মহসিন কবির: আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বাদ দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনী জোট গঠনের আলোচনা জোরালো হয়েছে। আলোচনা অনেকদূর পর্যন্ত এগিয়েছে বলে জানা গেছে।
গত সপ্তাহে সিপিবির নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে জোট গঠন নিয়ে ফের আলোচনা হতে থাকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সিপিবির এই নেতৃত্বের ওপর অনেকটা নির্ভর করছে জোটের রূপরেখা কেমন হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় জনগণের আকাক্সক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে গঠন করা হবে এই জোট।
জানা গেছে, সিপিবির নতুন সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতনসহ বেশ কয়েকটি দলের নেতা গত বৃহস্পতিবার একটি বৈঠক করেছেন। তবে সেই মিটিংয়ে শুধু কুশল বিনিময় আর জোটের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিকদের সঙ্গে গণতন্ত্রমঞ্চের শরিকদের বৈঠক হয়। এতে বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, বাসদসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। বৈঠকে নির্বাচনী সমঝোতার বিষয়ে তারা একমত হন। তবে পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া জানান, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণতন্ত্রমঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে (গতকাল রাতে) বৈঠক হয়েছে।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ আমাদের সময়কে এর আগে বলেন, গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনী জোট নিয়ে আলোচনা সমমনা দলগুলোর মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। এরই ফলোআপ হিসেবে গতকাল বৈঠক হয় বলে জানা গেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহসভাপতি তানিয়া রব আমাদের সময়কে বলেন, আলোচনা শুরু হয়েছে। নতুন পরিস্থিতিতে নতুন মেরুকরণের গুরুত্ব উপলব্ধি করছে সবাই। নতুন বাস্তবতার নিরিখে দলীয় ক্ষমতার বাইরে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জনগণের অভিপ্রায় পূরণে আরও বৃহত্তর জোট গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে নতুন জোটের বিষয়ে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান আমাদের সময়কে বলেছিলেন, আমরা চেষ্টা করছি সব বাম দল নিয়ে একটি নির্বাচনী জোট করার। কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন হয়ে যাওয়ার পর জোটের কাঠামো দাঁড়াবে। এই জোটে ড. কামাল হোসেন থাকবেন। মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি- ওনাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়াও বাম জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ- সবাই মিলে এই জোট করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নাজমুল হক প্রধান আরও বলেছিলেন, বিএনপি পাওয়ার পার্টি হলে একটি শক্তিশালী বিরোধীর ভূমিকা থাকা দরকার। আমরা সেখানে ভূমিকা রাখতে চাই। বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের জোট করার পরের চিন্তা। জোটের নাম কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন নাম হবে। গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট, ঐক্যফ্রন্ট প্রভৃতি নামে হতে পারে।
১৪ নভেম্বর ঢাকায় সিপিবির জাতীয় সমাবেশ : এদিকে আগামী ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি জাতীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এই সমাবেশে ১৪ দলের শরিক ছাড়া অন্যসব বাম দল ও প্রগতিশীল মানুষদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত সময়ে নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনসহ নানা দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন স্বাক্ষরিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উগ্র ডানপন্থি শক্তির আস্ফালন প্রতিরোধ এবং পুরনো কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি রুখতে গণ-আন্দোলনের ধারায় বামপন্থি ও গণতান্ত্রিক শক্তির সরকার গঠনের লক্ষ্যে এই আয়োজন। জাতীয় সমাবেশ সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিপিরির দুই শীর্ষ নেতা।
জাতীয় সমাবেশে জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হবে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা; বাংলাদেশের ভূখ- ও সমুদ্রসীমা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির স্বার্থে ব্যবহার করতে না দেওয়া, নারীবিদ্বেষী ও ভিন্নমত দমনমূলক সন্ত্রাস বন্ধ; বন্ধ কলকারখানা খুলে দেওয়া; জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের তালিকা প্রণয়ন, বিচার ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা এবং ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।
জাতীয় সমাবেশ সামনে রেখে রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরতে দেশব্যাপী জেলা, উপজেলায় কর্মিসভা, হাটসভা, পথসভা, পদযাত্রা, সমাবেশসহ জনসভা আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে- উল্লেখ করা হয়েছে।