পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গণমাধ্যম, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে সহযোগিতা গভীর করার সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র আরেক দফা কূটনৈতিক সৌজন্যতাই নয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় বহুল প্রতীক্ষিত এক পুনর্গঠনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। এটি আমাদেরকে এই ধারণাই দেয় যে, আমাদের ভবিষ্যৎকে আর পুরনো বৈরিতা কিংবা আঞ্চলিক আধিপত্যবাদীদের ছায়ার মধ্যে বন্দি থাকতে হবে না। পাকিস্তানের দ্য নেশন পত্রিকায় ‘এ রিজিওনাল ওপেনিং’ শীর্ষক এক সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ভারতের স্বঘোষিত দ্বাররক্ষকের ভূমিকায় ভারাক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে আছে। এর ফলাফল হলো একটি আঞ্চলিক ফোরাম তার সম্ভাবনা হারিয়েছে। আর গোটা উপমহাদেশের সাধারণ মানুষ বাণিজ্য, বিনিময় ও যৌথ উন্নয়নের অপূর্ণ সুযোগের বোঝা বহন করছে। তাই পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যখন এই অচলাবস্থা উপেক্ষা করে নিজেদের সহযোগিতার পথ রচনা করছে, তখন সেটি এক সতেজ পরিবর্তন।
ইসলামাবাদ ও ঢাকার মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক কেবল সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া ও রাজনৈতিক সদিচ্ছাই বাড়াবে না, বরং পুরো অঞ্চলের জন্য অনুসরণযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এর সুফল স্পষ্ট- আরও দৃঢ় বাণিজ্যিক সম্পর্ক, এমন গণমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম যা মানবিকতা দেখাবে দানবায়নের পরিবর্তে এবং এমন এক সাংস্কৃতিক বিনিময় যা ইতিহাসকে সেতুবন্ধনে ব্যবহার করবে অস্ত্রে নয়।
অতীতের টানাপোড়েন সত্ত্বেও এ দুই দেশের জন্য বিচ্ছিন্নতার চেয়ে অংশীদারিত্বেই লাভ বেশি। আমাদের স্বীকার করতে হবে- দক্ষিণ এশিয়ার সমৃদ্ধি কোনো এক রাজধানী দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে না, হওয়া উচিতও নয়। বরং প্রয়োজন এমন সহযোগিতামূলক নেটওয়ার্ক, যা সবাইকে এগিয়ে নেবে, কেবলমাত্র উচ্চকণ্ঠদের নয়। যদি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একসঙ্গে প্রমাণ করতে পারে যে সহযোগিতা বাস্তব সুফল আনে, তবে তা এ অঞ্চলকে নতুন ভারসাম্যের দিকে ঠেলে দেবে- যেখানে ক্ষমতা ছড়িয়ে থাকবে আর সমৃদ্ধি হবে সবার।
সে অর্থে, এই নতুন অধ্যায় কেবল দ্বিপাক্ষিক নয়; এটি এক নিঃশব্দ অথচ দৃঢ় ঘোষণা- আঞ্চলিকতার এর চেয়েও ভালো কিছু প্রাপ্য, আর জনগণ সার্কের ঘুম ভাঙার জন্য চিরকাল অপেক্ষা করবে না। অনবাদ: মানবজমিন