এবং সংঘর্ষে ৯ কর্মী নিহত হন। এ বছরের জুনে ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ নামের একটি দলের জাহাজ গাজামুখী হলে গ্রেটা থানবার্গসহ ১২ জনকে আটক করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী।
ইতালি ও গ্রিস বুধবার যৌথভাবে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানায় যেন নৌবহরের যাত্রীদের ক্ষতি না করা হয়। একই সঙ্গে তারা ফ্লোটিলাকে অনুরোধ করে যেন সহায়তাগুলো ক্যাথলিক চার্চের কাছে হস্তান্তর করা হয়, যাতে পরোক্ষভাবে গাজায় পৌঁছানো যায়। তবে এর আগেও ফ্লোটিলা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। সূত্র: কালের কণ্ঠ