শিরোনাম
◈ সরকারের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্তে মাথাচাড়া দিতে পারে ফ্যাসিস্ট: তারেক রহমান ◈ এমপিওভুক্ত পৌনে ৪ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য সুখবর ◈ ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমদানি শুল্ক বাড়ছে: যে ৫ পণ্যের দাম বাড়তে পারে ◈ বিভিন্ন জেলার ১০২ জন এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহার ◈ গাজীপুরে আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে: ইসি ◈ জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেল সড়ক, দুর্ভোগে ২০ হাজার বাসিন্দা ◈ রামগতির সাথে বয়ারচরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, জোয়ারের তোড়ে ব্রিজের মাটিতে ধ্বস ◈ ৫ ডি‌সেম্বর ২০২৬ সা‌লের ফুটবল বিশ্বকা‌পের ড্র ◈ কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে বাকৃবিতে অনুষদীয় গেটে তালা দিলো শিক্ষার্থীরা ◈ উরুগু‌য়ে‌কে হা‌রি‌য়ে নারী কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিল

প্রকাশিত : ৩০ জুলাই, ২০২৫, ০১:০৫ রাত
আপডেট : ৩০ জুলাই, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আজ আন্তর্জাতিক মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস 

মানব পাচারের নতুন হাতিয়ার: প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়া

ইতালি যাওয়ার জন্য তিন বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন কামাল মুন্সি (৩০)। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ লোনসিং গ্রামের নাছিমা বেগমের ছেলে তিনি। কামালের সঙ্গে তাঁর পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ২০২২ সালের ২৯ জুন। পরে তাঁর পরিবার জানতে পেরেছিল ওই দিনই একটি গ্রুপের সঙ্গে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন তিনি। তবে জুলাইয়ের শুরুতে এক দালাল নাছিমা বেগমকে ফোন করে জানান, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় কামাল মারা গেছেন। লাশ তিউনিসিয়ায় রয়েছে। হতবিহ্বল মা ছেলের লাশ দেখতে চান। দালালরা লাশ আনার জন্য শোকাহত মায়ের কাছে টাকা দাবি করেন। তাদের চাহিদামতো স্থানীয় দালালের মাধ্যমে কামালের পরিবার ৪ লাখ টাকা দেয়। কিন্তু লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশের আরেক দালাল লাশ আনতে আরও টাকা লাগবে বলে জানায়। এরপর কয়েক দফায় কামালের পরিবারের কাছ থেকে অন্তত ১০ লাখ টাকা নেয়। তার পরও ছেলের লাশের মুখ দেখতে পাননি নাছিমা বেগম। এভাবেই মানব পাচারকারীরা ইউরোপ পাঠানোর নামে লুটে নিচ্ছে অর্থ। শোষণ করছে অসহায় মানুষকে। তার পরও থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারণ হিসেবে জানা যায়, দালালরা শরীয়তপুরের ওই পরিবারের মতো সবার সঙ্গে ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে যোগাযোগ করে।

প্রতি বছরের মতো এবারও মানব পাচার প্রতিরোধের বিষয়টি সামনে রেখে ৩০ জুলাই সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে মানব পাচারবিরোধী দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সংঘবদ্ধ অপরাধ মানব পাচার, বন্ধ হোক শোষণের অনাচার’। মানব পাচার নিয়ে সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, পাচারকারীরা বিশ্বজুড়েই মানব পাচারের ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে চিহ্নিত, নিয়ন্ত্রণ ও তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিতে এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের এক তরুণীকে ভারতে পৈশাচিক নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর মানব পাচারকারীদের হাতে প্রযুক্তির অপব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক পরিসরে আলোচনা হয়।

এদিকে পাচারের পর সম্প্রতি ভারত থেকে পালিয়ে আসা একাধিক তরুণী এ প্রতিবেদককে জানান, ভারতের সেফ হোমে জিম্মি রেখে তাদের ওপর বীভৎস যৌননির্যাতন চালিয়ে তা ভিডিও ধারণ করা হতো। এ সময় তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া, অবৈধ অভিবাসী হিসেবে পুলিশের ভয় দেখিয়ে এবং তাঁদের স্বজনদের কাছে পাঠানোর কথা বলে যৌনকাজে বাধ্য করা হতো। জানা যায়, ভারতে নারী পাচারে বাংলাদেশের ভিতরে সক্রিয় রয়েছে চারটি চক্র। আর সীমান্তের ওপারে কলকাতা ও বেঙ্গালুরুতে রয়েছে তিনটি চক্র। সেখানে ভারতীয়রা নেতৃত্ব দিলেও বাংলাদেশিরাও সম্পৃক্ত রয়েছে। সব কটি চক্রের সমন্বয়ক হিসেবে নড়াইলের চান মিয়া বিশ্বাস ওরফে সবুজের (৩০) নাম পাওয়া যায়।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম বলছে, যারা ইউরোপে যাচ্ছে তাদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪০। মাদারীপুর, শরীয়তপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ ১০-১২টি জেলার লোকজন ইউরোপে যাওয়ার জন্য মরিয়া। এসব ক্ষেত্রে এখন সামাজিক যোগাযোগের নানান মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকের নানান গ্রুপ ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতারিতরা বা নির্যাতনের শিকার লোকজন দেশে ফিরে মামলা করলেও মূল আসামিরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানব পাচার মামলাসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর মানব পাচার আইনে ১ হাজার ৩৪টি নতুন মামলা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৬০টি মামলা ঝুলে আছে। এর মধ্যে অন্তত ৩ হাজার ১৪টি মামলা বিচারাধীন এবং ১ হাজার ৩৪৬টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াডের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বদরুল আলম মোল্লা বলেন, ‘মানব পাচারের মোট ১৫২টি মামলা সিআইডিতে তদন্তাধীন। আমাদের তদন্তে দেখা যায় মাদারীপুর, শরীয়তপুর এবং সিলেট অঞ্চলের মানুষ পাচারের শিকার হয়। আর ভারতে পাচার হওয়া তরুণীদের উদ্ধারের বিষয়ে যশোরের বেনাপোলে নানান ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএমের সহায়তায় সীমান্তে কিছু ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে সেফ হোমে রাখা হয়। এরপর তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানব পাচার প্রতিরোধবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের এ দেশীয় পরিচালক তারিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানব চোরাচালানের মাধ্যমে এখন পাচার হচ্ছে। এর ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। এখন টিকটক, ফেসবুক, ইমো ব্যবহার করে ফাঁদে ফেলে পাচার করা হয়। যে কারণে পাচারকারীদের শনাক্ত করা কঠিন। গত ছয় মাসে শুধু ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৪ শতাধিক নারী ও শিশুকে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।’

ইউরোপের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ফ্রন্টেক্সের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশিরা লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে বেশি ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করে। এটি সেন্ট্রাল মেডিটেরিয়ান রুট হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ পথে অন্তত ৯২ হাজার ৪২৭ জন বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছে। সর্বশেষ এ বছরের জানুয়ারিতে লিবিয়ায় অন্তত ২৩ বাংলাদেশির গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। উৎস: বিডি-প্রতিদিন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়