শিরোনাম
◈ আজীবনের জন্য বাহরাইনে স্থায়ী ব্যবসার ও বসবাসের সুযোগ, মাত্র ৫ দিনার ফিতে! ◈ জুলাই সনদ ঘোষণার দাবিতে আজও শাহবাগ মোড়ে জুলাই যোদ্ধারা ◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিকে ঐতিহাসিক কূটনৈতিক বিজয়: প্রধান উপদেষ্টা  ◈ সংলাপে পিআর নি‌য়ে উত্তেজনা, হুদা ‘স‌রি’ বলার পর শান্ত এন‌সি‌পি নেতারা (ভিডিও) ◈ বাংলাদেশে নেচে যাওয়া সেই নোয়েল ভারতে গিয়ে আটক হলেন ◈ বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনায় ১১ অঞ্চলে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত ◈ শার্শায় বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি চাল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ◈ সরকারের এক্সিট প্ল্যান, না বিএনপির ‘বিস্কুট দৌড়’? ◈ বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ◈ ‌আগামী বছর নেপা‌লে হ‌বে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব

প্রকাশিত : ৩১ জুলাই, ২০২৫, ১২:১২ দুপুর
আপডেট : ০১ আগস্ট, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

অন্তর্বর্তী সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরের ম্যান্ডেট নিয়ে প্রশ্ন

এল আর বাদল : অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের পরিধি আসলে কতটা? চাইলেই কি এ সরকার সব বৈদেশিক চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ইত্যাদি স্বাক্ষর করতে পারে?

ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টসহ (এনডিএ) আরো আরো কিছু চুক্তিরও সমালোচনা হচ্ছে।  ---- সূত্র, ড‌য়ে‌চে‌ভে‌লে

সমালোচনা আছে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গমও উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি নিয়েও।  তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তারা জনগণের স্বার্থবিরোধী কিছু করছে না। এই ধরনের চুক্তি করার ম্যান্ডেট আছে বলেও দাবি সরকারসংশ্লিষ্টদের৷

রাখাইনে জরুরি ত্রাণ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘকে করিডোর দিচ্ছে - এই আলোচনায় এখন ভাটা পড়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে এখন কোনো কথা হচ্ছে না। শুরুতে সরকারের দিক থেকেই বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল। কিন্তু সমালোচনার মুখে সরকার বলেছে, জাতিসংঘের সাথে সরকারের এ ধরনের কোনো করিডোর বা প্যাসেজ নিয়ে আলোচনাই হয়নি। আরো জানানো হয়েছে, বিষয়টি সরকারের বিবেচনাতেও নেই।

কিন্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস এখন বাংলাদেশে অনস্বীকার্য বাস্তবতা। ১৮ জুলাই থেকে তারা বাংলাদেশে কাজ শুরু করেছে। মানবাধিকার কমিশনের অফিস নিয়ে আলোচনার শুরুতেই এর বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী দল৷ এ উদ্যোগের সমালোচনা করে প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করে তারা। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-সহ কিছু বামপন্থি দলও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।

এখন বিএনপি এবং এনসিপিও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, "বাংলাদেশের চেয়ে ফিলিস্তিনের গাজার মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ। কিন্তু সেখানে জাতিসংঘের তেমন কার্যক্রম দেখা যায় না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের ঢাকায় মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত  ন্যায়সঙ্গত হয়নি। এতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মৌলিক ও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। পাশাপাশি দেশে যে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংস্কৃতি, তাতে কী কী অনুমোদন করে, তা-ও বিবেচনায় নিতে হবে।”

অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় সুবিধা পেতে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি সংক্রান্ত চুক্তি করেছে। মোট ২.২০ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি টন গমের দাম ৬০ ডলারেরও বেশি।  ইইক্রেনসহ অন্য কিছু দেশের গমের দাম তার চেয়ে কম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি নতুন বোয়িং বিমান কেনার চুক্তিও করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন এই ২৫টি বোয়িং-এর দাম (প্রতিটি সর্বনিম্ন চার হাজার কোটি টাকা করে) এক লাখ কোটি টাকা, যা কিনা বাংলাদেশের সবশেষ বাজেটের আট ভাগের এক ভাগ। এত দামের বোয়িং বিমান যাদের জন্য, সেই বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নাকি এই ক্রয়ের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানেই না।

আগে প্রতি বছর পাঁচ লাখ টন এলএনজি আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। এছাড়া সয়াবিন, তুলা, ডাল আমদানিরও নতুন চুক্তি হচ্ছে। আর স্টারলিংক বাংলাদেশে ইতিমধ্যে তাদের ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে শুল্ক আলোচনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট' করার বিষয়টি। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে গত ১৭ জুলাই বিষয়টি জানান। এর আগে এটি নিয়ে কোনো পর্যায়ে কিছু প্রকাশ করা হয়নি। ওই দিন সাংবাদিকরা শুল্ক আলোচনার বিস্তারিত জানতে চাইলে এক পর্যায়ে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের কথা উল্লেখ করলেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। 

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গত ২০ জুলাই ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে বলেছেন,"বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো পার্টনার (অন্য দেশ) কোনোদিন এনডিএ ডকুমেন্ট দেয়নি। এর বদলে নন-পেপার ইস্যু করা যেতো, যার অর্থ হলো এটা আমার অবস্থান, কিন্তু আমি নিজে সই করবো না। নন-পেপার হলে রেসপন্সিবিলিটি তৈরি হতো, কিন্তু এখন বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়ে গেছে। এখন যদি বাংলাদেশ কোনো লবিস্ট নিয়োগ করে, তার কাছেও এ তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।

সোমবার মার্কিন ইউএসটিআরের সাথে বৈঠকের যোগ দেয়ার উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান আর বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দিনসহ ৫ সদস্যের দল।২৯ ও ৩০ জুলাইয়ের এ আলোচনায় তারা যদি কোনো সুবিধা করতে না পারেন, তাহলে ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যে অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

কাউকে কিছু না জানিয়ে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট করা হলো 

অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "শুল্ক কমাতে, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দাম বেশি পড়লেও গম, সয়াবিন, তুলা এগুলো আমদানি বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু ২৫টি বোয়িং কেনার সিদ্ধান্ত সরকার কোন বিবেবচনায় নিলো তা আমি বুঝতে পারছি না।এটা আমাদের আদৌ দরকার আছে কিনা তা-ও বিবেচনা করা হয়েছে বলে মনে হয় না।”

তিনি মনে করেন, "বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে, ফলে, এই বোয়িং আমাদের রিজার্ভের ওপর চাপ আরো বাড়াবে। এটা একটা অনির্বাচিত সরকার। এইসব মৌলিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাদের রাজনৈতিক দল ও স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলা  উচিত ছিল। সরকার নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু এই চাপ তো নির্বাচিত নতুন সরকারের ওপর পড়বে।

আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, কাউকে কিছু না জানিয়ে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট করা হলো। এখন কেউ কিছু জানতেও পারছে না যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের কী আলোচনা হচ্ছে। সবাইকে অন্ধকারে রেখে তো তারা এটা করতে পারে না,” বলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, "এখন সংসদ নাই। এই ধরনের চুক্তির আগে সংসদে আলোচনা হয়। সরকার তাই রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে চাইলে কোনো চুক্তি করতে পারে। কিন্তু সেটা তো করেনি। আর দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু কোনো সরকারাই করতে পারে না।”

‘‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট ভেরি ডেঞ্জারজ। দেশের মানুষ জানতে পারবেনা, এটা কীভাবে হয়! এটা মেনে নেয়া যায় না। সরকার আরো অনেক চুক্তি করছে, যা পরবর্তী সরকারেও ওপর বর্তাবে। তাই সংসদ না থাকলেও এই সরকারকে যদি গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেই করা উচিত।

সরকারের এইসব সিদ্ধান্তের কারণে আগামীতে ঋণের চাপ আরো বাড়বে 

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন," আসলে সামনে একটি নির্বাচিত সরকার আসবে। ফলে অর্থনৈতিক চুক্তিসহ যো-কোনো ধরনের চুক্তি করার আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের আলোচনা দরকার। কারণ, এই চুক্তিগুলো শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত সরকারের ওপরই বর্তাবে। সেটা (আলোচনা) করা না হলে সংকট তৈরি হবে।”

"যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে সাথে ট্রেড গ্যাপ কমাতে  ২৫টি বোয়িং আনা হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মধ্যে বোয়িং নাই।  তাহলে কেন আনা হচ্ছে? এতে তো আমাতের আরো ঋণ করতে হবে। কিন্তু লাভ কী হবে? আরেকটি কথা হলো, যে নন- ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট করা হলো এটা না জানিয়ে কেন করা হলো? এটা নিয়ে তো প্রশ্ন থেকেই যাবে। সরকারের এইসব সিদ্ধান্তের কারণে আগামীতে ঋণের চাপ আরো বাড়বে। আসলে এই সব সিদ্ধান্ত নির্বাচিত রাজনৈতি সরকার নিলে ভালো হতো।

আমরা কথা বলছি, প্রতিবাদ করছি 

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ মিনিমাম সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচন দেয়া। কিন্তু সেটা না করে তারা এমনসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে , চুক্তি করছে, যা তারা করতে পারে না। বাংলাদেশে মানবাধিকার কমিশনের অফিস, নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট, বিদেশিদের বন্দর দেয়া, বোয়িং কেনা-এগুলো তাদের কাজ নয়। এগুলো করতে হলে জাতীয় সংসদে আলোচনা হতে হয়। সেটার তো এখন সুযোগ নাই। তারপরও তারা রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করতে পারতো। তা-ও না করে এসব কাজ করছে। এর দায়-দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।”

তার কথা, দেশের বিরুদ্ধে যায়, দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো চুক্তি বিএনপি মেনে নেবে না। আমরা কথা বলছি, প্রতিবাদ করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়