মাঠের খেলা যেমনই হোক, সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপ উত্তেজনার পারদ চড়িয়েছে নানান বিতর্কে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতা ক্রিকেট টুর্নামেন্টটিকে রাজনীতির লড়াইয়ের ময়দানে পরিণত করেছিল। পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের করমর্দনে অপারগতা, পাকিস্তানের দুই খেলোয়াড় সাহিবজাদা ফারহান ও হারিস রউফের ইঙ্গিতপূর্ণ উদযাপন নিয়ে আইসিসিতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, কিন্তু ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।
গত রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেট ও ২ বল হাতে রেখে হারিয়ে নবমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে ভারত। আসরে এটি পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের টানা তৃতীয় জয় ছিল। বিতর্কের শুরু এরপরেই, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ও পিসিবির চেয়ারম্যান মহসিন নাকভির হাত থেকে বিজয়ের মেডেল ও ট্রফি নিতে অস্বীকৃতি জানায় ভারতীয়রা। যে কারণে অচলাবস্থা দেখা দেয় এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এক ঘণ্টা বিলম্বে শুরু হয়।
শেষ পর্যন্ত নাকভির হাত থেকে ট্রফি নেয়নি চ্যাম্পিয়ন ভারত। এসিসির নিরপেক্ষ কোনো কর্মকর্তার হাত দিয়ে পুরস্কার তুলে দেয়ার তাদের দাবি রাখা হয়নি। প্রেজেন্টেশন মঞ্চে উঠে রানার্সআপের পুরস্কার তুলে দিয়ে স্টেডিয়াম থেকে বিদায় নেন এসিসি ও পিসিবির চেয়ারম্যান নাকভি। এমনকি সরিয়ে নেয়া হয় এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়নের ট্রফি। পরে ভারতীয় দল মঞ্চে উঠে ট্রফি ছাড়াই শিরোপা জয় উদযাপন করে।
টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার দুইদিন পার হলেও এখনও চ্যাম্পিয়নের ট্রফি পায়নি ভারতীয়রা। শিরোপা ছাড়াই দেশে ফিরে গেছে সূর্যকুমাররা। এখনো স্পষ্ট নয় কখন এবং কীভাবে ট্রফি ও বিজয়ীর মেডেল ভারতীয় দলের হাতে পৌঁছাবে।
এরমধ্যেই ক্রিকবাজের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকভি শর্ত দিয়েছেন, শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকএকটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ট্রফি ও মেডেল ভারতীয়দের ফিরিয়ে দেবেন এবং তার হাত থেকেই সূর্যকুমার যাদব ও তার সতীর্থদের তা গ্রহণ করতে হবে। একমাত্র এই শর্ত মানলেই ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়নের ট্রফি হাতে পাবে। ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে এ ধরনের আয়োজন হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই।
এর আগে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া নাকভির আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেন, 'আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এসিসি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ট্রফি নেব না, যিনি পাকিস্তানের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের একজন। তাই আমরা ওনার কাছ থেকে তা গ্রহণ করব না। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তিনি ট্রফি ও মেডেল নিয়ে নিজের হোটেল কক্ষে চলে যাবেন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং খেলাধুলার চেতনার পরিপন্থী।'
তিনি আরও জানান, বিষয়টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলকে (আইসিসি) জানানো হবে। 'আমরা আশা করি খুব শিগগিরই ট্রফি ও মেডেল ভারতকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। নভেম্বর মাসে দুবাইয়ে আইসিসি কনফারেন্স আছে। আমরা সেখানে এই ঘটনার বিরুদ্ধে খুবই কড়া ও আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাব,”—যোগ করেন সাইকিয়া।